No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    মহুয়া মৈত্র, সংসদে এক নতুন তারকা

    মহুয়া মৈত্র, সংসদে এক নতুন তারকা

    Story image

    জর্জ ফার্নানডেজ, অটলবিহারী বাজপেয়ী, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত বা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, সৌগত রায়, সুষমা স্বরাজদের সংসদ কাঁপানো বক্তৃতা শুনতে আমরা অভ্যস্থ থাকলেও, বেশ কিছুদিন ধরে সংসদে ভালো বক্তৃতার অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মাঠে যত ভালো বক্তা, সংসদে তত নম্বর উনি পাবেন না। বরং বলা যায় সংসদে উনি বিরোধীদের প্রায় কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দেন না। পছন্দের সাংবাদিকদের মনের মতো প্রশ্নের জবাব তিনি দেন বটে মাঝে মধ্যে, তবে কঠিন প্রশ্নের মুখে মাইক্রোফোন ফেলে উঠে যাবার নজিরও তাঁর আছে। রাহুল গান্ধী মাঝে মাঝে ঝলসে উঠলেও, সব মিলিয়ে গড়পড়তা। এইরকম একটা পরিস্থিতিতে সংসদে এক নতুন তারকার জন্ম হল, এই কথা বলছে সংবাদ মাধ্যম।

    গত ২৫ জুন, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে ৬৩ হাজার ভোটে জয়ী সাংসদ মহুয়া মৈত্র লোকসভায় যে বক্তৃতা দিলেন, তা মুহূর্তে ভাইরাল। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সাম্প্রতিক ইতিহাসে  এর আগে কোনও ভারতীয় সাংসদের বক্তৃতা এভাবে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েনি। শুধু সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নয়, ইংরেজি-সহ দেশের সব ক’টি ভাষার প্রথমসারির সব সংবাদপত্রে মহুয়ার বক্তৃতা নিয়ে আলোচনা চলছে। ব্যঙ্গও করেছে কেউ কেউ, ক্ষয়িষ্ণু বামপন্থীরা একজন নতুন মহিলা কানহাইয়া কুমার পেল বলে। যারা এই ব্যঙ্গ করছেন, তাঁরা প্রায় সবাই সরকার পক্ষের, বা সরকারের বন্ধু সাংবাদিক, বা সংবাদ মাধ্যম। সরকার-বন্ধু কেউ কেউ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন, মহুয়া মৈত্র অন্যের লেখা টুকেছেন। ইতিমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, এই অভিযোগ মিথ্যা। যাঁরা এমন কথা বলেছিলেন, মহুয়া মৈত্র তাঁদের বিরুদ্ধে স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিস দিয়েছেন।

    কী বলেছিলেন মহুয়া? তিনি তাঁর বক্তৃতা শুরু করেছিলেন, ভারত যে নানা মত, নানা জাতি, নানা সংস্কৃতির শান্তির আশ্রয়, মৌলানা আবুল কালাম আজাদের এই উদ্ধৃতি দিয়ে। বলেছিলেন কীভাবে দেশের সংবিধান আজ বিপন্ন। একটি একটি করে উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, তিনি এই নরেন্দ্র মোদি সরকারের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে কঠোর ভাষায় মোদি সরকারকে কার্যত কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে অভিযোগ করেন, এই সরকার গণমাধ্যমকে কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করছে। অসমে এন আর সি করে যেখানে গরিব মানুষের কাছে বৈধ কাগজপত্র দাবি করা হচ্ছে, তা নিয়ে মহুয়া মৈত্রের বক্তব্য, (নরেন্দ্র মোদির নাম না করে) তিনি বলেন, যে দেশে মন্ত্রীরা নিজেদের কলেজ পাশের পক্ষে কোনও বৈধ কাগজ বা মার্কশিট মানুষকে দেখাতে পারেন না, সেই দেশে হতদরিদ্র মানুষের কাছে চাওয়া হচ্ছে নাগরিকত্বের দলিল-দস্তাবেজ। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে গিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার উগ্র জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করছে, কাল্পনিক শত্রু তৈরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, সেনার সাফল্যকে একজন ব্যক্তির সাফল্য হিসেবে প্রচার করেছে। রাম মন্দিরের নাম না করে মহুয়া মৈত্র বলেন, এই সংসদের বেশিরভাগ সদস্য দেশের মাত্র ২.৭৭ একর জমির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, তাঁদের মোটেই মাথাব্যথা নেই দেশের বাকি ৮ কোটি ১২ লক্ষ একর জমিতে যে মানুষ থাকে তাঁদের নিয়ে। দেশের বুদ্ধিজীবীদের মতকে গুরুত্ব না দেওয়া, বিরোধী মতকে চেপে দেওয়া, বিজ্ঞানচেতনার বিপরীত দিকে হাঁটা এবং দেশের স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থাকে পঙ্গু করা হয়েছে এই সরকারের আমলে, সংসদে অভিযোগ করেন মহুয়া। ৪৪ বছরের এই সাংসদ তাঁর ৯ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের বক্তৃতায় ঝড় তুলে দেন সংসদে। তিনি শেষ করেন রাহাত ইন্দোরি-র কবিতা দিয়ে, ‘সবার রক্ত সামিল হয়েছে এখানে/ মিশে গেছে এই মাটিতেই/ এই হিন্দুস্তান কারও বাপের নয়’।

    বিজেপি বা এনডিএ সরকারের আমলে স্বাধীন চিন্তা এবং সরকার বিরোধিতাকে দেশদ্রোহিতা বলা হচ্ছে, এই অভিযোগ বিরোধীরা অনেক দিন ধরে করে চলেছেন। লক্ষণীয়, এইরকম একটা সময়ে ভারত বেশ কিছু নতুন তরুণ নেতাকে সামনের সারিতে দেখতে পেল। কানহাইয়া কুমার, সহেলা রশিদ, উমর খালিদ, জিগনেশ, হার্দিক প্যাটেল তাঁদের অন্যতম। কানহাইয়া বিহারের বেগুসরাইতে ভোটে হেরে গেলেও, সেখানে তরুণ শিক্ষিতদের মধ্যে যে উন্মাদনা তিনি তৈরি করতে পেরেছিলেন, প্রমাণ করলেন, তিনি হারিয়ে যাবেন না। সেই তালিকায় আর একটি নাম যুক্ত হল, মহুয়া মৈত্র। এই তরুণ নেতা-নেত্রীদের উপর উদারমনা ভারতবাসীর অনেক আশা।

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @