‘আনন্দের সঙ্গে স্বাগত জানাই সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে’

মুম্বই থেকে ট্রেনে কলকাতা ফিরছিলেন তিনি। ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দিলেন বঙ্গদর্শনকে। খাদিজা বানু। মুর্শিদাবাদের রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক। বঙ্গদর্শনের হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলেন শুভাশিস মৈত্র।
বঙ্গদর্শন – তিন তালাক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় আপনার কাছে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?
খাদিজা বানু - আমরা খুব আনন্দের সঙ্গে স্বাগত জানাই সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে। আন্তরিকভাবে বলছি ধন্যবাদ জানাই। আজ অন্তত তাঁর এই বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছেন। বুকের উপর একটা অনেক বড় পাথর চেপে বসেছিল। খানিকটা যেন নড়াচড়া হয়েছে। পরবর্তীকালে মেয়ের অধিকার পেতে গেলে ইন্ডিয়ান ল’ ক্রিমিনাল এবং সিভিল ল’য়ের দ্বারা তারা তাদের অধিকার পেতে পারবে।
বঙ্গদর্শন - পার্সোনাল ল সম্পর্কে আপনার কী অভিমত?
খাদিজা বানু- চারটে করে বিয়ের অনুমোদন। ফলে একটার পর রিজেক্ট করতেই থাকে। ফলে মেয়েগুলি ডিপ্রাইভ হতেই থাকে। আবার ধরুন, এই পার্সনাল ল’য়ে বিধবা মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতেই থাকে, সেখানেও শ্বশুর-শাশুড়ি জীবিত থাকেন তাহলে বিধবা মহিলাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। বিধবা মহিলা ও তার সন্তানদের কোনও অধিকার থাকে না বাড়িতে থাকার। সন্তানদেরও তার বাবার সম্পত্তির ওপর কোনও অধিকার থাকে না। সম্পত্তির অধিকার নেই, হালালা ম্যারেজ, এটা অত্যন্ত বাজে বিবাহ প্রথা। ফলে পার্সনাল ল’য়ের দ্বারা খুব পরিমানে ডিপ্রাইভ হচ্ছে। এবং মানুষ হিসাবে যে অধিকার তা পায় না।
বঙ্গদর্শন - তাহলে আপনারা কি পার্সনাল ল’টিকেই বন্ধ করতে চাইছেন?
খাদিজা বানু- একটি গণতান্ত্রিক দেশে পার্সনাল আইনটা আলাদা করে থাকবে কেন? যে-কোনও গণতান্ত্রিক চেতনার মানুষ কি ভাবতে পারে এমনটা? আমরা সকলে ইন্ডিয়ান, আমরা নিজেদেরকে ভারবাসী বলে গর্ব করি, পরিচয় দিয়ে থাকি, বিশ্বাস করি। তাহলে কেন আলাদা আলাদা আইনের দ্বারা মেয়েরা বিতাড়িত হবে? আমরা তো চাই যেমন ক্রিমিনাল ল, এর দ্বারা সকল অপরাধী শাস্তি পাক। তাহলে কেন আলাদা ল হবে? তাই আমরা যদি ভারতবাসী হই তাহলে কেন মুসলিম মেয়েরা আলাদা করে পার্সোনাল ল’য়ের দ্বারা আলাদা করে বিচার পাবে? তাই আজকের দিনটা খুব আনন্দের। এ কথা আমরা ভুলতে পারি না এবং অস্বীকারও করতে পারি না যে দীর্ঘদিন ধরে যে আমরা লড়ছি এই দাবিগুলির জন্য।
বঙ্গদর্শন - তাহলে কি আপনার লড়াই চালু থাকবে?
খাদিজা বানু - লড়াই চালিয়ে যেতেই হবে। কারণ আমার উপায় নেই। যেসব মেয়েদের নিয়ে কাজ করি সেখানে তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে যেমন আছেন তেমনি বহুবিবাহের ফলে প্রতারিত মেয়েরাও আছেন, বিধবা মহিলারা আছেন, সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে ভিকটিম মহিলারাও আছেন। পার্সনাল ল’ থাকার কি প্রয়োজন?
বঙ্গদর্শন - তিন তালাক উঠে গেলেও কি বহুবিবাহ থাকছে, না কমে যাচ্ছে?
খাদিজা বানু- তিন তালাক উঠে গেলেও বহুবিবাহ থাকবে। পার্সনাল ল’ থাকার জন্য বিতাড়িত মহিলা ও বহুবিবাহ থাকবেই। আসলে আমরা চাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ধারণা। চাই মহিলারা স্বাধীন ভাবে নিজের অধিকার নিয়ে বাঁচতে।