No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    চিত্রগ্রাহক সৌম্যেন্দু রায়ের প্রতি জীবনস্মৃতি আর্কাইভ এবং চিত্রবাণী-র শ্রদ্ধার্ঘ্য

    চিত্রগ্রাহক সৌম্যেন্দু রায়ের প্রতি জীবনস্মৃতি আর্কাইভ এবং চিত্রবাণী-র শ্রদ্ধার্ঘ্য

    Story image

    ছবি সৌজন্যে: জীবনস্মৃতি আর্কাইভ

    ত ২৭ সেপ্টেম্বর, প্রয়াত হয়েছেন বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক সৌম্যেন্দু রায়। সুব্রত মিত্রের চোখের সমস্যা হওয়ায় সত্যজিৎ রায় যাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ’ তথ্যচিত্রে চিত্রগ্রহণের জন্য। সেইসঙ্গে ডাক পেয়েছিলেন ‘তিনকন্যা’ কাহিনিচিত্রতেও। স্বাধীন আলোকচিত্রী হিসেবে সৌম্যেন্দু নজির গড়েছিলেন তখনই। তৈরি করেছিলেন ইতিহাস। তাঁর প্রয়াণের অব্যবহিত পর, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে চলেছে জীবনস্মৃতি আর্কাইভ এবং কলকাতার চলচ্চিত্র চর্চার পথিকৃৎ কেন্দ্র চিত্রবাণী

    দুর্ভাগ্যের কথা হল সত্যজিৎ রায়ের একদা ঘনিষ্ঠ এই চিত্রগ্রাহক তাঁর জীবিতাবস্থায় সেভাবে কখনও আলোচিতই হননি। উত্তর কলকাতায় ১৯৩২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সৌম্যেন্দু রায়ের জন্ম। বাবা কণককুমার রায়, মা গার্গী রায়। বাবার কর্মসূত্রে তাঁর শৈশব অতিবাহিত হয়েছিলো মধ্যপ্রদেশের ধরমজয়গড়ে। ১৯৪২-এ দশ বছর বয়সে তিনি কলকাতায় আসেন। ভর্তি হন তীর্থপতি ইনস্টিটিউসনে। ম্যাট্রিক পাশ করার পর তিনি সায়েন্স নিয়ে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসের পড়া শুরু করেন আশুতোষ কলেজে। 


    ছবি সৌজন্যে: জীবনস্মৃতি আর্কাইভ

    সেই সময় দিদি উপহার দিলেন একটি কোডাক-ব্রাউনি ক্যামেরা। ওটা পেয়েই এক সহপাঠী বন্ধুর সঙ্গে মহাউৎসাহে শুরু হলো তাঁর ফটো তোলা। নিউ থিয়েটার্সের ‘উদয়ের পথে’ শুটিং দেখার অভিজ্ঞতা তাঁর মনে সিনেমার ক্যামেরাম্যান হবার বাসনা প্রবল করে তোলে।

    সেই সময় যৌথ পারিবারিক মূল্যবোধে সিনেমা-করিয়ে হবার পথ আজকের মতো এত সুগম ছিল না। তবুও ছেলে বায়না করলো মায়ের কাছে।  মা সহায়ক হয়েছিলেন তাঁর স্বপ্নপূরণে। মায়ের অনুরোধে এক আত্মীয় পরিচয় করিয়ে দেন রামানন্দ সেনগুপ্তের সঙ্গে। তারপর একে-একে জি.কে. মেহতা, দেওজিভাই, অজয় কর, বিশু চক্রবর্তী, অনিল গুপ্ত, বিমল মুখোপাধ্যায়, দীনেন গুপ্ত এবং এদেশের রিয়েলিস্টিক লাইটিং-এর পথিকৃত—সুব্রত মিত্র

    নানা আলোছায়ার কল্পনা ক্রমে-ক্রমে বাস্তবায়িত হয় প্রকৃতির পাঠশালায়।

    ১৯৬০, ডাক পড়লো সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘রবীন্দ্রনাথ’ তথ্যচিত্রটির চিত্রগ্রহণে। একই সঙ্গে তাঁরই পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি ‘তিন কন্যা’। এবার স্বাধীন আলোকচিত্রীর ভূমিকায়। বাকিটা উজ্জ্বল ইতিহাস।


