No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ইতি জন্মকথা

    ইতি জন্মকথা

    Story image

    প্রত্যেকটা বাড়ির একটি নিজস্ব গল্প থাকে। আর আমরা সেসব গল্প পেরিয়ে একটা উঠোনের সামনে এসে দাঁড়াই, ভেজা ভেজা মাটি পায়ের ছাপ স্পষ্ট থেকে ক্রমশ স্পষ্টতর হচ্ছে... এ-বাড়ির ভিত খুব কাঁচা, অথচ এত ঝড়ঝাপটার পরও কেউ টলাতে পারেনি আমাদের সংসার। ঠেলতে ঠেলতে এতদূর নিয়ে এসেছি, ঘন কালো মেঘ জমলে বাবার মুখ অন্ধকার হয়ে যায়, মা ঠাকুরের নাম করতে থাকে। আমিও এমন উজবুক,  বেকার জীবনযাত্রায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে লিখতে শুরু করলাম আমাদের বাড়ির গল্প...


    কোনও এক রাতে আমাদের বাড়ি কারেন্ট চলে গেল। বাকি সব বাড়িতে আলো জ্বলছে ,আমাদের ঘরগুলি অন্ধকার। বাবা বলল, ঝোড়ো হাওয়ায় তার ছিঁড়ে গেছে। মা বাতাস করতে করতে আমাদের খেতে দিল। হ্যারিকেনের আলোয় আমরা পরস্পর অন্ধকার ভাগাভাগি করে খেলাম। ভাগ করতে গিয়ে দেখলাম, বাবার পাতে অন্ধকার বেশি পড়ছে, মা'র যতটুকু আলো ছিল আমার পাতে বেড়ে দিল। আমি সেই আলো-অন্ধকার থেকে নিজেকে আলাদা করে নিলাম। বৃষ্টি শুরু হল, দাওয়ায় বসে মা-বাবার গল্প শুনতে শুনতে মনে পড়ে গেল সবুজ ফড়িং-এর কথা। সবুজ ফড়িং প্রথম দেখেছিলাম ক্লাস এইটে, জানলার শিকে বসে চুপচাপ আড়চোখে দেখে যাচ্ছিল আমার গতিবিধি। আপনারা ভাবছেন, এবার সেই ফড়িং-এর কথা বলব, কিন্তু ফড়িং আমায় কোনওদিন টানেনি। কেননা রাতের অন্ধকারে ফড়িং ঘরে এসে বরাবর আমার মনঃসংযোগ নষ্ট করে গেছে, তারপর থেকে কারেন্ট চলে গেলে আমি বাবার কাছে তাঁর ছোটবেলায় ফড়িং ধরার গল্প শুনি... আর এসব শুনে মা মধ্যে মধ্যে মৃদু হেসে ওঠেন...


    পকেট থেকে আগুন চুরি হয়ে গেছে ট্রেনে ফেরার পথে। আগুন চোর কোনও এক ম্যাজিশিয়ান, যার কাছে আলো নেই। এই ভেবে তাকে আর খুঁজিনি, ভিড়ে। বাসায় ফিরে বাবার ঝোলানো জামার পকেট থেকে দেশলাই খুঁজে পাই। ছাদে উঠে একটা সিগারেট ধরাই, আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় অসংখ্য ম্যাজিশিয়ান ভিড় করে আছে। আগুনের ঋণে কে যে কার বন্ধু হয়ে যায়, কে বলতে পারে?


    ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে একটাই খাট ছিল। তিনজন এক খাটে পরস্পরকে ছুঁয়ে ঘুমাতাম। আমি মধ্যিখানে, বাঁদিকে বাবা, ডানদিকে মা। ঘুমাতে ঘুমাতে হঠাৎ বাবার দিকে কাত হয়ে গেলে পরক্ষণে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতাম মাকে... মা-বাবার এই ফাঁকটুকু আগে বুঝলে কখনওই দখল করতাম না! যেদিন থেকে অন্য বিছানায় শুতে বলা হল, বুঝলাম বড় হয়ে গেছি। আর বড় হতে হতে বুঝেছি আমাদেরও এরকম কোনও ফাঁক তৈরি হলে ভরিয়ে দেবে সন্তান...


    ছোট থেকেই জলে ভয়, অথচ সমুদ্র দেখেছিলাম ‘জল’ বলতে শেখার আগেই। লোকজন জলের কাছে সহজ হয়ে ডুব দিচ্ছে, ভেসে উঠছে পরক্ষণেই... এক ফ্রেমে জল আর মানুষ ঢেউ হয়ে যাচ্ছে। যতটুকু বালি তুলেছিলাম মুঠোয়, আঙুলের ফাঁক দিয়ে গলে গেছে সবই।

    ষষ্ঠীর দিন মা পাখার গায়ে জল ছিটিয়ে ছিটিয়ে বাতাস করত। সেইসব জল হাওয়ায় মনে হত সমুদ্রের খুব কাছে চলে এসেছি, আঁচল দিয়ে ঢেউ সরিয়ে দিতে দিতে মা বিড় বিড় করে বলে চলত ভেসে থাকার মন্ত্র...

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @