No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ২৫ শে মে, ১৮৮৭ প্রবল ঝঞ্ঝায় ৭৫০ জন যাত্রী নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেল ম্যাকলিন কোম্পানির গর্ব সার জন লরেন্স।

    ২৫ শে মে, ১৮৮৭ প্রবল ঝঞ্ঝায় ৭৫০ জন যাত্রী নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেল ম্যাকলিন কোম্পানির গর্ব সার জন লরেন্স।

    Story image

    তখন সমুদ্র পথে যেতে হত বালেশ্বর। আর সেখান থেকে ফের জলপথে কটক হয়ে পালকি-ডুলিতে জগন্নাথ দর্শনে পুরী যাওয়াই ছিল দস্তুর। কারণ অতটা রাস্তা জুড়ে তখনও রেলগাড়ি যাওয়ার ঝম ঝমে রেওয়াজ তৈরি হয়নি। আর তাই পুণ্যলোভাতুর যাত্রীদের সমুদ্র পথে বালেশ্বর নিয়ে যাওয়ার জন্য যাত্রী পরিবহনের ব্যবসা ফেঁদে বসলো গণ্ডা কয়েক বিদেশি কোম্পানি। তাদেরই একটি হল ‘ম্যাকলিন অ্যান্ড কোম্পানি।’ ইংলিশম্যান কাগজে তারা ফলাও করে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করত তাদের জাহাজি বাহাদুরির কথা। কাঙ্খিত পুণ্যের ইচ্ছাপূরণে তারাই যে কাণ্ডারি একথা তারা বুঝিয়ে দিতেন শব্দের মায়া জালে। বাবুবাড়ির দেওয়ান মুৎসুদ্দিরা চশমা এঁটে দৌড়তেন ‘বাষ্প জাহাজ’-এর টিকিট কাটতে। কোনও বাড়ির বড় বউমা যাবেন পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে তো কোনও বাড়ির বিধবা পিসিমা উড়ে চাকরটিকে সম্বল করে যাবেন চক্রতীর্থ। এ রকমই এক যাত্রা কালের বিধির বিধানের একটি ফলক সবার অলক্ষ্যে পড়ে আছে গঙ্গার ঘাটে। হাওড়া ব্রিজের তলায় ফুলবাজারের ব্যস্ত কোলাহল পথে প্রায় অজানা একটি ঘাট হল ছটুলাল-দুর্গাপ্রসাদ ঘাট। তারই এক সিঁড়ির কোণে আবছা ফলকে পূর্ণ যাত্রীর বিধির বিধান। এক জাহাজ ডুবির মর্মান্তিক কাহিনি।

    ২৫ শে মে, ১৮৮৭ প্রবল ঝঞ্ঝায় ৭৫০ জন যাত্রী নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেল ম্যাকলিন কোম্পানির গর্ব সার জন লরেন্স। যাত্রীদের অধিকাংশই মহিলা। এ দিকে প্রায় প্রত্যেকদিন দুর্যোগের হুঁশিয়ারি। জাহাজিরা সে কথায় কর্ণপাত করল না। গর্বের অহংকার সাগরকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে জাহাজ কয়লাঘাট থেকে রওনা দিয়ে দিল রাতের বেলা। তার পর...!!! তার পর প্রত্যাশিত ফেরার দিনে জাহাজ ফেরে না। দিন যায় জাহাজ ফেরে না। শুরু হয় লোক জমায়েত। জাহাজ কোম্পানি ক্যাপ্টেন আরভিং এর সাহসিকতার প্রচার করে জানায়, এমন ক্যাপ্টেন যে জাহাজের সে জাহাজ তো ফিরবেই। সে নাকি বছর বারো-তেরো আগে গঞ্জামে ঝড়ের সাথে লড়াই করা বাহাদুর। কিন্তু ২৭মে একটি টেলিগ্রাম এলো। চাঁদবালীর স্টিমার অফিস থেকে লেখা হল ‘সার জন লরেন্স’ এখনও সেখানে নোঙর করেনি। ম্যাকালিন কোম্পানি তাতেও কান না দিয়ে জন লরেন্স জাহাজের পরবর্তী যাত্রার বিজ্ঞাপন দিয়ে দিল। ভাবখানা এমন যেন কিছুই হয়নি। এ রকম ভাবে কেটে গেল আরও কটা দিন। কিন্তু ২রা জুন ১৮৮৭ ইংলিশ ম্যান পত্রিকা যে খবরটি লিখল তাতে বোঝা গেল সব শেষ। রেসলিউট নামের একটি জাহাজ কলকাতায় ফেরার পথে সাগর মোহানায় দেখতে পেয়েছে ভাসমান মৃতদেহের সারি। যাদের বেশির ভাগ স্ত্রী-লোক। তোলপাড় হল কলকাতা। রবীন্দ্রনাথ কবিতা লিখলেন ‘সিন্ধুতরঙ্গ।’ খামখেয়ালিপনার এমন পরিণতির লজ্জা ইংরেজ রমণীদেরও বিচলিত করল। হাজার হোক তারাও এ শহরেই থাকেন। ওদিকে জাহাজ কোম্পানির শোক প্রকাশ দূরে থাক, চলল আবার বিজ্ঞাপন। আর তখন একদল ইংরেজ রমণী হতভাগ্য জাহাজ যাত্রীদের স্মরণে গঙ্গার ঘাটে লাগিয়ে এলেন এই ফলক।  তাতে লেখা –“ইং ১৮৮৭ সালের ২৫-এ মে তারিখের ঝটিকাবর্ত্তে সার জন লারেন্স বাষ্পীয় জাহাজের সহিত যে সকল তীর্থ যাত্রী, অধিকাংশ স্ত্রীলোক, জলমগ্ন হইয়াছেন তাহাদিগের স্মরণার্থে কয়েকটি ইংরাজ রমণী কর্তৃক এই প্রস্তর ফলকখানি উৎসর্গীকৃত হইল।”  পাশে কথাগুলির ইংরেজি তর্জমা।

    “This stone is dedicated by a few English-women to the memory of those pilgrims, mostly women, who perished with ‘Sir John Lawrence’ in the cyclone of 25th May 1887.”

    আজ পাথর আবছা হয়েছে, রঙের ছোপ পাথরের গায়ের আবছা লেখনীকে ঢাকতে চলেছে। ব্যস্ত পথচারী বা স্নান যাত্রীর সেদিকে ফিরে তাকানোর অবকাশ নেই। কিন্তু কলকাতা আজও বুকে ধরে রেখেছে এই কান্না ভেজা পাথরটিকে।

    ছবি : চন্দন ভৌমিক

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @