No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    উত্তমকুমার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, মান্না দে – সেসময় প্রত্যেকের পছন্দ ছিল ধীরেনের ফিশ কবিরাজি 

    উত্তমকুমার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, মান্না দে – সেসময় প্রত্যেকের পছন্দ ছিল ধীরেনের ফিশ কবিরাজি 

    Story image

    বাঙালি মাত্রই ভাজাভুজিপ্রেমী। আর সেই ব্রিটিশ আমল থেকে ফ্রাই, কাটলেট এইসবের প্রতি প্রত্যেকটি বাঙালি ভীষণ উৎসাহী। এইসব খাবার খেতে ভালোবাসেন না, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর। এরকমই একটি বিখ্যাত ফ্রাই আইটেম ফিশ কবিরাজি। ভেটকি মাছের ফিলে ফ্রাই করা হয়, তার উপর ডিমের ঝুরি দিয়ে কভারেজ করা হয়। এই কভারেজ শব্দটি অপভ্রংশ হয়ে নতুন নাম পেয়েছে – কবিরাজি। উত্তর কলকাতার শোভাবাজারের বিখ্যাত ধীরেন কেবিন। এখানকার ফিশ কবিরাজির নাম শোনেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। উত্তমকুমার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, মান্না দে, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, পঙ্কজ রায় এমন বহু গুণীজনের পছন্দের তালিকায় ছিল ধীরেন কেবিন। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এই বহু বিখ্যাত ফিশ কবিরাজির উপকরণগুলি কী কী? ধীরেন কেবিনে যে যে উপকরণগুলির সাহায্যে তৈরি করা হয় ফিশ কবিরাজি, সেগুলি হল – বোনলেস ভেটকি মাছ, আদাবাটা, রসুন বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, গরম মশলা, গোলমরিচ, চিনি, নুন, খাঁটি সর্ষের তেল, ধনেপাতা পুদিনাপাতা কুচি, ডিম এবং বিস্কুটের গুঁড়ো।

    কলকাতা শহরটাকে ঠিকমতো জানার জন্য আপনাকে বেরিয়ে পড়তে হবে শহরের রাজপথ ছাড়িয়ে গলিঘুঁজির দিকে। কারণ কথিত আছে, কলকাতার মধ্যে আছে আরেকটা কলকাতা। প্রতিদিন চলতে ফিরতে যদি আবিষ্কারের রাস্তাটা ক্রমশ চওড়া করতে না পারেন, তাহলে চোখে দেখার নেশা তৈরি করতে পারবেন না। চোখের সামনেই হারিয়ে ফেলবেন বহু অমূল্য জিনিস। কারণ ঐতিহ্যকে শুধু দূর থেকে দেখলে বা আলোচনা করলেই হবে না, তাকে ছুঁয়ে আসার দায়িত্বও আমাদের। এই তিলোত্তমা আস্ত একটি বই। পাতা উল্টে উল্টে দেখার মধ্যে রয়েছে বিশেষ তৃপ্তি। বিশেষ করে উত্তর কলকাতা। উত্তুরে হাওয়ার মধ্যে যে নস্টালজিয়া আছে, তার অন্যতম কারণ এখানকার এক একটি বহু পুরোনো খাবারের দোকান। সেই ঐতিহ্যেরই একটি হল ধীরেন কেবিন। ঠিকানা- ১২৬, শোভাবাজার স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০০৫। ১৯৩৫ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দে এই ধীরেন কেবিনের সূচনা করেন। এরপর থেকে দে পরিবারই দায়িত্ব সামলান ধীরেন কেবিনের। নিজের হাতে রান্না করা থেকে খাবার পরিবেশন করা এঁদের কাছে ভালোবাসার মতো।

    মটন ব্রেস্ট কাটলেট, ফিশ ফ্রাই, ফিশ কবিরাজি, ভেজিটেবল চপ, মোগলাই পরোটা-সহ আরও অনেককিছু সুস্বাদু খাবারের হাত ধরেই যাত্রা শুরু হয় ধীরেন কেবিনের। বর্তমানে ধীরেন কেবিনের মেনুতে যোগ হয়েছে আরও অনেক সুস্বাদু খাবার। দোকানে ভিড় উপচে পড়ে বিকেল থেকে সন্ধে। চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক ফিশ কবিরাজি বাড়িতে আপনি কীভাবে করবেন।

    ভেটকির ফিলেতে পেঁয়াজকুচি, আদা-রসুনবাটা, কাঁচা লঙ্কা, গরম মশলা, ধনেপাতা, বিস্কুটের গুঁড়ো, পরিমাণমতো নুন, গোলমরিচ মিশিয়ে ভালো করে ম্যারিনেট করে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর কাটলেটের আকারে ফিলেগুলো তৈরি করে নিন। কাটলেটের গায়ে মাখিয়ে নিন আর একটু বিস্কুটের গুঁড়ো। এবার অন্য একটি পাত্রে ডিম, কর্নফ্লাওয়ার, গোলমরিচ ও জল মিশিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। পাত্রে অনেকটা তেল গরম করে কাটলেটগুলোকে ডিমের ব্যাটারে ডুবিয়ে ছেড়ে দিন। আঁচ কমিয়ে রাখুন। কাটলেটগুলো সোনালি হয়ে এলে কাটলেটের গায়ে ছড়িয়ে দিন ডিমের ব্যাটার। ফেনা হলে তা দিয়েই মুড়ে দিন কাটলেটগুলো। তেলের মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করুন এবং দ্রুতবেগে। এরপর ওই অবস্থায় কিছুক্ষণ ভেজে তুলে নিন। তৈরি হয়ে যাবে ফিশ কবিরাজি। ধীরেন কেবিনেও এইভাবে তৈরি করা হয় ফিশ কবিরাজি।

    আরও পড়ুন
    শব্দ-গল্প-ঘুম

    কবিরাজির জাঁকজমকপূর্ণ গন্ধ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ধীরেন। প্রবীণ থেকে নবীন – কে না জানে এই কেবিনের নাম! এত এত মায়া, এত এত ঐতিহ্য এখনও আপনাকে আরাম দেবে উত্তর কলকাতার ধীরেন কেবিন।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @