No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    জয়নগরের ছাঁচের পুতুল – পাঁচুগোপাল দাসের এই ট্র্যাডিশন আজ কি অবলুপ্তির পথে?

    জয়নগরের ছাঁচের পুতুল – পাঁচুগোপাল দাসের এই ট্র্যাডিশন আজ কি অবলুপ্তির পথে?

    Story image

    ছাঁচে বানানো পুতুলের অমন নিটোল গড়ন বাংলার বাকি দশ মহল্লার পুতুলের থেকে জয়নগর মজিলপুরের পুতুলকে আলাদা করে দেয়। হাতে টেপা পুতুলের সারল্য বা কৃষ্ণনগরের পুতুলের ছবি স্বভাবের থেকে এ পুতুলের রং, গোলানো চেহারা কালীঘাটের চলনে পুতুলের গায়ে রেখাকর্ম একেবারেই একটা অন্য আমেজ তৈরি করে। মন্মথ দাস, পাঁচুগোপাল দাসের এই ট্র্যাডিশন আজ প্রায় অবলুপ্তির পথে। দু’জনের কেউই আজ নেই।

    দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মজিলপুরের বোস পাড়া। এই অঞ্চলের এক বাড়িতে জন্ম পাঁচুগোপাল দাসের। সহজ সরল আন্তরিক ছিলেন মানুষটি। যেন নিজেই নিজের মধ্যে বিভোর থেকেছেন চিরকাল। তিনি ছিলেন মাটির মানুষ, মাটির গন্ধ তাঁর সারা শরীরে, পুতুল গড়েছেন মাটি দিয়েই। আপাদমস্তক শিল্পী। লোকে চিনত বাবু নামে। একসময় দুর্গার মূর্তিও গড়তেন নিজস্ব ধারায়। 

    মজিলপুরে পাঁচুবাবুর বাড়ি 


    পুতুল ও ঠাকুর গড়া শুরু তাঁর কাকার হাত ধরে। কাকা মন্মথ দাসের হাতে পুতুলের অধিকাংশ ছাঁচ তৈরি। এত পাতলা মাটির চাদরের ছাঁচ প্রায় দেখতেই পাওয়া যায় না। কাকা গড়তেন। তা দেখে দেখেই শেখা। যদিও হাতে ধরে শেখাননি কখনও। কাকা মন্মথনাথ প্রায় একশো পাঁচটা পুতুলের ছাঁচ করেছিলেন।  

    অনেক কিছু ছাঁচ ছিল। যেমন নারায়ণ, শিব, মাতাল শিব, কালী, নন্দী-ভৃঙ্গী, কালীয়-দমন, রাধাকৃষ্ণ, সরস্বতী, কৃষ্ণকালী, বরাহ অবতার, জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা, গণেশ, জগদ্ধাত্রী, গণেশ জননী, যশোদা। এ ছাড়া বেনে, বেনে বউ, বাবু-বিবি, পিওন, মুন্সি, মেম, গোয়ালা বউ, সেপাই, বুড়োবুড়ি, মাতাল, সিংহ, বেড়াল, ঘোড়া, গরু, হাতি, বুলবুলি, টিয়া থেকে কাকাতুয়ার মতো পশুপাখি। অনেক ছাঁচ নষ্ট হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন না ব্যবহারের ফলে নোনা ধরে গেছে বেশ অনেকগুলোয়।

    বেড়াল এবং মনসা 

    আমাদের বাংলায় তো নানা পদ্ধতির পুতুল গড়া হয় যেমন শিলেট, হিংলি বা মুখোশ পুতুল। তুলনায় জয়নগরের পুতুল গড়ার পদ্ধতিটা একটু অন্যরকম। এই পুতুলের ভেতরটা ফাঁপা। যার কাঠামো দু’ভাগে তৈরি করে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সবাই যা করে। দেবদেবী ও প্রতিমা হয় কাঁচামাটির পুজো হয় তো, তাই পোড়ানো হয় না। শুকিয়ে রং করা হয়। পুতুল অবশ্য ভালোভাবে পোড়ানো হয়। রং করার পরে লাগানো হয় রজন ও গর্জন তেল গরম করে তার প্রলেপ, চকচকে করার জন্য।

    এই পুতুলের আঁকা চোখ কলকাতা থেকে কিছুটা আলাদা। মূলত নিমপাতা, বাঁশপাতা বা পটলচেরা চোখ এরকম বাংলার চিরাচরিত প্রথা মেনে চলে আসছে। পাঁচুগোপাল দাসের সেজো ঠাকুরদা হরনাথ দাস এই চোখ আঁকতে শুরু করেন। অসাধারণ চোখ আঁকতেন তিনি। গড়নে কালীঘাট পটের ছোঁয়া ছিল। অনেকেই অবাক হতেন কালীঘাট পটের সঙ্গে এত মিল দেখে। 

    পিওন এবং ষষ্টি পুতুল 

    এই ধারায় পুতুল তো আছেই, পাশাপাশি বাংলা লৌকিক দেবদেবীও করেছেন। বাংলার লৌকিক দেবদেবী যা প্রায় শহরের মানুষরা দেখতেই পান না। আসলে শহরাঞ্চলে লৌকিক দেবদেবীর সেভাবে পুজোর প্রচলন নেই। দক্ষিণরায়, বনবিবি, নারায়ণী আটেশ্বর, পঞ্চানন্দ, বড় খাঁ গাজি, বসন্ত রায়, পীর গোরাচাঁদ, ঝোলা বিবি, শীতলা, কালুরায় আরও অনেক আছে। লৌকিক দেবদেবী গড়ার কারণ রয়েছে। আসলে লৌকিক দেবতারা গ্রামাঞ্চলে পুজো পান। সব মিলিয়ে বাংলার পুতুলের এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছিল জয়নগর মজিলপুরের ছাঁচের পুতুল। ২০১০ সালে প্রয়াত হন পাঁচুগোপাল দাস।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @