No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    নয়া গ্রামের পটুয়া বসতির মেয়েরা গড়ে তোলেন ‘যো’ নামের ষষ্ঠী পুতুল 

    নয়া গ্রামের পটুয়া বসতির মেয়েরা গড়ে তোলেন ‘যো’ নামের ষষ্ঠী পুতুল 

    Story image

    পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়া গ্রামে যে কয় ঘর পটুয়া বসতি, সেখানের মেয়েরা যে শুধু পট লেখেন বা পটের গান করেন এমনটা নয়। ঘর গেরস্থলির কাজ, সংসারের কাজ – এমনকী পট আঁকার অবসরে তাঁরা আরেক ধরনের শিল্প সৃজনে মন দেন, তা হল পুতুল বানানো। এ পুতুল চাকের পুতুল নয়, আবার ছাঁচে গড়া পুতুল ও নয়। ওঁরা হাতের আঙুলে টিপে টিপে বাতালুতে বেলে মাটিকে নিজের মনের মতো গড়ন দেন। তৈরি হয় পুতুল।

    মনের আবেগ মিলিয়ে মিশিয়ে পুতুল গড়ে ওঠে। পুতুলের হরেক প্রকার বিষয়। মা ও শিশু, মায়ের কোলে শিশু, মা সন্তানকে কোলে রেখে তেল মাখাচ্ছে, মায়ের কোলে বাচ্চা বসে আছে, ঘোড়া, পাখি, কুকুর সব মিলিয়ে যেন গৃহস্থের ভরা সংসারের স্বপ্ন মেখে গড়ে ওঠে এই পুতুল। নয়া গ্রামের পোটো পাড়ার রেজিনা চিত্রকর এখন এই পুতুল বানানোর তরুণ প্রজন্ম। ইসলাম এঁদের জীবনধর্ম। মানসিক উদারতা মর্মস্পর্শী। তিনি এই পুতুল বানাতে শিখেছেন তাঁর মা আয়েসা চিত্রকরের কাছে থেকে। কথার ফাঁকে রেজিনা জানান, এই পুতুলকে ওঁরা ‘যো’ পুতুল বলে থাকেন। হাতের টিপন, তালুর বেলন (বেলে দেওয়া) আর আঙুলের লিখন – মানে আঙুল দিয়ে নাক, চোখ এর টান বা খাঁজ বার করে রেজিনা-রা নয়া গ্রামে বসে পুতুল বানান। 

    যো পুতুল আদপে হল ষষ্ঠী পুতুল। গৃহস্থের খোকা হোক বা বউয়ের কোলে-কাঁধে পো থাকুক, এমন ইচ্ছা নিয়েই এই পুতুল তৈরি করা হয়। এর সামগ্রিক চরিত্র হল সরল। চোখ নাক মুখ শিল্পের পরিভাষায় সাজেস্টিভ। আর পুতুল তৈরির শেষে মাটিকে পুড়িয়ে গড়নকে তাজা করা হয়। আবার অনেক সময় হাতের কাছে পট আঁকার রং গোলা থাকলে দু’চার ফোটা রংও লাগানোর রেওয়াজ আছে। রেজিনার সাথে কথা বলে জানা গেল, মেলা পার্বনে পুতুলের দর বা কদর দুই-ই আছে। পুতুল বিষয়ক পণ্ডিতরা বলেন, এই ‘যো’ পুতুল আসলে ভেনাস ফিগারাইন। প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রগুলিতে একই ধরনের পুতুল তৈরি হয়ে এসেছে। মিশর, মেসোপটামিয়া, সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া পোড়ামাটির পুতুলের সঙ্গে এসবের চেহারাগত সাদৃশ্য অবাক করার মতো। তাই চরিত্রগতভাবে এ পুতুলকে  অভিহিত করা হয় ‘এজলেস ডল’ বা চিরন্তনী পুতুল হিসেবে। আলপনার ‘কোলে পো কাঁধে পো’ ছবির সঙ্গেও পুতুলের চেহারার সাদৃশ্য আছে।

    নয়া গ্রামের পোটো পল্লীতে বেঁচেবর্তে আছে এই পুতুলের ধারা। মেয়েরাই তার জনক। সম্প্রতি কিছু অন্য ধরনের বিষয় নির্মাণের কথা ভাবাছেন সেখানের রেজিনা-রা। সেই ভাবনা থেকেই এখন বানাচ্ছেন ঘোড়ায় চড়া টুপি মাথায় এক পুরুষ। রেজিনা বলেন ‘উনি আমাদের নেতাজি সুভাষ’।

    সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে যে পটুয়া শিল্পী যেমন পট আঁকার মধ্যে দিয়ে লোকচিত্রের প্রাচীন ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন, পাশাপাশি পটুয়া রমণীর হাতে টিকে রয়েছে লোকশিল্পের মিষ্টি দৃষ্টান্ত ‘যো’ পুতুল। পুতুলের মাপ ছোটো ও ওজনে হালকা। পুতুলের ওজন বেশি হলে ঝুড়ি মাথায় অনেক পুতুল নিয়ে মেলা পার্বনে যাওয়া কষ্ট। তাই এ পুতুল হালকা ওজনের করাই রেওয়াজ। রেজিনা জানান, মাঝে মধ্যে ছেলে ভোলানোর জন্যও হাতে পুতুল তুলে দেয় মায়েরা। এসে বলে, “ও রেজিনা, দুটো পু্তুল দিয়ে যা তো”। এরকম নানা রকম আলাপচারিতাতেই জানা গেল নয়া গ্রামের চিত্রকর রমনীদের ‘যো’ পুতুলের বৃতান্ত। মেদিনীপুর জেলার নাড়া জোল, বীরভূমের সিউড়ি, নির্ভয়পুর, হাওড়া জেলার চণ্ডীপুরেও এই পুতুলের সন্ধান মেলে।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @