No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    রাজ্য বনদপ্তরের সাফল্য এবার বাঁকুড়া জেলার জয়পুর অরণ্যে - আরও বাড়ল অরণ্যের গভীরতা

    রাজ্য বনদপ্তরের সাফল্য এবার বাঁকুড়া জেলার জয়পুর অরণ্যে - আরও বাড়ল অরণ্যের গভীরতা

    Story image

    বিষ্ণুপুর আর জয়রামবাটির ঠিক মাঝখানে জয়পুর (Jaipur forest)। একদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, অন্যদিকে ইতিহাসের পদধ্বনি। এই দু’য়ের টানে ছুটির মরশুমে পর্যটকদের ঢল নামে বাঁকুড়ার (Bankura) জয়পুরে। এখানে বিশাল এলাকা জুড়ে শাল, মহুল, পিয়াল, বহেড়া আর হরিতকির জঙ্গল। হরিণ, ময়ূর, বুনো শুয়োর, হাতিদের অবাধ বিচরণ জয়পুরে। পাশাপাশি রয়েছে বাঁকুড়া জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বাঁধও। অসাধারণ এই সবুজের টানেই শুধু শীতকাল নয়, প্রায় সারা বছরই এখানে হাজির হয় অসংখ্য পাখির ঝাঁক। এছাড়াও  ৬হাজার ৩৩১ হেক্টর জায়গা নিয়ে এই বনাঞ্চলে ভাগ্য সহায় হলে দেখা মিলতে পারে দলমার দাঁতালদের। 

    গত কয়েক বছর ধরেই রাজ্য বনবিভাগের তরফে বৃক্ষরোপণ উদ্যোগ নেওয়া হয় জয়পুর অরণ্যে। পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত গাছগুলিকে পুনঃস্থাপনও করা হয়েছে। অন্যদিকে অরণ্যের গভীরতা বাড়াতে বনকর্মীদের উদ্যোগও অনেকাংশে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের বনবিভাগের(Forest Department) পক্ষ থেকে একটি ফেসবুক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “লাগাতার প্রচেষ্টায় লাল মাটিতেও আরও বেড়েছে সবুজের পরিধি। ‘সবুজ বাড়াও’ সরকারি উদ্যোগেরসাফল‍্য প্রতিফলিত হয়েছে বাঁকুড়া জেলার এই অরণ্যে।”

    জয়পুর অরণ্যের সবথেকে বড়ো বৈশিষ্ট্য হল, শাল ও সেগুনের গুণগত মান এখানে অন্যান্য অনেক অরণ্যের চেয়েই বেশি। শোনা যায়, কেউ কেউ নাকি সুন্দরবন (Sundarban) অরণ্যের গভীরতার সঙ্গে তুলনা করে থাকেন বাঁকুড়ার জয়পুর অরণ্যকে। কারণ একটাই, এই বনাঞ্চলে এমন কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে জঙ্গল এতটাই ঘন ও গভীর যে সূর্যের আলোও মাটিতে পৌঁছাতে পারে না।

    ফেসবুক বিবৃতিতে আরও জানা গিয়েছে, বর্তমানে জয়পুর অরণ্যে নির্দ্ধিধায় ঘুরে বেড়ায় চিতল হরিণের দল। গত কয়েক বছরে এদের সংখ্যাও তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি সম্ভভপর হয়েছে মূলত জয়পুর অরণ্যের বনকর্মীদের সহায়তায়। হরিণদের নিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে কড়া নজরদারি জারি রেখেছেন তাঁরা। এছাড়াও হাতির পালের দেখা মেলে প্রায়শই। অরণ্যের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল দিয়েই যাতায়াত তাদের। পাশাপাশি বুনো শেয়াল ও নেকড়ে সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীরও সহাবস্থান নজরে পড়ে জয়পুর অরণ্যে, এমনটাই জানানো হয়েছে রাজ্য বনবিভাগের তরফে।

    সম্ভবত আমাদের রাজ্যের পশ্চিম অংশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জীবজন্তু রয়েছে এখানে। বিশেষ করে বন্যপ্রাণী। তবে বেড়াতে যাওয়ার আগে বিশেষ সতর্কবার্তা মাথায় রাখা প্রয়োজন। বনদপ্তর এবং পর্যটন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তবেই যাবেন। সঙ্গী ছাড়া জঙ্গলে ঢুকবেন না। লোকাল গাইড না থাকলে, গাড়িতে বসেই প্রকৃতির শোভা দেখুন। চোখে পড়বে হরিণের ঝাঁক এবং হাতির দল। আর আছে নানান পাখির কোলাহল। সকাল ও সন্ধেতে তাদের কলরবে জয়পুর অরণ্য মেতে ওঠে উচ্ছ্বাসে, জয়গানে। কপালে থাকলে বিরল প্রজাতির ঝুঁটিয়াল চটক এবং কালো তিতিরের দেখাও মিলতে পারে। রাতে হোটেলে বসে যখন জঙ্গল থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া আরও অজানা কিছু আওয়াজ শুনতে পাবেন, তখন মনের মধ্যে যে রোমাঞ্চ আসবে, সেটির অনুভূতি পেতে সপ্তাহান্তে ঘুরে আসুন বাঁকুড়ার জয়পুর জঙ্গল।

    কীভাবে যাবেন?

    কলকাতা থেকে জয়পুর জঙ্গলের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন বিষ্ণুপুর (Bishnupur)। স্টেশন থেকেই মিলবে ভাড়া গাড়ি অথবা ট্রেকারের সুবিধা। তাতে করে পৌঁছে যেতে পারেন ১২ কিমি দূরে অবস্থিত কাঙ্খিত জয়পুর জঙ্গলে। এছাড়াও বাসে যেতে চাইলে এসপ্ল্যানেড (Esplanade) থেকে বিষ্ণুপুরগামী বাসে করে পৌঁছে যেতে পারেন জয়পুর। আবার সরাসরি কলকাতা (Kolkata) থেকে প্রাইভেট গাড়ি নিয়েও যেতে পারেন অরণ্য ভ্রমণে। পৌঁছাতে প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগবে।

    কোথায় থাকবেন?

    ২০০৫ সালে বন দফতরের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে অন্যরকম একটি পাঁচতলা ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ারটির পাঁচতলা ও নীচের তলা ছাড়া বাকি তলায় রয়েছে তিনটি স্যুট। এই স্যুটগুলোয় থাকলে জঙ্গল ঘিরে থাকবে পর্যটকদের। পাখিদের যাওয়া আসা, সমুদ্র বাঁধে হাতিদের হুল্লোড় সবই দেখতে পাবেন ঘরে বসে।  তবে ওয়াচ টাওয়ারে থাকতে হলে আগে থেকে বনদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন। ওয়াচটাওয়ার থেকে বেলাশেষের সূর্যের লালচে আভা সবুজ বনানীর ওপর যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন সমগ্র চরাচর জুড়ে অস্তরাগের সুর-মূর্ছনা লাগে। তেমনই সূর্যোদয়ও অপূর্ব লাগে এখান থেকে। এছাড়াও আছে বনলতা রিসর্ট, বিষ্ণুপুরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিস্টলজেও থাকতে পারেন। জয়পুর জঙ্গলের কাছাকাছি আরও অনেক বেসরকারি রিসর্ট, লজ মিলবে সহজেই।

    সরকারি থাকার জায়গা পেতে, অনলাইন বুকিং করতে পারেন - www.wbtdc.com, এই ওয়েবসাইট থেকে।

    পর্যটকদের জন্য সারা বছরই উন্মুক্ত থাকে জয়পুর। তবে জয়পুর ফরেস্ট দেখার সেরা সময় হল শীত ও বসন্ত। জয়পুর বনের আশেপাশে রয়েছে আরও অনেক পর্যটন আকর্ষণ। বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর, তালবেড়িয়া, ঝিলিমিলির, জয়রামবাটি, শুশুনিয়া পাহাড়ের মতো অনেক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে কাছেই। একদিকে প্রকৃতি এখানে সদা হাস্যময়ী, অন্যদিকে ঐতিহাসিক স্থাপত্যের প্রেক্ষাপট সপ্তাহান্তের ভ্রমণকে মুখরিত করে তুলবে নিশ্চিত।

     

    সোর্স – রাজ্য বনবিভাগের ফেসবুক পেজ।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @