No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বাংলার মৃৎশিল্পের অন্যতম নিদর্শন – কৃষ্ণনগরের দুর্গা

    বাংলার মৃৎশিল্পের অন্যতম নিদর্শন – কৃষ্ণনগরের দুর্গা

    Story image

    কৃষ্ণনগরের (Krishnangar) মাটির পুতুল শিল্প প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ বছরের পুরোনো। ১৮৮৮ সালে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্প ও মৃৎশিল্পীদের সম্পর্কে ভারতীয় যাদুঘরের সহকারী অত্ত্বাবধায়ক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় (Troilokyanath Mukhopadhyay) বলেছিলেন, “Krishnagar modellers belong to the Hindu Caste of Kumars, or Potters, one of the nine artisan classes of Bengal, whose rank stands just beneath the Brahmans and Writers. From time immemorial the occupation of the caste has been to make earthen vessels, and the figurative representations of devine manifestations described in sacred books.”

    এখান থেকেই ধারণা পাওয়া যায় কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীরা প্রথমে দেবদেবীর মূর্তি তৈরিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন এবং পরবর্তীতে অন্যন্য পুতুল তৈরির কৌশল রপ্ত করেছিলেন। এছাড়াও ‘নদীয়া কাহিনী’-র রচয়িতা কুমুদনাথ মল্লিক জানিয়েছেন, প্রথমে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীরা ছিলেন কুমোর। তাঁরা দেবদেবীর প্রতিমা বানাতেন। খ্রিস্টান মিশনারি এবং ইংরেজ শিল্পরসিকদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই মাটির পুতুল বানানো শুরু করেন তাঁরা।

    শোনা যায়, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের (Maharaja Krishnachandra) আমলে বাংলাদেশের (Bangladesh) নাটোর থেকে মৃৎশিল্পীরা এসে মাটির পুতুল বানানো শুরু করেন। ধীরে ধীরে এই সমস্ত মৃৎশিল্পীরা বসবাস শুরু করেন কৃষ্ণনগরের পূর্ব-দক্ষিণ প্রান্তে জলঙ্গী নদীর (Jalangi River) তীরে অবস্থিত ঘূর্ণি (Ghurni) অঞ্চলে। এছাড়াও কৃষ্ণনগরের ষষ্ঠীতলা, কুমোরপাড়া, নতুনবাজারে মৃৎশিল্পীদের বসবাস রয়েছে। ঘূর্ণি অঞ্চলের শিল্পীদের দক্ষতা প্রধানত দেবদেবীর মূর্তি ও অন্যান্য ভাস্কর্যে, কুমোরপাড়া ও ষষ্ঠীতলার শিল্পীরা সাধারণত ছোট ছোট ছাঁচের পুতুল বানিয়ে থাকেন।

    কৃষ্ণনগরের প্রকৃত পুতুলশিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হলো, জলঙ্গী নদীর পাড় ক্রমাগত ভেঙে যাওয়া। পুতুলের উপযুক্ত মাটি তাই এখন আর সহজলভ্য নয়।

    কারুকাজ, রঙ, বানানোর পদ্ধতি এবং ইতিহাসের জন্য কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল পৃথিবী জুড়ে সমাদৃত হয়। ফল, শাকসবজি, পশুপাখি, দেব-দেবী বিভিন্ন ধরনের পুতুল বানিয়ে থাকেন এখানকার মৃৎশিল্পীরা, যেমন কৃষ্ণনগরের ‘দুর্গা’ (Durga)।

    তবে, কৃষ্ণনগরের প্রকৃত পুতুলশিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হলো, জলঙ্গী নদীর পাড় ক্রমাগত ভেঙে যাওয়া। পুতুলের উপযুক্ত মাটি তাই এখন আর সহজলভ্য নয়। অন্যদিকে, ইদানীং ফাইবার গ্লাস, স্টোন ডাস্ট, প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়েও পুতুল তৈরি হচ্ছে। তবে হতাশার ছাপ সর্বত্র নেই। দ্য বেঙ্গল স্টোর-এর অরিজিৎ সেন বলছিলেন, “বাংলার হারিয়ে যেতে বসা বহু ঐতিহ্যবাহী পুতুল আমাদের স্টোরে পাওয়া যায়। সম্প্রতি সেই তালিকায় যোগ হয়েছে কৃষ্ণনগরের দুর্গা। বাংলার মৃৎশিল্প যাতে হারিয়ে না যায়, তারই একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।”    

    কৃষ্ণনগরের শিল্পীদের কোনও প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয় না। বংশানুক্রমে তাঁরা আশ্চর্য দক্ষতা এবং সৃজনশক্তির পরিচয় দিয়ে আসছেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Abanindranath Tagore) বলেছেন, “সেখানে ক্লাসরুম টেবিল চেয়ার লাইব্রেরি লেকচার হল কিছুই নেই, অথচ দেখা যায় সেখান থেকে পাকা পাকা কারিগর বেরিয়ে আসছে – পুরুষানুক্রমে আজ পর্যন্ত”। বাংলার সেই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার দায় কি আমাদের নয়?

    কৃষ্ণনগরের দুর্গা সংগ্রহ করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

    তথ্যসূত্রঃ

    https://www.tripoto.com/

    wikipedia.org

    বঙ্গদর্শন আর্কাইভ

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @