কবিতা-২

শুভাশিস মৈত্র
আমাদের উঠানে আকাশে
১
লোকটা বলল পারবেন না গভীর হয়েছে পানি
আমার যত শীত বসন্তের গল্প ছিল
সে সব গল্পে দু’চার জন রাজাও ছিল
খোঁজে ছিলাম রানির!
২
জলের ছোঁয়ায়
মাধবীলতা পড়ল নুয়ে
জলের লেখা অজান্তে যায় ভেসে
সকাল থাকে ছুঁয়ে।
৩
এই যে এত কাল
কালিতে কালো হল
সবই তো উন্মাদ
সময় খালি হল।
৪
কোলাহল বিদ্যুৎ হাওয়া
সবই তো স্মৃতির বেশবাস
এক ফোঁটা, দুটি ফোঁটা বৃষ্টির জলও ছিল তাতে
আর ছিল অনেক আকাশ।
৫
এইখানে আমাদের কথা
যথাযথ হবে না কখনও
এইখানে নেতাদের হাত ধরে বাঁচে
এমনকী আউশ আমনও।
৬
ম্যানহোল দিয়ে
জলের সঙ্গে বই যাচ্ছে ভেসে
তুলে তুলে পড়ছি
দু’একটা আমারও আছে।
৭
সাদা কালো পথ, এক দিন
বৃষ্টির জল বেয়ে নেমে আসবে
সেই সব অচেনা টোল প্লাজায়
আমাদের অনেক কথা হবে।
৮
চিড়িয়াখানায় আমি আর যাই না
বন্দি পশুদের দেখে দেখে মনে হয়
নানা রং-এর
উড়ো খই পড়ে আছে।
৯
একটা শ্যাওলা পড়া দেওয়াল
এবং নিরুদ্দেশের কথা
একটা বরফ ঢাকা মনে
বাজেরে একতারা।
১০
পুতুলের ইতিহাস
মানুষেরই কাছাকাছি প্রায়
পুতুলেরা আসা যাওয়া করে
আমাদের উঠানে আকাশে।
১১
হাওয়ায় পাথর শুয়ে বহু কাল
ভেসে যাচ্ছে মেঘ
হাওয়ায় পরদা ওড়ে মৃদু
ওড়ে পোশাক, পতাকার গান।
অরুণ পাঠক
জগৎজননী
অরুণ-লীলার ঘরে জগতের সহোদর নেই
মহাশূন্য জগৎজননী, সর্বাবস্থায় তিনি
তাপনিরত, প্রাণে প্রাণে শীতল, সংযমের
আলো-নিরপেক্ষ মেয়ে প্রসব করেছেন
আমি তো অবস্থামাত্র, উপাদান মাত্রা
আবেগ উচিত সব কার হাতে? তাকে নিয়ে
যত শব্দ, বিচিত্র নমুনা, ভাসা-ডোবা
জননী-বিস্তারে ঢোকে অসংখ্য জনক
একা আমি; আলোকবৃত্তের যত প্যাঁচানো বিন্দুরা
অসূর্যস্পশ্যাদের করে রাখে রক্ষণশীল
বরাভয়
আমরা আবার সমুদ্রের মুখোমুখি
বারবার মৃত্যুকে আটকে দিতে দিতে
আমরা খুব দরিদ্র হয়ে পড়েছি
আমাদের শক্তি চাই, আগুনে বাঁচার
পরাজিত পায়ের নীচের কাঁটা
তোমার বরাভয় থাক সমগ্র শরীরে
পান করি জ্যোৎস্নার তেজ, নিষ্ঠুর রাত্রির
সমাদৃত ঈর্ষায় করুণা গুলে দিই
রবীন্দ্রনাথের গান; ঐশ্বর্য অতল কোনও
দৃশ্যের পাথর থেকে সরে আসে ঘনানো মূর্তিরা
শূন্যতা
আমাদের গানভরা অন্ধত্ব নিয়ে
আমরা হঠাৎ আলোয় এসে পড়েছি
ফুলগুলো লজ্জা পেয়ে পূর্বজন্মের দিকে
ঢলে পড়ছে, তাদেরও সতীত্ব আছে
আমাদেরও পূর্বাশ্রমের শিক্ষা
সকামমোহিত সব দরজাগুলো খুলে
ভোগতন্ময় পৃথিবীর দিকে তাকালাম
আমাদের মনের সম্রাট সূর্যতাপে সিদ্ধ
রঙের উত্তাপ নিয়ে ওই যারা শূন্যতা পেরুলো
তাদের ভঙ্গিটুকু ঠিক, দেহটুকু নয়
কত চতুরানন
আমাদের অন্য ঘর। অন্য জাত। অন্য অন্য
জলবিভাজিকা। হৃদয় সংবাদ শুধু
আলো নাচে। তোমার মূর্খ ধ্রুবে জুটে যায়
সহস্র সংস্রব। দশ হাত জুড়ে রাখি হাতে
সমপর্ণ শব্দমাত্র। তার দাবি ধরে থাকো
মাথায় প্রবল আঁকা চাপ। আঁকাবাঁকা অস্থির যৌনতা
বাতাসে জিভের কসরত করে যায়। সঙ্গ থাক সঙ্গম নয়
ঐই রূপ অনুরোধ চারমুখে আমাকে বসায়
হে আমার সংরক্ষিতা, আমারও জীবন থেকে তুমি
তোমার প্রস্তাবে তবে কেন সব মুখ খসে পড়ে?
পার্থজিৎ চন্দ
আর্তনাদ
যোনিপথ আলোকিত হলে জন্মের রহ্স্য থাকে না। আর এই রহস্যটুকু তার মৌলিক সম্পদ, তাই সুড়ঙ্গ পেরুনো সব জাতকের বোজা চোখ। শুধু যে দু’এক জনের চোখ খুলে যায় … দৈব দুর্ঘটনায় হয়তো কিছুটা… তারা আজীবন অভিশাপ মাখা। আদিম অরণ্যে গিয়ে তার চোখে পড়ে দুই ডালে কেউ পাখি-মার পা দুটি বেঁধেছে। ডিম ফেটে নয়, বিশাল ছিদ্র দিয়ে … ধাতু আর আলো ঠিকরানো পথে হেলতে-দুলতে পাখি বেরিয়ে আসছে
সে তখন গাছের ছায়ায় বসে শান্ত শরীরে চুপচাপ ছুরি বের করে। খুলি উপড়িয়ে নিজেই নিজের ঘিলু বের করে আনে, ধরে পাতার থালায়
মাঝে মাঝে দেখা যায় তাকে বন থেকে ছুটে বেরিয়ে আসতে। অস্ত সূর্যের দিকে থালাটি বাড়িয়ে সে বলেই চলেছে, ছাগলের গলা নাও … হাড়িকাঠ, বলির খড়গ নাও, শুধু জীবনে রহস্য দাও
পুনর্বারের দিকে রহস্য ফেরাও