উত্তরবঙ্গের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে গভীরভাবে জানতে ঘুরে আসুন কালিম্পং-এর লেপচা মিউজিয়াম

তিস্তা নদীর ধারে ছবির মতো সুন্দর কালিম্পং শহর। ডোলো এবং দুরপিন দারা – দুই পাহাড়ের মাঝখানে এই শহরের মাধ্যমে এক সময়ে ভারত ও তিব্বতের বাণিজ্য চলত। মনোরম জলবায়ু, বৌদ্ধ মঠের আধ্যাত্মিক প্রশান্তি, ওক গাছের বন, নানারকম অর্কিডের সমাহার – বিভিন্ন কারণে জায়গাটা পর্যটকদের খুব প্রিয়। কয়েকদিন এখানে কাটালেই মনের সব গ্লানি, অবসন্নতা, ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সমৃদ্ধ দেশজ সংস্কৃতি – সব কিছুর সমন্বয় ঘটেছে এই শহরে।
কালিম্পং-এ দর্শনীয় স্থান অনেক। তার মধ্যে অন্যতম হল লেপচা মিউজিয়াম। উত্তরবঙ্গের কৃষ্টি এবং ঐতিহ্যের প্রতি যদি আগ্রহ থাকে, তাহলে একবার ঢুঁ মারতেই হবে এখানে। কালিম্পং, দার্জিলিং, সিকিম, নেপাল, ভুটান এবং আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে লেপচা জনগোষ্ঠীর বাস। তাঁদের নিজস্ব যাপনশৈলী এবং সংস্কৃতি মুগ্ধ করে সবাইকে। লেপচা জনগোষ্ঠী ঐতিহ্যকে জানার সেরা জায়গাগুলির একটি হল এই জাদুঘর।
কালিম্পং বাস স্টেশন থেকে এক কিলোমিটারের মতো দূরে মূল শহরের কাছেই লেপচাদের স্কুল এবং জাদুঘর তৈরি করেছেন সোনম শেরিং লেপচা। তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের মানুষেরা যাতে নিজেদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি জাদুঘর গড়ে তুলেছেন। লেপচা সংস্কৃতির এমন পীঠস্থান ভারত তো বটেই, গোটা এশিয়াতেই বিরল। সোনম লেপচা একজন বিখ্যাত সংগীতশিল্পী। গান বাঁধা এবং নানান বাদ্যযন্ত্রে তাঁর পারদর্শিতা প্রবাদপ্রতীম। নৃত্যশিল্পেও অবদান রেখেছেন। তিনি ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে প্রদান করেছে বঙ্গভূষণ সম্মাননা। আরও বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন তিনি।
তাঁর গড়া জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে লেপচাদের বেশ কিছু ধর্মীয় উপকরণ, বাদ্যযন্ত্র, হস্তশিল্প সামগ্রী, পুঁথি। এখানকার সংগ্রহ অতুলনীয়। উত্তরবঙ্গের নানা জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং লোককথা এখান থেকে জানা যাবে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে সোনম লেপচার সঙ্গেও দেখা হয়ে যেতে পারে। নব্বই পার করেও তিনি একই রকম প্রাণবন্ত। লেপচা সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করলে এই জাদুঘরের দ্বারস্থ হতেই হবে। জাদুঘরের উন্নয়নের জন্য যে কোনো দান সাদরে গৃহীত হয়। সোম থেকে শুক্র সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত এবং শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা অবধি খোলা থাকে এই জায়গা। রবিবার সারাদিন বন্ধ।
কীভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে ট্রেনে পৌছতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। সেখান থেকে গাড়িতে ৩ ঘণ্টা গেলেই কালিম্পং। কালিম্পং বাস স্টেশন থেকে এক কিলোমিটারের মতো দূরে অবস্থান করছে এই জাদুঘর।
কোথায় থাকবেন
কালিম্পং-এ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তরের নিজস্ব প্রপার্টি আছে বেশ কয়েকটি। এছাড়া হোটেলেও থাকতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দু’টি প্রপার্টির ফোন নম্বর রইল –
মর্গান হাউজ- ৯৭৩৩০০৮৭৭৬
হিল টপ প্রপার্টি - ৯৮৩৬৬২১৩০০