No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    রাজপুত রাজাদের শহর ঝাড়গ্রাম 

    রাজপুত রাজাদের শহর ঝাড়গ্রাম 

    Story image

    বাঙালি চিরকালই ভ্রমণপিপাসু। কেউ ভালোবাসেন গভীর জঙ্গল, কেউ বা খরস্রোতা নদী, কেউ ঐতিহাসিক স্থাপত্য, অথবা কেউ সাংস্কৃতিক পীঠস্থান। এই সব কিছুরই সমন্বয় ঘটেছে ঝাড়গ্রামে। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিজম প্রোজেক্ট কমপ্লেক্সে থাকারও সুবন্দোবস্ত আছে, যার দরজা ইতিমধ্যেই পর্যটকদের জন্য খুলে গিয়েছে লকডাউনের পর। এটি সম্পূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত এবং করোনা-সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি এখানে কঠোরভাবে মেনে চলা হয়। পুজোতে একবার ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ঘুরে আসতেই পারেন।

    ঘন অরণ্য 

    আমাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একেবারে পশ্চিম অংশে ঝাড়গ্রাম জেলার অবস্থান। ঝাড়গ্রাম শহরের উত্তরে বেলপাহাড়ি এবং কাঁকড়াঝোর, দক্ষিণে সুবর্ণরেখা নদী। পাশেই ঘন অরণ্য – শাল, সেগুন, মহুয়া, কেঁদ, নিম প্রভৃতি গাছে ভর্তি। নির্ভয়ে বিচরণ করে বন্য হাতি, হরিণ কিংবা পাখির দল। আরণ্যক প্রকৃতি তার আদিমতা বজায় রেখেছে আজও।

    ঘাগরা জলপ্রপাত 

    জায়গাটির ইতিহাসও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। ষোড়শ শতকের শেষ দিকে, ১৫৯২ সাল নাগাদ মুঘল সম্রাট আকবর তাঁর বীর সেনাপতি মান সিংহকে পাঠিয়েছিলেন এখানে। তখন এই জায়গা পরিচিত ছিল ‘জঙ্গলখণ্ড’ নামে। সাঁওতাল, ভূমিজ, লোধা প্রভৃতি আদিবাসী জনজাতির বাস ছিল। প্রাচীন কাল থেকে আধিপত্য করতেন মাল (মল্ল) রাজা নামে খ্যাত শাসকরা। মান সিংহের বিশ্বস্ত অনুচর, রাজপুতানার দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, সর্বেশ্বর সিং এলাকাটি দখল করে নেন মাল রাজাদের থেকে। প্রতিষ্ঠা করেন নিজের রাজ্য। ঝাড়গ্রাম শহরকে রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলেন। তিনি ‘মল্লদেব’ উপাধি গ্রহণ করেন, যা তাঁর বংশধরেরাও ব্যবহার করতেন। 

    অরণ্যপথ 

    মান সিংহ ফিরে যান রাজপুতানায়। কিন্তু সর্বেশ্বর সিং এখানেই রয়ে যান। এইভাবে ঝাড়গ্রামে শুরু হয় রাজপুত রাজাদের শাসন।

    ঝাড়গ্রাম ভ্রমণ 

    সেই ফেলে আসা যুগের স্মৃতি আজও খুঁজে পাওয়া যায় ঝাড়গ্রাম শহরে, বিশেষ করে রাজবাড়িতে। ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে মোটামুটি ৩ কিলোমিটারের মধ্যেই প্রাসাদ। এক তলায় গড়ে উঠেছে গেস্ট হাউজ। বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমায় দেখা গিয়েছে এই রাজবাড়ি। যেমন ‘সন্ন্যাসী রাজা’ কিংবা ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’। গেস্ট হাউজের পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থা। প্রাসাদের বাকি অংশ দেখতে অবশ্য বিশেষ অনুমতি নিতে হতে পারে।

    ঝাড়গ্রামের অবস্থান  

    ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কনকদুর্গা মন্দির। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে সুবর্ণরেখার উপনদী ডুলুং। ধলভূমের রাজাদের ইতিহাস খুঁজে পাবেন চিল্কিগড় প্রাসাদে। তাঁদেরই একজন কনকদুর্গা মন্দির স্থাপন করেছিলেন। দুর্গামূর্তিতে আদিবাসী প্রভাব খুব স্পষ্ট। মন্দির ঘিরে গভীর অরণ্য। প্রায় ৪০০ রকমের ভেষজ উদ্ভিদ মেলে সেখানে।

    ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি 

    ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ছোটো কিন্তু সুন্দর এক চিড়িয়াখানা। পাখি, বাঁদর, ভালুক, কুমির-সহ নানা প্রজাতির সরীসৃপ, বিভিন্ন ধরনের হরিণ দেখতে পাবেন। শিশুরা দেখে খুব মজা পায়। ঝাড়গ্রাম এবং চিল্কিগড়ের মাঝখানে কেন্দুয়া পাখিরালয়। দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর পাখি এখানে আসে। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা হয়। বিশেষ করে বর্ষার শুরুতে অনেক পাখির দেখা পাবেন। 

    ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিজম প্রোজেক্ট
     

    কীভাবে যাবেন
    রেলপথে গেলে হাওড়া স্টেশন থেকে পৌঁছতে হবে ঝাড়গ্রাম স্টেশনে। সময় লাগবে আড়াই-তিন ঘণ্টা। সড়কপথে গেলে জাতীয় সড়ক ৬ (মুম্বাই-কলকাতা মহাসড়ক) ধরবেন। ঝাড়গ্রাম শহরে যেতে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। এখন সড়কপথে যাওয়াই সুবিধাজনক।
    কোথায় থাকবেন
    বন্ধুবান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজন নিয়ে কয়েকদিন নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিজম প্রোজেক্টে। ফোন করতে পারেন ৭৪৭৭৪২৪৮৫৪ নম্বরে। প্রয়োজনে যোগাযোগ –
    DG Block, Sector-II, Salt Lake
    Kolkata 700091
    Phone: (033) 2358 5189,
    Fax: 2359 8292
    Email: visitwestbengal@yahoo.co.in,
    mdwbtdc@gmail.com,
    dgmrwbtdc@gmail.com

     

    ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিজম প্রোজেক্টের অবস্থান

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @