No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    লিলিপুটদের প্রাচীন গ্রাম

    লিলিপুটদের প্রাচীন গ্রাম

    Story image

    জোনাথন সুইফটের গালিভার ট্রাভেলসের গল্প জানা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গালিভার ট্রাভেলসের সেই লিলিপুট গ্রামের ঠিকানা কি কারও জানা আছে? হ্যাঁ গল্পের সেই কল্প-গ্রামের কথাই বলছি। জানা নেই নিশ্চয়; না থাকারই তো কথা। তবে সেই গ্রামেরও ঠিকানা আছে, অবশ্যই আছে। তার আগে গল্পটা একটু মনে করে নিলে ভাল হয়। গালিভার একবার লিলিপুটদের দেশে চলে গিয়েছিলেন যেখানে বেশিরভাগ মানুষের উচ্চতা ছিল ১৫ সেন্টিমিটার। যদিও গালিভার ট্রাভেলসের সেই লিলিপুট গ্রাম শুধু কল্পকাহিনীতেই সীমাবদ্ধ এমনটাই আমরা জানি। তাছড়া সেরকমটা হবারই তো কথা। কারণ গল্পের গ্রাম সে তো কেবলমাত্র কল্পনারই হবে তা না হলে আর গল্প হবে কী করে। বাস্তবে কি আর সেই গ্রাম কোথাও থাকে? কিন্তু সত্যি সত্যিই সেই গল্পের গ্রাম আছে। একেবারে ভৌগলিক ভাবেই আছে।

    মাখুনিক নামে এমনই একটি গ্রাম আছে পূর্ব ইরানে। আফগানিস্তানের সীমান্ত ঘেষে গ্রামটির অবস্থান। ঐতিহাসিকদের মতানুসারে গ্রামটি প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। ইরানের মানুষ সাধারণত দীর্ঘকায়, লক্ষণীয় এই গ্রামের মানুষ ইরানের স্বাভাবিক উচ্চতার মানুষের চেয়ে কমপক্ষে ৫০ সেন্টিমিটার খাটো। ২০০৫ সালে এই গ্রামে গবেষকরা ২৫ সেন্টিমিটার উচ্চতার একটি মমি খুঁজে পায়। তারপর থেকে তাদের ধারণা তৈরি হয় যে, মাখুনিকসহ আশেপাশের গ্রামে একসময় বেটে মানুষদের বসবাস ছিল। এরপর প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই গ্রাম নিয়ে আরও গভীর গবেষণা চালায়। মাখুনিক গ্রামের বাড়িগুলোর আকার-আকৃতিই বলে দেয় যে, সেখানকার মানুষের ঊচ্চতা ছিল খুবই স্বল্প। মানুষগুলির উচ্চতা আনুমান করে তাদের বামন মানুষই বলতে হয়। গ্রামবাসীরা যে বামন ছিল তার প্রমাণও মিলেছে পরে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা সেখানে প্রথম দফায় মোট ৮০০টি কবরের সন্ধান পেয়েছিলেন। সেই কবরগুলোতে যেসব কঙ্কাল বা দেহের অবিশিষ্টাংশ পাওয়া যায় সেগুলোর সবই একেবারে বামন আকৃতির মানুষের। গবেষকদের মতে, গ্রামটিতে বসবাসকারী মানুষগুলোর গড়া উচ্চতা ছিল ৩ ফুট।

    গবেষকরা একথাও বলেন, দুর্গম পাহাড়ের ফাঁকে অবস্থিত এই গ্রামের মানুষ খর্বকায় হওয়ার অন্যতম কারণ হল অপুষ্টি। কারণ সেইরকম কোনও পুষ্টিকর খাবারই প্রাচীন মাখুনিক গ্রামের মানুষরা খেতে পেত না। এছাড়া নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে, পারদযুক্ত দুষিত জল পান করার কারণেও এখানকার অধিবাসীদের উচ্চতা খুব কম হত বলে প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেন। গালিভার ট্রাভেলসের মাখুনিক গ্রামে এখনো সাতশো জন অধিবাসী বসবাস করছেন। তবে তাঁরা তাদের পূর্বপুরুষদের মতো অতটা খাটো নন। কিন্তু তাদের বাড়ি-ঘরগুলো আজও পূর্ব পুরুষদের মতোই। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রাচীন নকশার ছোট উচ্চতার বাড়িতে তারা অবস্থান করেন। ১৯৪৬ সালে গ্রামটির অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। এরপর ধীরে ধীরে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে রাস্তাও তৈরি হয়। বাইরে থেকে যানবাহন যাতায়ত করতে শুরু করে। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মাখুনিক গ্রামের যোগাযোগ ঘটে। সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রাও ধীরে ধীরে পালটাতে থাকে। এরপর একদিন এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা দুনিয়ার আর সব জায়গার মানুষের মতোই হয়ে যায়।

     

    তবে সবকিছুই যে আগের থেকে অনেক বদলে গেছে তেমনটা কিন্তু নয়। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বদল না হওয়াটাও বেশ প্রকটভাবেই রয়ে গেছে। যেমন এখানকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা পুরনো রীতির পোশাক পরতে ভালোবাসেন। তাই এখনো তাঁদের সেই আমলের পোশাকেই দেখা যায়। এই সময়েও মাখুনিক গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের চেয়ে আগুনের ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এটা খুব আশ্চর্যের হলেও ঘটনা। তবে অনেক দেরিতে হলেও শিক্ষার ব্যাপারে ওই গ্রামের মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত ওই গ্রামটিতে মাত্র একটিই স্কুল রয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সেখানকার মসজিদে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করে মাখুনিকের শিশু-কিশোর ও তরুণরা। এ ছাড়া তারা স্থানীয় স্কুলে অন্যান্য শিক্ষাও গ্রহণ করে। সামান্য শিক্ষার পর অনেক যুবক গ্রামের বাইরে গিয়ে কাজকর্মও যোগাড় করতে সক্ষম হয়েছে। তবে একথা বলতেই হবে যে নিজেদের গ্রামটিকে মাখুনিকের মানুষেরা খুবই ভালবাসে। এখানকার তরুণরা কাছের কোনও শহরে কাজের প্রয়োজনে গেলে টাকা পয়সা উপার্জনের পর আবার গ্রামেই ফিরে আসে।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @