No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    মাত্র বারো ঘন্টায় মানেভঞ্জন থেকে একদৌড়ে ফালুট

    মাত্র বারো ঘন্টায় মানেভঞ্জন থেকে একদৌড়ে ফালুট

    Story image

    ম্যারাথন, আল্ট্রা ম্যারাথন ইভেন্টগুলোতে আমার অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য ছিল নিজেকে দ্রুত পাহাড়ে চড়ার উপযোগী করে তোলা। ইভেন্টে যতটা সম্ভব নিজের লিমিট পুশ করা যায়, নানা এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। যদি কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ি, দেখার জন্য ক্রু মেম্বাররা রয়েছে। 

    গাড়োয়াল রানে ৭৪ কিমি দৌড়ে ৭৪০০ ফিট পাহাড় বেয়ে ওঠার পরে ভাবলাম কোনো ট্রেক রুটে এই পরীক্ষা চালাব। তবে, প্রথমবারেই একা নয়। তাই স্যোশাল মিডিয়ায় পরিকল্পনার কথা জানালাম। উৎসাহ নিয়ে যোগদান করল অর্পিতা মৈত্র, সৃজন সাহা, সাধন সরকার, সুমন সরকার, আথিকুর রহমান।

    এবার দরকার ছিল সঠিক পরিকল্পনার। প্রথম পরিকল্পনা ঠিক হল মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু হয়ে ফালুট অব্দি দৌড়ানো হবে। মোট দূরত্ব প্রায় ৫২ কিমি। সমুদ্রপৃষ্ঠের ২০০০ মিটার উচ্চতা থেকে শুরু করে ৩৬৩৬ মিটার হয়ে ৩৬০০ মিটারে গিয়ে শেষ হবে। এটি সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিনের ট্রেকরুট। ঠিক করলাম, আমরা শেষ করব ১৩ ঘন্টার মধ্যেই। অন্তর্বর্তী নানা দূরত্বও সময়ের হিসেবে বেঁধে দেওয়া হল, যাকে বলে কাট অফ টাইম। দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিক করা হল খাবার নিয়ে দৌড়ানো হবেনা। ফুয়েল স্টেশন হিসেবে থাকবে একটি ল্যান্ড রোভার। শুধু খাবার বা ওষুধ নয়, কেউ যদি অসুস্থ বোধ করে, বা কেউ যদি কাট অফ টাইম না পেরোতে পারে, তাদের জন্যেও গাড়িটি থাকবে। পুরো পরিকল্পনা বুঝিয়ে দেওয়া হল আমাদের গাইড রাম লিম্বুকে।

    ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের ভোর। দৌড় শুরু হল। ঠান্ডা আর অন্ধকারের মধ্যে কাঁপতে কাঁপতেই দৌড় শুরু হল। প্রথম ২ কিমি প্রচন্ড চড়াই মাত্র ৩৫ মিনিটের মধ্যে সকলে পেরিয়ে চিত্রে পৌছে গেল। ধীরে ধীরে মেঘমা, টুমলিং হয়ে সকলেই পৌছে গেল গৈরিবাস। আর আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করলো। ফের সবাই বোতল ভরে, খাবার খেয়ে চড়াই ওঠা শুরু করল। কালেপোখরি পৌঁছে আথিকুরদা দৌড় শেষ করে দিল। ভদ্রলোকের বয়স প্রায় ৪৫ বছর। সবে ট্রেকিং শুরু করেছে। তবু, ৩০০০ মিটার উচ্চতায় ২৩ কিমি দৌড়ে ১১০০ মিটার উঠলো মাত্র ছয় ঘন্টায়। এরপর বিকেভঞ্জন হয়ে সকলে সান্দাকফুর চড়াই উঠতে শুরু করলাম। চারিদিকে তখন মেঘে ঢেকে গিয়েছে, সাড়ে সাত ঘন্টার মধ্যে সকলেই পৌঁছোনোর জন্য নিজেদের পুশ করতে লাগলাম। তাতে হিতে বিপরীত হয়ে মনে হচ্ছিল, মাথা ঘুরে পড়ে যাব যে কোনো সময়। অবশেষে, সেই প্রচন্ড চড়াই পেরিয়ে সান্দাকফু পৌঁছে গেলাম সাতঘন্টাতেই। খানিক বাদেই সুমন এসে পৌছল। কিন্ত সাড়ে সাতঘন্টাতেও যখন বাকিরা এসে পৌঁছাল না, বাধ্য হয়ে বাকিদের ছেড়ে আমি আর সুমন এগিয়ে গেলাম ফালুটের নির্জন রাস্তার দিকে। বাকিরা সান্দাকফুতেই দৌড় শেষ করল।

    ততক্ষণে আবহাওয়া মারাত্মক বিগড়েছে, প্রচন্ড জোরে হাওয়া চলছে, মনে হচ্ছে হাওয়ার ধাক্কায় উড়ে চলে যাবো। পাঁচ ফুট দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না। তারই মধ্যে, আমি আর সুমন চলেছি দৌড়ে দৌড়ে। ৩৬০০ মিটার উচ্চতায় অক্সিজেনের অভাব বেশ বোধ করতে শুরু করলাম দুজনেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক ক্লান্তও হচ্ছি। মাঝেমধ্যে সেনা চেকপোস্ট পড়ছে, ওরাও আমাদের গল্প শুনে অবাক! একদিনে মানেভঞ্জন থেকে পায়ে হেঁটে ফালুট! এও সম্ভব? 

    এদিকে ধীরে ধীরে দুজনেই আরো অবসন্ন হয়ে পড়ছি, অন্ধকার নেমে আসছে, অথচ বুঝতে পারছি না ফালুট আরও কতদূর। স্নো-ফলও শুরু হল দেখতে দেখতে, আর ঠিক তখনই দেখলাম এক হাত দূরে ফালুট হাট।

    এই আনন্দ বোধহয় বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমরা শেষ করলাম ১২ ঘন্টা ৪০ মিনিটেই। স্থানীয়রা কেউই মনে করতে পারলনা এর আগে একদিনে কেউ পায়ে হেঁটে মানেভঞ্জন থেকে ফালুট পৌঁছেছে কি না। রাত্রিটা কাটল ফালুট হাটেই। বাইরে তখন প্রচন্ড তুষারপাত আর বজ্রপাত চলছে।

    এরপর ঠিক করলাম মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু ফালুট হয়ে গোর্খে অব্দি দৌড়বো একাই।

    (ক্রমশ)

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @