No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    দেখলাম গ্রাফিক নভেল, পড়লাম সিনেমা

    দেখলাম গ্রাফিক নভেল, পড়লাম সিনেমা

    Story image

    ‘ভয় নেই এমন দিন এনে দেব/ বোমারু জঙ্গি যত বিমানের ঝাঁক থেকে/ বোমা নয়, গুলি নয়, চকলেট, টফি রাশি রাশি/ প্যারাটুপারের মত ঝরবে/ শুধু তোমারই, তোমারই উঠোন জুড়ে প্রিয়তমা’। কবীর সুমনের এই গান দৃশ্যে রূপান্তরিত হল।  সন্ত্রাসক্লান্ত ‘প্রিয়তমা’ পৃথিবীতে একে ফর্টি সেভেন-এর বদলে ঝরে পড়ল কেক-পেস্ট্রির বাক্স। শিশুরা ছুটে এল, মুখে তাদের অনাবিল হাসি। সারা পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষের স্বপ্নের জয় হল। রচিত হল এক মহৎ দৃশ্যকাব্য। অনুরাগ বসুর ‘জগ্‌গা জাসুস’-এর এই মুহূর্ত মনে রেখেই পড়ব সিনেমাটিকে।

    ১৯৯৫-এর পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণের মতো ঘটনা দিয়ে ছবির শুরু। তারপর সমগ্র ছবিতেই দুটি ক্ষমতার বিস্তার। একটিতে জগ্‌গা তাঁর পালক পিতাকে খুঁজে চলেছে। ময়নাগুড়ির অনাথ জগ্‌গা  মানুষ হচ্ছিল হাসপাতালে। ঘটনার ফেরে সেখানেই সে খুঁজে পায় তার টুটিফুটিকে। জগ্‌গা  কিছুতেই তার সঙ্গে কথা বলে না। কারণ কথা বলতে গেলেই সে তোতলায়। টুটিফুটি তাকে শিখিয়ে দেয় গানে গানে কথা বলতে। তাঁর যুক্তি আমরা যখন কথা বলি মস্তিষ্কের বাম দিক তখন সক্রিয় থাকে। আর ওই দিকটি যুক্তি নির্ভর। যুক্তি বাধা পেতে পারে। কিন্তু গান আসে মস্তিষ্কের ডান দিক থেকে আর ওই দিকটি আবেগ নির্ভর। আবেগকে বাধ মানানো যায় না। ছোট্ট জগ্‌গা  তাই গানে গানে কথা বলে। টুটিফুটির এই লজিকেই ‘জগ্‌গা  জাসুস’ হয়ে উঠেছে ‘মিউজিক্যাল থ্রিলার’। হাসপাতাল থেকে মণিপুরে নিয়ে গিয়ে জগ্‌গা কে বড় করতে থাকে টুটিফুটি। কিন্তু এক সময় বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। জগ্‌গা  বড় হতে থাকে হোস্টেলে। আর টুটিফুটি কোথায় হারিয়ে যায় কেউ জানে না। কেবল জগ্‌গা প্রতি জন্মদিনে ‘বাবা’ টুটিফুটির কাছ থেকে পোস্টে পায় একটি ক’রে ভিডিও ক্যাসেট, বিভিন্ন দেশ থেকে। নানা ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে জগ্‌গা কে জানানো হয় টুটিফুটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ততদিনে ‘জাসুস’ হয়ে ওঠা জগ্‌গা  সে কথায় বিশ্বাস করে না। শুরু হয় তার বাবাকে খোঁজা।

    আর এই ছবির শিরায় শিরায় চাগিয়ে ওঠা দ্বিতীয় ক্ষমতা হল সারা পৃথিবীতে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিতে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কার্যকলাপ। টুটিফুটি এই অন্ধকার জগতকে সকলের সামনে তুলে ধরতে আর অস্ত্র-চক্রের মূল পাণ্ডার নাগাল পেতে নিজেও জড়িয়ে যায় এসবের সঙ্গে।

    ছবির এই দুই ফোর্স-এর কথক এক মহিলা সাংবাদিক। জগ্‌গা জাসুসের কমিকস বাচ্চাদের পড়াতে পড়াতে তুলে ধরে তার বড় হয়ে ওঠা এবং গোয়েন্দা হয়ে ওঠার গল্প। জগ্‌গা র সঙ্গে তার যোগাযোগ এবং শেষ পর্যন্ত জগ্‌গা র আপাতত শেষ অভিযান টুটিফুটিকে খুঁজে ফেরাতেও জড়িয়ে পড়ে সে। গ্রাফিক্সের দুনিয়া আর বাস্তব দুনিয়ার মধ্যে কবিতাময় সংযোগ গড়ে ওঠে ছোটদের গানে-নাচে। সিনেম্যাটোগ্রাফি, ফ্রেমিং, অ্যানিমেশন, ল্যান্ডস্কেপ, সব যেন একসাথে হাত ধরে গড়ে তুলেছে এই দৃশ্যকাব্যটি। মনে হল, একটি গ্রাফিক নভেলের পাতায় চোখ রেখেছি। তবে নভেলটি কি আরেকটু আগেই শেষ হতে পারতো না? এই জিজ্ঞাসা রয়েই গেল।

    বহুস্তরীয় দৃশ্য তৈরি করতে নিপুণ মেধায় টাইম আর স্পেসকে নিয়ে ভাঙচুর করেছেন পরিচালক অনুরাগ বসু। আর তাঁর ভাবনাকে রূপ দিতে গিয়ে নিজের অভিনয়কে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন রণবীর কাপুর, বলতেই হয় হ্যাটস অফ। টুটিফুটির ভূমিকায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা বেশ দীর্ঘ। বলিউডে এত দীর্ঘ রোলে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ফের প্রমাণ করেছেন তিনি। পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় রজতাভ দত্তর কমেডি টাইমিং সেন্স চোখে পড়ার মত। আর অনুরাগের ছবি মানেই আরেকজনের প্রায় অনিবার্য উপস্থিতি। তিনি সৌরভ শুক্লা। এবারও নেগেটিভ ও কমেডি রোলে নিজের জাত চেনালেন সৌরভ। আর এতজন সু-অভিনেতার সঙ্গে কাজ করলেও ক্যাটারিনার অভিনয়ে খামতি বারবার নজরে এল।

    বাস্তবকে সঙ্গে নিয়ে এ ছবির গল্প চারিয়ে গেছে কখনও রূপকথার ‘অতিমানবিকতায়’। কিন্তু কখনোই হারিয়ে যায়নি। বরং রূপকথার আতিশয্যকে লেন্স বানিয়ে এক ধরণের ‘জাসুসি’ চালিয়েছে সন্ত্রাসবাদের বাস্তবতায়। তাই অতিনাটক এই ছবির শক্তি, আর শৈশবের সারল্য এই ছবির সম্পদ।  

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @