“বন্ধু তোর লাইগা রে আমার তনু জড়জড়...”

কালিকাপ্রসাদ। আসামের একটি সংগীতময় প্রাণ। উদ্ভ্রান্ত। বোহেমিয়ান। শিকড়ের টানে তিনি পৌঁছে যেতে পারেন এ-দিক সে-দিক। যাদবপুরের এইটবি বাসস্ট্যান্ডে প্রায় দেখা যেত মাটির ভাঁড়ে চা খাচ্ছেন। এই মাটির কথা ভেবেই তো এতকিছু। মাটির জন্যে মাটির খোঁজে আর মাটির টানে গবেষণা করে গেছেন আজীবন। মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা, নিজের ভাষাকে ভালোবাসতে চাওয়ার এই মানুষটির আজ জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৫২ পূর্ণ করতেন।
সংগীত জীবনে প্রবেশ তবলা বাজানোর মধ্যে দিয়ে৷ কিন্তু গভীর আগ্রহের বিষয় ছিল বাংলার উত্তর ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সংগীতের প্রতি। সাধারণত অচেনা বা অজ্ঞাত সুর নিয়েই কাজ করতে ভালোবাসতেন কালিকা। ১৯৯৫ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে যান স্নাতকোত্তরের জন্য৷ ১৯৯৮-এ ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্টস-এ লোকসংগীতের উপর গবেষণা করতে চলে যান ব্যাঙ্গালোর।
১৯৯৯ সালে তৈরি করেন ‘দোহার’। সেই দোহার দলের সৃষ্টি কমবেশি আমরা প্রত্যেকেই জানি। গ্রামীন বাংলার মেঠো সুরকে দূর দূরান্তের মানুষদের কাছে পৌঁছে দেবার কাজটি তিনি করেছিলেন অত্যন্ত নিপুণভাবে। তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘সহজ পরব’।
বছর দুই আগে ১১ সেপ্টেম্বর প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে দোহার আয়োজন করেছে তাদের প্রথম লাইভ ডিজিটাল কনসার্ট। ধুমধাম করে উদযাপিত হয় দোহারের ২১ বছর ও কালিকাপ্রসাদের ৫০। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণ করা যায় এই অনুষ্ঠানে। কালিকারা এইভাবে বেঁচে থাকেন বন্ধুদের কণ্ঠে, বন্ধুদের ভালোবাসায়। বাংলা লোকসংগীতের কাছে কালিকা আজও তাই পরম দোসর।