জঙ্গলমহলের বাহামনি, টুসু, টগর : যাঁদের হস্তশিল্প আজ বিশ্বজনীন

বাংলার পশ্চিম দিকে বিস্তীর্ণ অরণ্য অঞ্চল ছোটনাগপুরের মানভূম জুড়ে বিস্তৃত। ওই অঞ্চলের অধিবাসীদের স্বাধীনচেতা ভাব ও স্বাতন্ত্র্যরক্ষার অভিলাষ মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দিত। এঁরা ছিলেন দৃঢ়, সাহসী, ছোটো ছোটো এলাকায় সর্দার দ্বারা শাসিত। বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণ অঞ্চলের দুর্গম পরিবেশে যে ছোটো ছোটো অসংখ্য স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব হয়েছিল, জঙ্গলমহল (Jangal Mahal) অঞ্চল ছিল যেন তারই প্রতিচ্ছবি।
দৃঢ়, স্বাধীনচেতা এই মানুষগুলো মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের। ভাঙা জমি, টাঁড়, অরণ্যঘেরা জঙ্গল জুড়ে তাঁদের বসবাস। হাতের কাজে পারদর্শী আট থেকে আশি প্রায় প্রত্যেকেই। এবছর রাজ্য হস্তশিল্প মেলার (State Handicraft Fair) অন্যতম প্রধান আকর্ষণ জঙ্গলমহলের স্টল। সেখানে আদিবাসী মহিলারা (Tribal Woman) এসেছেন মেদিনীপুর (Midnapore)-পুরুলিয়ার (Purulia) জঙ্গলমহল থেকে, হাতের কাজের পসরা সাজিয়েছেন। তাঁরা বাহামনি, টুসু, টগর। বাহামনি আর টগর মাঝবয়সী, টুসু স্কুল পড়ুয়া। পড়াশোনার পাশাপাশি বেত, ঝাঁটার নানান কাজে সাহায্য করেন পরিবারকে। কয়েকদিন স্কুল ছুটি নিয়ে এসেছেন কলকাতা। হস্তশিল্প মেলায় বিকিকিনি হলে সংসার স্বচ্ছল হবে। হচ্ছেও। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে জঙ্গলমহলের ছবিটা পুরো পাল্টে গিয়েছে। দিন আনি দিন খাই-এর সংসারে হাসি এসেছে। শুধুমাত্র হস্তশিল্প মেলায় বিক্রির জন্য নয়, রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা বিশ্ব বাংলার বিপননি থেকেও সারাবছর বিক্রি হচ্ছে তাঁদের হাতের তৈরি কাজ। এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
দৃঢ়, স্বাধীনচেতা এই মানুষগুলো মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের। ভাঙা জমি, টাঁড়, অরণ্যঘেরা জঙ্গল জুড়ে তাঁদের বসবাস। হাতের কাজে পারদর্শী আট থেকে আশি প্রায় প্রত্যেকেই। এবছর রাজ্য হস্তশিল্প মেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ জঙ্গলমহলের স্টল।
জঙ্গল ঘেরা পুরুলিয়ার অযোধ্যা, বাঁকুড়ার রানিবাঁধ-ঝিলিমিলি, সারেঙ্গা, তালড্যাংরা-বিক্রমপুর, শালবনি, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুরের কিছু অংশ জুড়ে বিস্তৃত জঙ্গলমহল। অর্থনৈতিকভাবে সামান্য পিছিয়ে থাকলেও শিল্পসামগ্রী তৈরিতে তাঁরা অন্যান্য জেলার চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। জঙ্গলমহলের হস্তশিল্পীদের তৈরি রকমারি জিনিসপত্র দেশ-বিদেশের ক্রেতাদের নজর কাড়তে শুরু করেছে। বিশ্ব বাংলা বিপণন কেন্দ্রগুলির হিসাব বলছে, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকার বিক্রি রয়েছে।
বাঁশ, বেত, ঘাস, কাঠ-সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ঘর সাজানো এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সামগ্রী তাঁরা তৈরি করেন কীভাবে? বঙ্গদর্শনের ক্যামেরায় উঠে এল তাঁদের কর্মপদ্ধতি।
____
রিপোর্টিং – সুমন সাধু