No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    চুরি হয়ে গেল বিদ্রোহী কবিতা

    চুরি হয়ে গেল বিদ্রোহী কবিতা

    Story image

    নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা ছাপানো নিয়ে একটি গল্প আছে। গল্পটি ‘আসা যাওয়ার মাঝখানে’ নামের আত্মজীবনীতে লিখেছেন গায়ক, কবি, স্যাটায়ারিস্ট, সাংবাদিক, অরবিন্দের শিষ্য, বিজলি পত্রিকার কর্ণধার নলিনীকান্ত সরকার। ঘটনাটা এরকম। ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি বিজলীতে বেরোলো বিদ্রোহী কবিতা। যদিও তা বেরোনোর কথা ছিল মোসলেম ভারত পত্রিকায়। কী করে এমন ঘটল? নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের বাগবাজারের বাড়িতে নলিনীকান্ত মাঝে মাঝেই যেতেন। একদিন ক্ষীরোদবাবু নলিনীকান্তকে বললেন, ‘শুনেছি কাজি নজরুল ইসলাম তোমার বন্ধু। এক দিন ওকে আমার বাড়িতে আনতে পার? নজরুল তখন থাকতেন ৩/৪-সি তালতলা লেনে, কমিউনিস্ট নেতা মুজফফর আহমেদ, যিনি কাকাবাবু নামেই পার্টিতে বেশি পরিচিত ছিলেন, তাঁর বাড়িতে। ক্ষীরোদবাবুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নলিনীকান্ত এলেন নজরুলের বাড়িতে। নজরুল নলিনীকান্তকে দেখে বললেন, ‘একটা নতুন কবিতা লিখেছি তোমাকে পড়ে শোনাই’। নজরুল পড়ে শোনালেন ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। নলিনীকান্ত বললেন, ‘এই কবিতা নিয়েই চলো ক্ষীরোদবাবুর কাছে’। রওনা দিলেন দু’জনে বাগবাজারের উদ্দেশে। পথে নলিনীকান্ত নজরুলকে বললেন, ক্ষীরোদবাবুকে শুনিয়ে কবিতাটা যেন তিনি নলিনীকান্তকে দেন বিজলীতে প্রকাশের জন্য। নজরুল রাজি হলেন।

    নজরুল ক্ষীরোদবাবুকে বিদ্রোহী শোনালেন। ক্ষীরোদবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে জড়িয়ে ধরলেন নজরুলকে। নানা বিষয়ে আড্ডা গল্পের পর নলিনীকান্ত আর নজরুল বেরোলেন। কবিতাটি চাইতে নজরুল নলিনীকান্তকে বললেন, কয়েক জায়গায় কাটাকুটি আছে, সে সব ঠিক করে তোমাকেই দেব। তুমি বরং দু’এক দিন পরে বাড়িতে এসে নিয়ে যেও লেখাটা’। তিন দিন পরে নলিনীকান্ত নজরুলের বাড়ি এসে শুনলেন, মোসলেম ভারতের সম্পাদক আফজল-উল-হক সাহেব এক রকম জোর করেই লেখাটি নিয়ে চলে গেছেন। কয়েক দিন আগে নজরুলের বিখ্যাত কবিতা কামাল পাশা প্রকাশিত হয়েছিল মোসলেম ভারতে। তার আগেও নজরুলের আরও অনেক ভালো লেখা মোসলেম ভারতে্ ছাপা হয়েছিল। হতাশ হয়ে নলিনীকান্ত নজরুলকে নিয়ে এলেন মোসলেম ভারতের দফতরে। সেখানে নলিনীকান্তকে দেখে সম্পাদক আফজল-উল-হক সাহেব হেসে বললেন, ‘কী চিড়িয়া তো উড় গিয়া’! ঠাট্টাটা হজম করলেন নলিনীকান্ত। আফজল-উল-হককে নলিনীকান্ত বললেন, ‘ওটা নিলেন কেন? ওই লেখাটা নজরুল আমাকে দেবে কথা দিয়েছিল’। আফজল-উল-হক বললেন কিছু করার নেই, কবিতা ছাপা হয়ে গেছে। এই বলে তিনি ছাপা ফর্মাগুলো নজরুলের সামনের টেবিলে এনে ফেলে দিলেন। তার পর তিনি গল্প জুড়ে দিলেন নজরুলের সঙ্গে। সেই ফাঁকে নলিনীকান্ত মোসলেম ভারতে পরের সংখ্যায় কী কী ছাপা হচ্ছে তা একটা কাগজে লিখে নিলেন। বিজলী ছিল সাপ্তাহিক। আর মোসলেম ভারত ছিল মাসিক পত্রিকা। ফলে বেরোতে দেরি আছে। বিজলী বেরোবে দু’দিন বাদে। নলিনীকান্ত ফিরে এলেন বিজলীর দফতরে। ফিরে এসে বিজলী পত্রিকায় মোসলেম ভারত নিয়ে একটা সমালোচনা লিখলেন। লিখলেন, এই কাগজে নিয়মিত ভাল ভাল লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। হাবিলদার নজরুল ইসলামের কামাল পাশা ছেপে সাড়া জাগিয়েছে মোসলেম ভারত। কবিতাটি যুদ্ধের মার্চ ছন্দে লেখা। এমন কবিতা বাংলা সাহিত্যে এই প্রথম। নজরুলেরই আরও একটি কবিতা বিদ্রোহী। মোসলেম ভারতেই প্রকাশিত হবে। লেখাটা এতই ভালো যে আমাদের স্থানাভাব থাকলেও, তা বিজলীর পাঠক পাঠিকাদের উপহার দেওয়ার লোভ আমরা সম্বরণ করতে পারলাম না। এর পর একটা ড্যাশ। তার পরই হুবহু দু’পাতা জুড়ে ছেপে দেওয়া হল বিদ্রোহী কবিতা। মোসলেম ভারত বেরোতে তখনও বেশ কয়েক দিন দেরী।

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @