মুর্শিদাবাদের কাঠগোলা বাগানবাড়ির নাম ঘিরে আছে কোন রহস্য?

বাংলার নবাবদের রাজধানী মুর্শিদাবাদ। ঢাকা থেকে সুবাহ বাংলার রাজধানী এখানে সরিয়ে আনেন মুর্শিদকুলি খাঁ। এক সময়ে তিনি নবাব হয়ে উঠলেন। বাংলার সিংহাসনে তারপর বসেছিলেন সরফরাজ খাঁ, সুজাউদ্দিন, আলিবর্দি খাঁ, সিরাজউদদৌলা। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করার পর মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক গুরুত্ব কমতে শুরু করে, আর ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে কলকাতা। মুর্শিদাবাদের মায়াবী আকর্ষণ কিন্তু তাতে নষ্ট হয়নি। আজও তার অলি-গলি-রাস্তায় ইতিহাস কথা বলে। পর্যটক আর গবেষকরা এক অমোঘ টানে নবাবদের শহরে ছুটে যান।
মুর্শিদাবাদের সবথেকে জনপ্রিয় দ্রষ্টব্য হাজারদুয়ারি প্রাসাদ থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে আছে কাঠগোলা বাগানবাড়ি। বাগানে ঘেরা বিশাল স্থাপত্য আর জমকালো সব ভাস্কর্য মুগ্ধ করার মতোই। জায়গাটার নাম কেন ‘কাঠগোলা’ হল, তা নিয়ে দু’টি মত প্রচলিত। বাগানে ঢোকার মুখে দেখা যায় একটা বড়ো নহবত গেট, তার সামনে পূর্ব-পশ্চিমে রাস্তা চলে গিয়েছে। লোকে বলেন, এই রাস্তার দু’পাশে ছিল কাঠের গোলা। সেখান থেকে এই নামটা এসেছে বলে মনে করেন অনেকে। এই বাগানবাড়ি ফুলের জন্যও বিখ্যাত ছিল। বাগানের নানা ফুলের মধ্যে গোলাপের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল দিকে দিকে। অনেকের বিশ্বাস, কাঠগোলাপের থেকেই বাগানবাড়ির নাম হয়েছে কাঠগোলা।
ছবি – সংগৃহীত
এই জায়গাটি কিনে বাগানবাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন জিয়াগঞ্জের রাজা লক্ষ্মীপৎ সিং দুগর। লক্ষ্মীপৎ, জগপৎ, মহীপৎ এবং ধনপৎ - এই চার ভাই এখানে থাকতেন। এখনও বাগানে ঢুকলে দেখা যায় এই চার ভাইয়ের ঘোড়ায় চড়া মূর্তি। তাঁদের আমলেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল আদিনাথের মন্দির। এই জৈন মন্দির কাঠগোলা বাগানবাড়ির অন্যতম প্রধান দ্রষ্টব্য। স্থানীয় মানুষরা বলে থাকেন, বাগানের পুব দিকে পুরোনো মসজিদ আর কবরস্থানের পাশে একটি ইঁদারা থেকে প্রচুর গুপ্তধন পেয়েছিলেন তাঁরা। তার সাহায্যেই বাগান এবং মন্দির গড়ে তোলা হয়। অনেকে বলেন, এই চার ভাই ছিলেন দস্যু লুটেরা। আবার কেউ বলেন, তাঁরা আসলে ছিলেন ব্যবসায়ী।
মালদা এবং মুর্শিদাবাদের দর্শনীয় স্থান | ভিডিও সৌজন্যে - পর্যটন বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
এক সময়ে এই বাগানবাড়িতে নিয়মিত জলসা হত। নবাব এবং অভিজাতদের যাওয়া আসা ছিল এখানে। ইংরেজরাও এখানে আসতেন। মুর্শিদাবাদে ব্রিটিশদের ক্ষমতালাভের ষড়যন্ত্রেও এই বাগানবাড়ি জড়িয়ে ছিল। বাগানের ভিতর একটি সুড়ঙ্গপথ আছে, যা ভাগীরথীর সঙ্গে যুক্ত। ওই গোপন পথে জগৎশেঠদের বাড়ি যাওয়া যেত বলে শোনা যায়। এখানকার প্রাসাদ, সংগ্রহশালা, বাগান, আদিনাথ মন্দির, চিড়িয়াখানা, বাঁধানো পুকুর, গোপন সুড়ঙ্গ দেখতে ভিড় করেন প্রচুর মানুষ।
গুগল মানচিত্রে কাঠগোলা বাগানবাড়ির অবস্থান
তথ্যঋণ - ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ (ওয়েবসাইট), আদার ব্যাপারী (ওয়েবসাইট), বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর (পোর্টাল), খেয়ালপাতা (ব্লগ)