বিশেষভাবে সক্ষমদের তৈরি হরেক জিনিস মিলছে রোজগার মেলায়

গত ২০১৫ সাল থেকে নিয়মিত ‘রোজগার মেলা’ হয়ে আসছে মহানগরে। আয়োজনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তর। বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের কথা ভেবেই রাজ্য সরকার এই মেলার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই প্রত্যেক বছর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস এবং তার আগেপিছেই হয়ে আসছে এই উৎসব। বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের হাতে তৈরি নানান রকমের জিনিসপত্র এখানে বিকিকিনি হয়। অনেক আগেই রাজ্য সরকার বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের নিয়ে কাজ করা এনজিও-দের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা করেছে। সেই টাকা দিয়ে এনজিওগুলি নানা কিসিমের জিনিসপত্র তৈরির ব্যবস্থা করে থাকে। পৃথকভাবে সক্ষম লোকদের হাতে তৈরি এই সব জিনিসের যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে বাজারে। কিন্তু ২০১৫ সালের আগে এনজিওদের এই ধরনের কাজগুলোকে কেন্দ্রীয়ভাবে সাধারণ মানুষের সামলে তুলে ধরার কোনো ব্যবস্থা এই রাজ্যে ছিল না। নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তর তার অভাবটাই পূরণ করেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে এই মেলায় বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য সরাসরি ইন্টারভিউ এবং চাকরিরও ব্যবস্থা থাকে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং অনেকগুলি বেসরকারি সংস্থা অংশগ্রহণ করে এই মেলায়।
ব্রেইল বই, লাঠি এবং অন্যান্য সরঞ্জাম বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের থেকে কোনোক্রমে তুলে না দিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াসলি রাজ্য সরকার তাঁদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই সারা দেশের পৃথকভাবে সক্ষম মানুষদের অভিন্ন পরিচয়পত্র প্রদানের যে কর্মসূচি কেন্দ্রীয় সরকার শুরু করেছে, তার জন্য নাম নথিভুক্তির কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তৈরি হয়েছে বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য আলাদা সরকারি ওয়েবসাইট। নারী ও সমাজ কল্যাণ দপ্তরের একটি সমীক্ষাও চলছে, যা শেষ হলে রাজ্যের সব জেলায় মোট কত শতাংশ বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ রয়েছেন তার একটা হিসেব পাওয়া যাবে। সেই অনুযায়ী ঋণ দেওয়া হবে রাজ্যের সব পৃথকভাবে সক্ষম লোকেদের। ঋণের টাকা আসবে বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে। এছাড়া এর আগে রোজগার মেলার মঞ্চে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বিশেষভাবে সক্ষম কিছু মানুষকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। Rights of Persons with Disabilities Act অনুযায়ী এখন ফিমোফিলিয়া ও থ্যালাসেমিয়া রোগীদেরও বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের মধ্যেই ধরা হয়।
এবছর রোজগার মেলা শুরু হয়েছে ৩ ডিসেম্বর, চলবে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৩ তারিখ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়। সেদিন বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ ও তাঁদের সঙ্গে যুক্ত কিছু সংস্থাকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পুরস্কৃত করা হয়। গতকাল ৪ তারিখ দুপুর ১টায় হয় রোজগার মেলার উদ্বোধন। ৪ এবং ৫ তারিখ কলেজ স্কোয়ার বিদ্যাসাগর উদ্যানে পুরোদমে রোজগার মেলা চলছে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের হাতে তৈরি মাটির প্রতিমা, প্লাস্টার অফ প্যারিসের মূর্তি, মাটির পুতুল, খেলনা, রান্নাবান্না এবং খাবারের নানা উপকরণ, জামাকাপড় – অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছে এখানে। কলকাতা এবং বিভিন্ন জেলার অনেকগুলি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এখানে পসরা সাজিয়ে বসেছে।
‘নিমতৌড়ী তমলুক উন্নয়ন সমিতি’-র থেকে সুরজিৎ পাল এই মেলায় চার বছর ধরে তাঁদের সংস্থায় তৈরি জিনিসপত্র সাজিয়ে বসছেন। ‘বঙ্গদর্শন’-এর প্রতিনিধিকে তিনি জানালেন, এই মেলায় বিক্রির ক্ষেত্রে তিনি ভালো রেসপন্স পেয়েছেন। তাঁদের সংস্থায় বিশেষভাবে সক্ষম মানুষেরা টেলারিং, কার্পেন্টারি, কম্পিউটারের কাজ করেন, পাটের নানা শৌখিন জিনিস, মোমবাতি, রাখি, মাটির প্রতিমাও তৈরি করেন। এই মেলাতে তাঁদের সংস্থার জিনিস বিক্রি তো হচ্ছে, পাশাপাশি ক্রেতারা প্রচুর অর্ডারও দিচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন পুজো কমিটি থেকেও অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। এইসব অর্ডার সারা বছর ধরে তাঁদের সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের কাজের জোগান দেবে বলে তিনি মনে করেন। মেলাতে পৃথকভাবে সক্ষম প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করছে বিভিন্ন সংস্থা। এরকমই একটি প্রতিষ্ঠান হল ফিউচার গ্রুপ। ফিউচার গ্রুপের পক্ষ থেকে কিষাণ সিং জানালেন, অনেক লোকই রোজগারের জন্য আবেদন করছে এই মেলায়। শপিং মল, বিভিন্ন বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জন্য হাউজকিপিং, মার্কেটিং, কম্পিউটারের কাজ – যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে থাকে ফিউচার গ্রুপ।