বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরার ভূমিকা প্রায় নিয়ামক ছিল

মার্কিন মুলুকে প্রবাসী ও প্রযুক্তিবিদ ডঃ বিপ্লব পাল বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশী ওয়েবসাইট মুক্তমনা ডট কম-এ অধুনালুপ্ত পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাফ সাফ লিখেছেন ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বিজয়লাভ ও বাংলাদেশ-এর জন্ম হত না। ইরাক, লিবিয়া ও দক্ষিণ ইয়েমেন বাদে গোটা ইসলামিক দুনিয়া পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। চিন সম্পর্কে(তখন মাও জে দং জীবিত ও চিনের সর্বেসর্বা) যত না বলা যায়, ততই ভালো। ডঃ পালের লেখা থেকে দীর্ঘ উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
“আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অতি সক্রিয় ছিলেন। এতটাই যে আমেরিকার নির্দেশে সৌদি আরব, জর্ডন এবং ইরান পাকিস্তানকে ফাইটার প্লেন দিয়ে সাহায্য করছিল - ইরান তো তার বিমান ঘাঁটিও ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। শুধু তাই না নিক্সন চিনকে সঙ্গে নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ানের ওপরে চাপ সৃষ্টি করেন জাতিসঙ্ঘে - তাতে কাজ না হলে ইন্দিরাকে ফোন, ফ্যাক্স হুমকি কিছুই বাকী রাখেন নি। একসময় সোভিয়েতও ভারতকে জানিয়ে দেয়, আমেরিকা ভারত আক্রমণ করবে বাংলাদেশ ইস্যুতে। তবে তারাও নৌবহর পাঠাচ্ছে। ইন্দিরা গান্ধী জেনারেল ম্যকেনশকে প্রশ্ন পর্যন্ত করেছিলেন আমেরিকা আক্রমণ করলে কী হবে? ম্যাকেনশর উত্তর ছিল, তার আগেই বাংলাদেশ মুক্ত হবে। চীন এবং আমেরিকার সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে নার্ভ ঠিক রেখে ইন্দিরা গান্ধী গোটা পৃথিবী চষে ফেলেছিলেন বাংলাদেশের সমর্থনে। জানাচ্ছিলেন কীভাবে খুন ধর্ষণ এবং জেনোসাইড চালাচ্ছে খান সেনারা। ইউটিউবে তার অসংখ্য ইন্টারভিউ পাওয়া যাবে কখনো বিবিসি, কখনো ফরাসী টেলিভিশনকে দেওয়া(যা ফ্রেঞ্চেই দিয়েছিলেন ইন্দিরা)। পুরো ব্যাপারটা পড়ার পরে আমার মনে হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধী না থাকলে বাংলাদেশের রক্তক্ষয় হত আরো বেশী - হয়ত বাংলাদেশ স্বাধীন হত - কিন্ত রক্ত ঝরত আরো আরো অনেক। শেখ মুজিব যদি জাতির পিতা, ইন্দিরাকে বাংলাদেশ নামক জাতির মাতা বললে ভুল হবে না। এটা শুনে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী আমাকে জানালেন, আমি নাকি ইতিহাস ফ্যাব্রিকেট করছি বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধকে ছোট করার জন্য! আসল সত্যটা হচ্ছে এই - এরা সেই ১৯৭৫-৯৬এর বাংলাদেশের প্রোডাক্ট। যেখানে আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিব, ইন্দিরা, ইন্ডিয়া সব কিছুই অস্বীকার করা হত।”
এ প্রসঙ্গে অবিভক্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপি আই)এর নেতা ও ১৯৫০-৫৬ পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ডাঃ রণেন সেনের কাছে শোনা একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় রণেনদা লোকসভা সদস্য। যখন নিক্সন মার্কিনী সপ্তম নৌবহর পাঠালেন, পশ্চিমবঙ্গেরকতিপয় সাংসদ(যাঁদের মধ্যে ছিলেন রণেনদা ও প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী) ঘোর উদ্বেগে শ্রীমতী গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদের দুশ্চিন্তার কথা ব্যক্ত করলেন, বললেন শুধু মার্কিন নৌবহর নয়, চীনও গানবোট নামানোর হুমকি দিচ্ছে। তাঁদের আশঙ্কা জানালেন, “সপ্তম নৌবহর এলে বিশাখাপট্টনম ও চট্টগ্রাম বন্দর খোলামকুচির মত উড়ে যাবে।” ইন্দিরা গান্ধী হেসে জবাব দিয়েছিলেন, “আপনাদের অর্থাৎ বাঙালীদের প্রতি আমার বিশেষ টান আছে। কিন্তু আপনারা বড় আবেগপ্রবণ। দেখুন না কী হয়।” রণেনদা বলেছিলেন (আমি তখন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব, তকমাটা ওনার দেওয়া এবং প্রেস কাউন্সিলেও তাই লিখেছিলেন), “তবু আশঙ্কা নিয়েই এম পি কোয়ার্টার্সে ফিরলাম। রাতে রেডিওয় শুনলাম সপ্তম নৌবহর-এর মোকাবিলায় সোভিয়েত নৌবহর বঙ্গোপসাগরে নেমেছে। আর ব্লাডিভস্টকে অনুপ্রবেশকামী চিনের গণফৌজ বাহিনী প্রচন্ড মার খেয়ে পিছু হঠেছে। পিছু হঠেছে সপ্তম নৌবহরও”। ইন্দিরা সাংসদদের কাছে জানতে চেয়ে বলেছিলেন, “দুই বাংলায় তো এখন প্রবল বর্ষা। মাটি কবে শক্ত হবে, বিশেষত পূর্ব বাংলায়?”। রণেনদা উত্তর দিয়েছিলেন, নভেম্বরের একেবারে শেষ দিকে ও ডিসেম্বরের শুরুতেই। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১। আমি সেই রাতে রাজধানী এক্সপ্রেসে নয়া দিল্লী যাচ্ছিলাম। ট্রেনেই আকাশবাণীতে শুনলাম সেকথা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও হেনরি কিসিঙ্গারের কাছে যে আগাম খবর ছিল না অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে সি আই এ ব্যর্থ হয়েছিল, তা দুজনের কথোপকথনে(১০ডিসেম্বর ১৯৭১) স্পষ্ট। সেই বাতচিত-এর সংশ্লিষ্ট অংশ উদ্ধৃত করছি।
Nixon: Our desire is to save West Pakistan. That's all.
Kissinger: That's right. That is exactly right.
Nixon: All right. Keep those carriers moving now.
Kissinger: The carriers—everything is moving. Four Jordanian planes have already moved to Pakistan, 22 more are coming. We're talking to the Saudis, the Turks we've now found are willing to give five. So we're going to keep that moving until there's a settlement.
Nixon: Could you tell the Chinese it would be very helpful if they could move some forces or threaten to move some forces?
Kissinger: Absolutely.
Nixon: They've got to threaten or they've got to move, one of the two. You know what I mean?
Kissinger: Yeah.
Nixon: How about getting the French to sell some planes to the Paks?
Kissinger: Yeah. They're already doing it.
Nixon: This should have been done long ago. The Chinese have not warned the Indians.
Kissinger: Oh, yeah.
Nixon: All they've got to do is move something. Move a division. You know, move some trucks. Fly some planes. You know, some symbolic act. We're not doing a goddamn thing, Henry, you know that.
আরও পড়ুন
বিজয়ের মুহূর্ত
Kissinger: Yeah.
Nixon: But these Indians are cowards. Right?
Kissinger: Right. But with Russian backing. You see, the Russians have sent notes to Iran, Turkey, to a lot of countries threatening them. The Russians have played a miserable game.
If the two American leaders were calling Indians cowards, a few months earlier the Indians were a different breed altogether. This phone call is from May 1971.
Nixon: The Indians need—what they need really is a—
Kissinger: They’re such bastards.
Nixon: A mass famine. But they aren't going to get that…But if they're not going to have a famine the last thing they need is another war. Let the goddamn Indians fight a war.
Kissinger: They are the most aggressive goddamn people around there....
As Nixon’s conversations with the wily Kissinger show, the forces arrayed against India were formidable. The Pakistani military was being bolstered by aircraft from Jordan, Iran, Turkey and France. Moral and military support was amply provided by the US, China and the UK. Though not mentioned in the conversations here, the UAE sent in half a squadron of fighter aircraft and the Indonesians dispatched at least one naval vessel to fight alongside the Pakistani Navy.
However, Russia’s entry thwarted a scenario that could have led to multiple pincer movements against India."
গোটা কথোপকথন -https://2001-2009.state.gov/r/pa/ho/frus/nixon/e7/48542.htm
ডঃ পালের কথা যে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবস্থান ফরাসী টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার ফরাসী ভাষাতেই দিয়েছিলেন। জরুরী অবস্থার সময় তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে একজন বাঙালি ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রোজ রাতে শোবার আগে তাঁর চাহিদা ছিল কোন ফরাসী ভাষায় লেখা বই বা পত্রিকা। এ নিয়ে বারান্তরে লেখা যাবে।