     সৌম্যেন্দু রায় এবং সত্যজিৎ রায়, ছবি: নিমাই ঘোষ

    কয়েকবছর আগেই সৌম্যেন্দু রায় জীবনস্মৃতির কিউরেটর অরিন্দম সাহা সরদারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁর সৃষ্ট আলোকচিত্রে সমৃদ্ধ কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের কপি। দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তাঁর স্বাধীন আলোকচিত্রের শুটিং পর্যায়ের বিভিন্ন খুঁটিনাটি তথ্য সংবলিত একটি ডায়েরি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি জীবনস্মৃতিকে দান করেছিলেন অনেক বই, গুগাবাবা-য় হাল্লা রাজার সভাগৃহে ব্যবহৃত একটি চাঁদমারি আর সত্যজিৎ রায়-সহ নানা পরিচালকের যে সব ছবিতে তিনি চিত্রগ্রাহকের কাজ করেছেন সে সবের শুটিং স্টিলের ডিজিটাল কপি। গবেষকদের ব্যবহারের জন্য সৌম্যেন্দু রায়ের এই দানগুলিকে সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও ব্যবহারের যথাযথ ব্যবস্থা করেছে ‘জীবনস্মৃতি’।  গত ৮ মে সৌম্যেন্দু রায় সংগ্রহশালা—‘সৌম্যেন্দু-সিন্দুক’ ঘরের উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী হিরণ মিত্র এবং আলোকচিত্রী আদিনাথ দাস। 

    সৌম্যেন্দু রায় সংগ্রহশালা, ছবি সৌজন্যে: জীবনস্মৃতি আর্কাইভ

    অরিন্দমের কথায়, “তিনি কোনও দিন আমাদের কাছে একজন নক্ষত্র-মানব হতে চাননি। স্বভাবের অনুচ্চকিত সুর চিরকাল তাঁর সৃষ্ট প্রতিটি দৃশ্যপটে প্রকাশ পেয়েছে সাদা-কালোয় রঙিন-আলোয়। কিছু না পেয়ে বা সামান্য কিছু উপকরণে আমাদের মায়েরা যেমন খাবার থালায় নিত্যদিন ম্যাজিক করতে পারেন, ঠিক তেমন ম্যাজিকই দেখাতে পারতেন সৌম্যেন্দু রায়, তাঁর প্রতিটি সেলুলয়েড-ফ্রেমে। স্যর চাইতেন না তাঁর  মৃত্যুর পর কোন স্মরণসভার আয়োজন করা হোক। তিনি বারবার বলতেন, যদি তাঁর কথা মনে রাখতে চায় কেউ, তবে যেন সে বা তাঁরা একা কিংবা মিলিত ভাবে তাঁর, তাঁর সমসাময়িক এবং পূর্বের আলোকচিত্রীদের কাজগুলো মন দিয়ে দেখে, তা নিয়ে আলোচনা করে, তর্ক করে।” 

    সৌম্যেন্দু রায়ের এই ভাবনাকে স্মরণে রেখেই জীবনস্মৃতি আর্কাইভের ‘সৌম্যেন্দু-সিন্দুক’ বিভাগ এবং চিত্রবাণী-র যৌথ উদ্যোগে ৭ অক্টোবর শনিবার ২০২৩ বিকেল ৪.৩০টে থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ টা পর্যন্ত তাঁর চলচ্চিত্র ভাবনা এবং সৃষ্টির ভুবন নিয়ে আড্ডার আয়োজন করা হয়েছে চিত্রবাণী-র নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে। 


    এই আড্ডায় উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ। রূপকলা কেন্দ্রে ২০০২ থেকে ২০১০ পর্যন্ত সৌম্যেন্দু রায়ের সহকর্মী, বর্তমানে সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এণ্ড টেলিভিশন ইন্সিটিউটের শিক্ষক বিরজাপ্রসন্ন কর; সৌম্যেন্দু রায়ের ছাত্র, সহকর্মী এবং বর্তমানে রূপকলা কেন্দ্রের সিনেম্যাটোগ্রাফি বিভাগীয় প্রধান অশেষ মুখার্জীও এই আড্ডায় অংশগ্রহণ করবেন।

    সংগীত নিবেদন করবেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অমিতেশ সরকার। প্রদর্শিত হবে সৌম্যেন্দু রায়ের চলচ্চিত্র যাপন নিয়ে ২০০৭ সালে অরিন্দম সাহা সরদার নির্মিত ৭২ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘সৌম্যেন্দু রায়’। 

    ____________
    জীবনস্মৃতি আর্কাইভের ঠিকানা: ৭০ রাম সীতা ঘাট স্ট্রিট, ভদ্রকালী, উত্তরপাড়া-হুগলি
    দূরভাষ: ৯৮৮৩৯৭৩৬৪৬ 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @