ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি গোপীকান্ত গোঁসাই
অনেক সাধ্যসাধনা করে তাঁর সময় বার করা গেল। আমেরিকার সদ্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আমার ভিডিও কনফারেন্স। তিনি যে সময় দিলেন তখন এখানে রাত দুটো। তবুও সেজে গুজে ক্যামেরার সামনে বসতে হল।
কুশল বিনিময়ের পর গলায় গভীর সহানুভূতি এনে আমি জিজ্ঞাসা করলাম - আপনার না-কি কোষ্ঠ কাঠিন্য আছে?
খেকুড়ে গলায় জবাব এল- তাতে তোর বাপের কী?
বাপ তুললেও সাংবাদিকদের মেজাজ হারাতে নেই, সে কথা আমি জানি। বুঝলাম রাঘব বোয়াল টোপ গিলেছে। আমি সপাটে শুরু করলাম - যা জিজ্ঞেস করব তার জবাব দিবি। ভিডিও কনফারেন্সের খরচ জানিস? ব্যবসা করিস অথচ বিনিয়োগের রিস্ক বুঝিস না?
- ঘরে কত আসবে?
- সেই ব্যালেন্স সিট তোকে দেখাতে আমি বাধ্য নই।
- কিন্তু আমার রয়ালটি?
- কীসের রয়ালটি? ব্যবসা ছেড়ে রাজনীতিতে ঢুকেছিস। এখন তোর কাজ হল ফোকটে সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়ানো। প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে তোর গলা শুকিয়ে যাবে। কিন্তু এক গ্লাস জলও কেউ এগিয়ে দেবে না। তোকে আবার প্রশ্ন করবে। গদি হারানোর কথাগুলো তো বলতে হবে নাকি!
- এ আমি কোন গেরোয় পড়লাম।
- সবে তো কলির সন্ধ্যে। আচ্ছা প্রাক্তন জেনারেল জেমস মাতিস’কে সবাই নাকি পাগলা কুত্তা বলে ডাকে?
- আমার ক্যাবিনেটে আমি চেয়েছিলাম ম্যাড ডগ, স্লাই ফক্স, ওয়াকাডুডুল...
- সেটা আবার কী জিনিস?
- ওটা আমেরিকান স্ল্যাং। তার মানে হল ক্ষ্যাপার হাতে ক্ষেপনাস্ত্র। দেখিস, আমি আবার সারা পৃথিবীতে ঝড় তুলবো।
- তোর কি আক্কেল বলে কিছু আছে?
- কেন কী হল?
- মাতিস তো ইরাক আর আফগানিস্তানে ধেড়িয়েছিল।
- সেটা ওর দোষ নয়। আমেরিকার রাজনীতিকরা প্রতিরক্ষার কিছু বোঝে না কিন্তু হুকুম দেয়।
- সেই জন্যই কি তুই মাইকেল ফ্লেন’কে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা আর ডেভিড পেট্রাউসকে স্বরাষ্ট্র সচিব বানিয়েছিলি?
- অবশ্যই।
- তার মানে তুই সৈন্য দিয়ে দেশ চালিয়েছিস। তাহলে তো সকলের আগে তোকেই বাদ দেওয়া উচিত ছিল।
- এই জাতীয় কথা শুনলে আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ি।
- তাতে তোর কাঠিন্য কমবে। আসলে আমি তোর উপকারি বন্ধু।
- তাহলে চলুক।
- আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তুই হচ্ছিস সবচেয়ে বুড়ো হাবড়া। তোর বয়স সত্তর বছর। এই বয়সে আজ পর্যন্ত কেউ প্রেসিডেন্ট হয়নি।
- আমি বার্ধক্য কে জয় করেছি।
- সে আর বলতে। দুই বউকে তালাক দিয়ে এখন তিন নম্বর নিয়ে ঘর করছিস।
- চুপ। ব্যক্তিগত জীবনের কথা এখানে নয়।
- শোন, কেচ্ছা ছাড়া আমেরিকানদের ভাত হজম হয় না। খাতায় কলমে তোর তিনটে বিয়ে কিন্তু বাকি পনেরোটার কী হবে?
- তুই একটা মিথ্যাবাদী সাংবাদিক।
- এক-দুই-তিন করে নামতা পড়বো? চলন্ত বাসে এক টিভি অভিনেত্রীর উপর হামলে পড়া দিয়ে তোর শুরু।
- ওই কেসটায় আমি তো ক্ষমা চেয়েছি।
- টিভি আর্টিস্ট আর বিজ্ঞাপনের মডেলদের দেখলে তোর কি কাঠিন্য কমে যায়?
- বারবার কাঠিন্য নিয়ে খোঁচা দিবি না। প্রতি সপ্তাহের পঞ্চমদিনে সেপটিক ট্যাঙ্ক খালি করতে আমার জীবন বেরিয়ে যায়।
- থাক ওসব। তোদের দেশের লোক তো চারটে প্রেসিডেন্ট-এর লাশ ফেলেছে। গোটা কুড়ি মরতে মরতে বেঁচে গেছে। তা তুই কবে মায়া কাটাবি?
- আমার নিরাপত্তা বলয় দুর্ভেদ্য।
- নিজের দেশের চারটে প্রেসিডেন্টকে ঘায়েল করলি কিন্তু কাস্ত্রোকে কিছু করতে পারলিনা? তোদের সুপারিকিলারগুলো কি ঢ্যামনা?
- যে যমের অরুচি তার সামনে সব আগ্নেয়াস্ত্রই অকেজো। ওটা হল মহাভারতের ভীষ্ম। যেদিন নিজে মরবে ঠিক করেছে সেদিনই টসকেছে।
- হ্যাঁ রে, তুই নাকি কিউবায় তাজমহল ক্যাসিনো খুলতে গিয়েছিলি? তখন তো কিউবার উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা ছিল। তা ৬৮ হাজার ডলার ঢালতে গেলি কেন?
- উদার হতে চেয়েছিলাম। কাস্ত্রো বলেছিল প্রত্যেক শ্রমিককে মাসে দশ হাজার ডলার দিতে হবে। তার থেকে শ্রমিকরা পাবে দশ ডলার। বাকি টাকা দিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে অস্ত্র কেনা হবে। কত বড়ো শয়তান।
- কান মুলে দিয়েছে বল। আচ্ছা, তোদের দেশে যারা প্রেসিডেন্ট হয় তাঁদের সবারই বড্ড বেশি কুরুক কুরুক থাকে।
- What is Kuruk kuruk?
- অর্থাৎ যৌন তাড়না। আব্রাহম লিঙ্কন সমকামী ছিলেন জানিস তো?
- অত পুরোনো পাঁচালি ঘাঁটার সময় আমার নেই।
- আচ্ছা তুই ইতিমধ্যেই ছয়বার দেউলিয়া হয়েছিস। দেশটাকেও লাটে তুললি।
- ব্যর্থতাই সাফল্যের সোপান।
- দেশের নানা আদালতে তোর নামে সাড়ে তিন হাজার মামলা চলছে। সেগুলির কী হবে?
- বিন লাদেনের মতো সব ফাইল প্রশান্ত মহাসাগরে ডোবাবো।
- বিন লাদেন বলতে মনে পড়লো। তুই তো অনেক মুসলমানকেই আমেরিকা ছাড়া করেছিস। জিতলে নিশ্চয় আরও করতিস?
- মুসলমান ধর্মটাই পৃথিবীর শরীরে একটা ক্যান্সার।
- তা তুই দুবাই, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, আজারবাইজান – এমন সব মুসলিম দেশ থেকে তো কোটি কোটি ডলার কামিয়েছিস।
- সেটা ব্যবসায়ী ট্রাম্পের কাজ ছিল।
- সৌদি আরব, কাতার- এমন সব মুসলিম দেশে আমেরিকান সৈন্যরা তো এখনও ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে।
- সব তুলে আনবো।
- তোদের দেশের প্রেসিডেন্টদের তো গুণের শেষ নেই। জন কেনেডির কথা ধর। মেরিলিন মনরো’র সঙ্গে লটর পটর...
- আমি তার কী করবো?
- বিল ক্লিন্টন তো হোয়াইট হাউসকেই বিছানা বানিয়ে ফেলল।
- সেই জন্যই তো ওর বউকে আমি হারিয়েছিলাম।
- তুই বললি সব দেশ থেকে সৈন্য সরাবি। তা যুদ্ধ না করলে তোরা খাবি কী?
- এবার নতুন যুদ্ধ। কমিউনিজম কে আমরা খতম করেছি। এবার ইসমালকে এক হাত নেব।
(হ্যাঁ, আর সম্ভব হবে না। হেরো।)
- কিন্তু নাকের ডগায় তো কিউবা বসে আছে।
- ওসব হাতের ময়লা।
- কোরিয়ার যুদ্ধ, ভিয়েতনাম, কসভো, কাবুল সব জায়গা থেকে তো কানমলা খেয়ে ফিরলি। তবুও শিক্ষা হল না?
- যুদ্ধের মধ্য দিয়েই জাতি গঠন হয়। হিরোশিমায় ধাক্কা খেয়েই তো জাপান ঘুরে দাঁড়ালো।
- তোর ব্যবসা তো একহাতে লম্বা লম্বা টাওয়ার বানানো, আর এক হাতে গলফের গর্ত খোঁড়া। তোর ব্যবসার মধ্যেও একটা যৌনতার ছাপ আছে।
- সেই জন্যই তো মিস ইউনিভার্স চালু করেছিলাম।
- সেখান থেকে সরে এলি কেন? বয়েস হয়েছে বলে?
- আমার যে বয়স হয়নি সেটা সময়ই বলে দেবে।
- হ্যাঁ রে, রুসভেল্ট’কে তোর মনে আছে?
- কোন রুসভেল্ট? থিয়োডর না ফ্রাঙ্কলিন?
- ফ্রাঙ্কলিন। পক্ষাঘাতে পঙ্গু কিন্তু কুরুক কুরুকে ওস্তাদ।
- তুই থামবি? তখন থেকে খালি...
- উদাহরণগুলি দিলাম কারণ তোর সত্তর পেরিয়েছে। পূর্বপুরুষদের রেকর্ড তুই ম্লান করতে পারবি?
- এই ভাবে চললে আমি কিন্তু কথা বলাই বন্ধ করে দেব।
- সেটা তোর কপালে নেই। বকবক না করলে তোর কাঠিন্য আরও বাড়বে।
- উফঃ। আবার কাঠিন্য...
- বার্লিন দেওয়াল ভাঙার সময় তো খুব নেচেছিলি। তারপর আবার মেক্সিকো সীমান্তেও দেওয়াল তুলেছিস। ওরাও তো যিশু’র সন্তান।
- মেক্সিকোর পঙ্গপালকে কি তুই খাওয়াবি? আমি যিশুকে এত সন্তান পয়দা করতে বলিনি।
- তবে তোর উপর কিন্তু যিশুর আশীর্বাদ আছে।
- আছে? কী রকম?
- তোর কোষ্ঠ-কাঠিন্য।
- আবার ওই কথা। মানুষের অসুখ নিয়ে তামাসা করা।
- ওই রোগটা আছে বলেই জীবনে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতেই তুই কাপড়ে-চোপড়ে হবি না।
সংযোজন - ভিডিও কনফারেন্সিং-এর আগেই আমি তিনটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। চ্যানেল ‘চাঁছাছোলা’ রাজনৈতিক প্রসঙ্গ দেখাবে। চ্যানেল ‘মুলিবাঁশ’ তাদের অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছে ‘বাত খেলাপি’। আর চ্যানেল ‘ফস্টিনস্টি’ তুলে আনবে যৌন প্রসঙ্গগুলি। সেই সময়ে ট্রাম্পের বা কাঁধের উপরে একটি ঝুলন্ত জানালায় প্রতিটি ঘটনার সচিত্র বিবরণও স্থান পাবে।
(এটি কাল্পনিক কথোপকথন। সমস্ত বক্তব্য লেখকের নিজস্ব। অলংকরণঃ ঋতুপর্ণ বসু।)