রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহালয়ে বিশেষ কিয়স্ক উদ্বোধন, যেখানে ইতিহাসচর্চা হবে আরও গভীরে

পুরাতত্ত্ব এমনই এক বিষয়, যা চর্চা করলে নিজের দেশ ও দশকে সম্পূর্ণভাবে জানা ও চেনা যায়। রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহালয় (State Archaeological Museum) সেই চেষ্টাই করে চলেছে নিয়মিত। গত ১৮ মে আন্তর্জাতিক সংগ্রহশালা দিবস উপলক্ষ্যে রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহালয়ে (State Archaeological Museum) চালু হল একটি কিয়স্ক, যার মাধ্যমে মিউজিয়ামে থাকা যেকোনো বিষয়ের উপর সম্পূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন সাধারণ মানুষ। এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের (West Bengal Heritage Commission) চেয়ারম্যান ও চিত্রকর শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের সম্পাদক উমাপদ চ্যাটার্জি, তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগ, চলচ্চিত্র উৎসব ও পুরাতত্ত্ব বিভাগের ডিরেক্টর মিত্র চ্যাটার্জি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডঃ মধুপর্ণা রায়চৌধুরী-সহ বিশিষ্ট অতিথিরা।
রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহালয় (State Archaeological Museum) ১৯৬২ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা পরিচালিত একটি রাষ্ট্রীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহালয় বা জাদুঘর। প্রথম, মধ্য ও শেষ মধ্যবর্তী লৌহ যুগের শুশুনিয়া (বাঁকুড়া), পাণ্ডু রাজার ঢিবি (বর্ধমান), পোড়ামাটির ভাস্কর্য, পাথর ও অন্যান্য প্রাগৈতিহাসিক পুরাতাত্ত্বিকদের বিরল সরঞ্জাম-সহ বিভিন্ন সংগ্রহ রয়েছে এখানে। এছাড়াও গুপ্ত, মৌর্য, শুঙ্গ, কুশান, পাল এবং মধ্যযুগীয় সময় প্রত্নতাত্ত্বিক বহু বস্তু রয়েছে রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহালয়ে। ১৯৬৩ সালে চালু হওয়া ‘ঐতিহাসিক শিল্প’ বিভাগের একটি বড়ো অংশ জুড়ে রয়েছে পোড়ামাটি, ব্রোঞ্জ, কাঠের খোদাই, বস্ত্র এবং পাণ্ডুলিপির নানান জিনিস।
ডঃ মিত্র চ্যাটার্জি এদিন বলেন, এখানে মোট সাতটি গ্যালারি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রায় এগারোশোর বেশি সংগ্রহ নিয়ে সেজে উঠেছে বেহালার রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহালয় (State Archaeological Museum)। রয়েছে একটি বিশেষ কিয়স্ক। সেখানে প্রবেশ করলে মিউজিয়ামে থাকা যেকোনো বিষয়ের উপর সমগ্র ইতিহাস জানতে পারবেন দর্শক। তিনি আরও বলেন, “এখনও বাংলার বিভিন্ন জায়গায় নানান ঐতিহাসিক মূর্তি পাওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগে মঙ্গলকোট, হাওড়া, মালদায় মূর্তি পাওয়া গেছে খননকার্যের পর। জেলার সংরক্ষণশালায় সেগুলি রেখে দেওয়া হচ্ছে অত্যন্ত যত্নসহ। রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহালয় ছাড়াও ছয়টি জেলায় ছয়টি আলাদা সংগ্রহালয়ও আছে। রায়গঞ্জ বা বালুরঘাটের মতো মিউজিয়ামে নতুন বিল্ডিং তৈরি হয়েছে। ফলে আরও ঐতিহাসিক সংগ্রহ সেখানে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জেলাস্তর এবং রাজ্যস্তরের সংগ্রহশালার উন্নতিকরণের জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।”
এখানে মোট সাতটি গ্যালারি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রায় এগারোশোর বেশি সংগ্রহ নিয়ে সেজে উঠেছে বেহালার রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহালয়। রয়েছে একটি বিশেষ কিয়স্ক। সেখানে প্রবেশ করলে মিউজিয়ামে থাকা যেকোনো বিষয়ের উপর সমগ্র ইতিহাস জানতে পারবেন দর্শক।
পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের সম্পাদক উমাপদ চ্যাটার্জি এদিন প্রস্তাব দেন, মিউজিয়াম বা সংগ্রহশালা বিষয়কে যদি পাঠ্যসূচির আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে ছাত্রছাত্রীরা বাংলার সংরক্ষণ নিয়ে ছোটো থেকেই জানার সুযোগ পাবে। বিষয়টি তিনি শিক্ষা দপ্তরের নজরে আনার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “ছাত্ররা ইতিহাসের বইয়ে শুধুমাত্র হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর কথা পড়ে, তার বাইরেও যে বিশাল ইতিহাস, তা এখনও অজানা রয়ে গেছে। এগুলি নিয়ে পড়াশোনা করলে তবেই মিউজিয়াম তৈরি করার সার্থকতা পরিপূর্ণ হবে। বাংলায় প্রত্নতত্ত্বের যে সম্ভার রয়েছে, সে বিষয়ে জানলে জ্ঞানের পরিধি আরও বাড়বে।” এখনও রাজ্যে পুরোনো বাড়ি সংরক্ষণ করা বা ব্যক্তি উদ্যোগে মিউজিয়াম তৈরি করার চাহিদা আছে। দুই বছর আগে বেলেঘাটার একটি বাড়ি সংরক্ষণ করে সেখানে গান্ধি মিউজিয়াম স্থাপিত হয়েছিল। যদিও তা এখনও জনসমক্ষে আসেনি। সাধারণ মানুষের জন্য গান্ধি মিউজিয়ামের দরজা খুলে গেলে স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক অজানা তথ্য সামনে আসত। মংপুতে রবীন্দ্রনাথ মিউজিয়ামও তৈরি হয়েছে। উমাপদবাবু বলেন, হেরিটেজগুলির নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে তার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিন শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহালয়ের (State Archaeological Museum) কিয়স্ক উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, “বাংলার যে মাটির কথা, আকুতির কথা রবীন্দ্রনাথের গানে শুনি, সেই বাংলা বহু প্রাচীন সভ্যতার একটা খণ্ড। যে সভ্যতা হাজার হাজার বছরের পুরনো। যেমন খননকার্যের ফলে আমরা জানতে পেরেছি সিন্ধু সভ্যতার কথা। সেই সময়ও কত আধুনিকমনস্ক চিন্তা ছিল মানুষের। তখনকার বাড়ি, ঘর আর জীবনযাপনের উপাদান, তা ঘটি বাটি যাই হোক, সেগুলি সংরক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমরা তা করেওছি। এখনও খননকার্যের মধ্যে দিয়ে যে যে ঐতিহাসিক জিনিস আমরা আবিষ্কার করতে পারছি, এটা একটা সভ্য জাতির লক্ষণ। আমি বিশ্বাস করি না যে, একটি দেশ আর পুরাতত্ত্বের ইতিহাস আলাদা।”
এদিন সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করেন রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহালয়ের কর্মকর্তারা।