No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ইতালি না মারাদোনা— সমর্থন নিয়ে ধাঁধায় পড়ে গেছিল ইতালিয়রাই

    ইতালি না মারাদোনা— সমর্থন নিয়ে ধাঁধায় পড়ে গেছিল ইতালিয়রাই

    Story image

    মিলান শহরের সান সিরো স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ-আর্জেন্টিনা বনাম ক্যামেরুন। আগেই বলেছিলাম, ক্যামেরুনকে নিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস ছিলেন গতবার চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা দলের ম্যানেজার থেকে শুরু করে খেলোয়াড়রা সবাই। ম্যাচের আগে ট্রেনিং ক্যাম্পে গিয়ে অন্তত তেমনই ধারণা হয়েছিল আমার। ক্যামেরুনের আটত্রিশ বছরের রজার মিল্লা-র খেলা আগেই দেখেছিলাম। যাঁকে ফুটবল জগৎ ‘বল আর্টিস্ট’ বলে ডাকত। ক্যামেরুনও যে হাল ছাড়বে না, তা তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খুব স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছিল। বিশ্বকাপও যেন অপেক্ষা করে ছিল একটা টানটান ম্যাচের, যা শুরু থেকেই গোটা টুর্নামেন্টের টোন সেট করে দেবে।

    ইতালিতে থাকার সময় এক মজার সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল আমাদের। নাম, ফেডেরিকো ব্যাকস্টার। আর্জেন্টিনার লোক, থাকেন আমেরিকার মায়ামিতে। পেশায় ক্রীড়া সাংবাদিক। ইচ্ছে ফুটবল কোচ হওয়ার। আমাদের কাছে বাংলার ফুটবল সম্পর্কে শুনে, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহামেডানের উন্মাদনার কথা শুনে একবার জানতে চেয়েছিল– ভারতে এলে কোচ হওয়ার সম্ভাবনা কীরকম। স্বভাবসিদ্ধভাবে জানিয়েছিলাম, ‘জেনে জানাব।’ প্রতিদিন রাতের দিকে ফেডেরিকো চলে আসত আমাদের হোটেলে। সারাদিনের শ্যুটিং মেটেরিয়াল এডিট করে, তার ভয়েসওভার লিখে, রেকর্ড করে পরেরদিনের সকালের ক্যাপসুল রেডি করা ছিল আমাদের রোজকার শিডিউল। ফেডেরিকো প্রায় তিন-চারটে ভাষা অনর্গল বলতে পারত, তাই তাকে দিয়ে বিভিন্ন খেলোয়াড়দের থেকে নেওয়া বাইটগুলো অনুবাদ করাতাম।

    শুধু মাঠে খেলা কভার করাই নয়, খেলতে নামতেও হয়েছিল আমাদের। সে অবশ্য নিছকই ‘ফ্রেন্ডলি’। বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের বল লাথানো। সেখানেও মজার ঘটনা। আমেরিকা থেকে যেহেতু হাতে-গোনা কয়েকজন মাত্র ক্রীড়া সাংবাদিক এসেছিলেন, তাই ফিফার আন্তর্দেশীয় ক্রীড়া সাংবাদিকদের ফুটবল ম্যাচে ফেডেরিকোকে মাঠে দেখা গেল ভারতের হয়ে খেলতে। আমরা যদিও ইতালিয়ানদের কাছে হেরে ভূত হয়েছিলাম, তবু বিশ্বকাপের দেশে সেই দেশের তাবড় ক্রীড়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে খেলতে নামা এবং হারাটাও খুব একটা গায়ে লাগেনি।

    এরমধ্যেই, ইটালিয়া ৯০-র বিশ্বকাপের প্রথম ধাক্কা ক্যামেরুনের কাছে আর্জেন্টিনার ১-০ গোলে হার। পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীরা স্তম্ভিত হয়ে গেছিল। আন্দ্রে কানাবিইকের গোলে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের থুতনি প্রায় হাঁটুতে নেমে আসার জোগাড়। রাস্তাঘাটে তখন চলছে আফ্রিকান উন্মাদনা।

    ততদিনে বুঝে গেছি, ইটালিয়া ৯০ বিশ্বকাপ আরও অনেক অপ্রত্যাশিত গল্পের খোরাক দেবে। একদিকে যেমন ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনাকে স্বচক্ষে মাঠে দেখা, তেমনই হঠাৎই মুখোমুখি হলাম বলিউডের আরেক তারকা বিনোদ খান্নার। সদ্য বিয়ে করে রোমে হানিমুন কাটাতে এসেছেন। আর সঙ্গে অবশ্যই উপরি পাওনা বিশ্বকাপ। ভারতের মাটিতে রাস্তায় বেরনোর আগে যাঁকে দশবার ভাবতে হয়, তাঁর সঙ্গেই রোমের কলোসিয়ামের সামনে দেদার আড্ডা মারছি ভেবেই অবাক লাগছিল। বিনোদ খান্নার ফুটবল সম্পর্কে উৎসাহ ও জ্ঞানও ছিল চমকে দেওয়ার মতো।

    খেলার মাঝেই বিশ্বকাপ উপলক্ষে ফিফা এবং ইতালি সরকার বহু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ম্যাডোনার লাইভ কনসার্ট আর পাভারোতির গান। আমাদের প্রবেশ ছিল অবাধ, কিন্তু পাভারোতি ছাড়া আর কিছু দেখতে বা শুনতে যাওয়ার অবসর পাইনি।

    বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। হার-জিত, হাসি-কান্নার মেলা চারদিকে। এরই মধ্যে আমাদের নাপোলি যাত্রা। নাপোলির মাঠে আর্জেন্টিনা-ইতালির হাই টেনশন সেমিফাইনাল ম্যাচ। ওই ম্যাচ ঘিরে ইতালির সমর্থকদের দ্বিধা ছিল চোখে পড়ার মতো। তখন মারাদোনা ক্লাব ফুটবল খেলেন নাপোলিতে। তিনি ওখানকার সমর্থকদের কাছে প্রায় ঈশ্বর। তাঁর উন্মাদ ভক্ত ও দেশে কম নেই। আবার, খোদ ইতালির মাটিতে ইতালিই খেলছে সেমিফাইনাল। এমনই এক পরিস্থিতিতে আমরা সারারাত জার্নি করে রোম থেকে গেলাম নাপোলিতে, ম্যাচ কভার করতে। ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড়। আমাদের দলের সদস্য দেবকান্ত আর মোহান্তি সেই ট্রেনের বাথরুমের সামনে মেঝেতে বসে-বসে রাত কাটিয়েছিল। যেমনটা প্রায়ই ঘটে থাকে আমাদের দেশের দূরপাল্লার ট্রেনে। যাইহোক, নাপোলির সেই ম্যাচ পেনাল্টি শ্যুট আউটে জেতে আর্জেন্টিনা। তারপর, এই হার নিয়ে ক্ষুব্ধ দর্শকরা হাঙ্গামাও পাকিয়েছিল নাপোলিতে। আর সেই ঝামেলার মধ্যে ফেঁসে গিয়েছিলাম আমরাও। সেসব অন্য গল্প...

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @