No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ব্যাংককের আন্ডারগ্রাউন্ড হাব থেকে এসেছিল ক্যাফে কবীরার পরিকল্পনা 

    ব্যাংককের আন্ডারগ্রাউন্ড হাব থেকে এসেছিল ক্যাফে কবীরার পরিকল্পনা 

    Story image

    খুব সাধারণ খবরের কাগজ, পোস্টার, রং, স্প্রে, আশেপাশের সহজে পাওয়া জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্যাফে। চা, কফি, খাবারদাবার তো আছেই, পাশাপাশি এখানে রসিকজন খুঁজে পাবেন নিজেদের পছন্দসই টি-শার্ট, বই, লিটল ম্যাগাজিন, শাড়ি, নানা ধরনের ছোটোবড়ো হাতের কাজ। নাম ‘ক্যাফে কবীরা’। আসলে ‘কবীরা’ একটা ব্র্যান্ড। ক্যাফের পাশাপাশি গানের অনুষ্ঠান, বই প্রকাশের আয়োজনও করে থাকেন এঁরা। কবীরার উদ্যোগে কিছুদিন আগেই ‘মহীন এখন ও বন্ধুরা’-দের নিয়ে একটি কনসার্ট হয়ে গেল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন অডিটরিয়ামে। আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে পাটুলিতে হল ‘দুই বাংলার রকবাজি’

    ‘কবীরা’ ব্র্যান্ডের স্রষ্টা জুল মুখার্জি বা প্রিয়তনু মুখার্জি একসময় বামপন্থী রাজনীতি করেছেন চুটিয়ে। মতাদর্শের তাগিদে ছেড়েছেন বাড়ি। এক সময় ছিলেন জাতীয় স্তরের ছাত্রনেতা। এসবের মধ্যেই অল্টারনেটিভ কালচারের প্রতি একটা ভালোবাসা বরাবরই রয়েছে তাঁর। সেখান টান থেকেই চেষ্টা করেছিলেন সিনেমা বানাতে। কিন্তু সেই কাজে যা ধারদেনা হয়ে গেল, তা মেটাতে নামতে হল ব্যবসায়। নিজের কিছু আইডিয়া থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ কয়েকটি টি-শার্টের ডিজাইন তৈরি করে ফেললেন। হাওড়ার মঙ্গলাহাট থেকে বেশ কিছু কালো টি-শার্ট কিনে সেগুলোতে ঋত্বিক ঘটকের ডিজাইন করে লিখে দেন, “ভাবা প্র্যাকটিস করো”। সেগুলোর ছবি ফেসবুকে দেওয়াতে ক্রেতারা সারা দিলেন অভাবনীয়ভাবে। তারপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের থেকে টাকা ধার নিয়ে টি-শার্টের ব্যবসা শুরু করলেন জুল। বাংলায় ডিজাইন করা টি-শার্ট তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে খুব তাড়াতাড়িই। যাদবপুরে মিলনদার ক্যান্টিনের সামনে, বাউল ফকির মেলা, বর্ধমান, বোলপুরে বিক্রি হতে থাকে তাঁর টি-শার্ট।

    এরই মধ্যে ক্যাফে খোলার অভিনব পরিকল্পনা জুলের মাথায় আসে। ছাত্রজীবনে বছরখানেক তিনি ব্যাঙ্ককে ছিলেন। সেখানে একটা আন্ডারগ্রাউন্ড পাবে যাতায়াত ছিল তাঁর। ব্যাঙ্ককের অনেক সাহিত্যিক, শিল্পী, চলচ্চিত্রকার আড্ডা মারতে জড়ো হতেন সেই পাবে। কলকাতার বুকে নতুন ক্যাফে খোলার আইডিয়া জুল সেখান থেকেই পেয়েছিলেন। প্রথমে ছোটো করে সেই আইডিয়ার বাস্তবায়ন হয় যাদবপুরে ৮বির মোড়ে, তারপর ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে যাদবপুরের সুলেখা চত্বরে আরেকটু বড়ো আকারে চলতে থাকে ক্যাফে কবীরা। সাধারণ মানুষ যাতে ক্যাফের আনন্দ নিতে পারে তার জন্য অন্যান্য ক্যাফেতে যে খাবারগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোকে খুব কম দামে পরিবেশন করার একটা উদ্দেশ্যও জুল মুখার্জির ছিল। প্রথম দিকে দশ টাকার চা, কুড়ি টাকায় কফি পাওয়া যেত ক্যাফে কবীরাতে। পরে অবশ্য ঘর ভাড়া, এসির খরচ ইত্যাদির জন্য খাবারের দাম কিছু বাড়াতে হয়।

    একই সঙ্গে ক্যাফে কবীরাতে বিক্রি হয় বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা টি-শার্ট, জুলের নিজের ডিজাইন করা টি-শার্ট, বই, লিটল ম্যাগাজিন আর হস্তশিল্পের বিচিত্র সব জিনিস। ক্যাফে কবীরার প্রত্যেকটা খাবারই বেশ ইউনিক। মূলত চিকেন স্যালাড, কবীরার স্পেশাল বার্গার, পর্ক ব্লাটার, বিভিন্ন ভ্যারাইটির চা, কফি পছন্দ করেন বেশিরভাগ লোক। কিছুদিনের মধ্যে আসতে চলেছে নতুন রকমের কিছু স্যান্ডুইচ, স্প্যাগেটি। শুধুমাত্র চা-কফি বিক্রিই নয়, তার সঙ্গে সঙ্গে দুই বাংলার কাউন্টার কালচারকে এক জায়গায় মিলিয়ে ধরার কাজও হয়ে থাকে ক্যাফে কবীরায়। অনেক তরুণ কবির বই, অনামি শিল্পীদের হাতের কাজ ক্যাফে কবীরার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছয়। আগে সিনেমার পোস্টার লাগানো যে সব দেশলাই বাক্স পাওয়া যেত কলকাতায়, সেই জিনিস এখন পাবেন এই আড্ডা হাবে। আর টি-শার্টের জন্য ক্যাফে কবীরার আলাদা কদর। বহু মানুষ শুধু টি-শার্টের খোঁজেই এখানে হাজির হন। এখন কবীরা ব্র্যান্ডের কাজকর্মের পরিধি বেড়েছে অনেকটা। কিছুদিনের মধ্যে মৌসুমি দ্বীপে চালু হচ্ছে কবীরা ভিলেজ ক্যাম্প।

    তথ্য সহায়তা – শুভ্র দত্ত; ছবি সূত্র – শুভ্র দত্ত, সুমন সাধু 

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @