এয়ারপোর্ট নেই যেসব দেশে

যখন সময় ছুটছে মানুষের আগে সেই সময়ে প্লেন বা উড়োজাহাজই হল সব থেকে আবশ্যক যান। কেবল আধুনিক যুগের অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কারই নয় এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এই বাহন। হাজার হাজার মাইল পথ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া যায় এর মাধ্যমে। তবে পৃথিবীতে এখনও এমন কিছু দেশ রয়ে গেছে যেখানে কোনও বিমানবন্দর বা এয়ারপোর্ট নেই। তাহলে সেখানে যাওয়ার উপায়? সেই সব দেশে যেতে হলে আপনাকে অন্য কোনও দেশের এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে হবে। চলুন জেনে নিই সেইসব দেশে কীভাবে প্লেন বা উড়োজাহাজ যোগাযোগ ঘটছে।
বিমানবন্দরবিহীন দেশের প্রসঙ্গে এবার বলতে হয় ভ্যাটিকান সিটি-র কথা। এটি ইতালির রোম শহরের ভিতরে অবস্থিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। পোপ এখানকার রাষ্ট্রনেতা। এটি রোমান ক্যাথলিক গির্জার বিশ্ব সদর দফতর হিসেবে কাজ করে। সম্পূর্ণভাবে রোমের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভ্যাটিকান সিটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র, যার আয়তন ১১০ একর। ভ্যাটিকান সিটির নিজস্ব সংবিধান, ডাকব্যবস্থা, সীলমোহর, পতাকা সবই আছে। এমনকি নিজস্ব সেনাবাহিনীও, যার নাম সুইস গার্ড। ভ্যাটিকান সিটি শেষ পোপীয় রাষ্ট্র। ক্যাথলিক গির্জা বহু শতাব্দী ধরে মধ্য ইতালির বেশ কিছু এলাকাতে এই রাষ্ট্রগুলি স্থাপন করেছিল, যার শাসনকর্তা ছিলেন পোপ। ইতালীয় সরকার ও পোপ সম্প্রদায়ের মধ্যে বহু বছর ধরে বিতর্কের পর ১৯২৯ সালে লাতেরান চুক্তি মোতবেক ভ্যাটিকান সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সিসতাইন চ্যাপেল ও সেন্ট পিটার্স প্রাসাদের দেশে নেই কোনো এয়ারপোর্ট। ইতালির রোম এয়ারপোর্টে নেমে সেখান থেকে সড়কপথে যেতে হয় মাত্র ৪৬ হেক্টর আয়তনের পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট্ট এই দেশটিতে।

ইউরোপের আর একটি ক্ষুদ্র দেশ মোনাকোতেও কোনো এয়ারপোর্ট নেই। এটি আয়তনে পৃথিবীর ২য় ক্ষুদ্রতম এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ জনঘনত্ব-বহুল রাষ্ট্র। কেবলমাত্র ভ্যাটিকান সিটির আয়তন মোনাকোর চেয়ে কম। এর জনসংখ্যা আনুমানিক ৩২ হাজার। দেশটি ফ্রান্সের দক্ষিণ পূর্বে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত হওয়ায় এখানে ফরাসি ভাষাই ব্যবহৃত হয়। দেশের প্রধান প্রিন্স আল্বারত। পর্যটন শিল্পই দেশটির প্রধান অর্থনীতি। এর প্রধান আকর্ষণ ক্যাসিনো বা জুয়াখেলার আখড়া। দেশের জনগণকে কোনো আয়কর দিতে হয় না। সরকারিভাবে রাজধানী না থাকলেও সবচেয়ে বিত্তশালী চতুর্থাংশ মাল্টি কার্লোকে মোনাকোর কেন্দ্র বলা হয়। জুয়াখেলার অঙ্কের যে তত্ত্ব প্রযোজ্য সেই প্রোবাবিলিটি বা সম্ভাবনা তত্ত্বের এক বিখ্যাত পদ্ধতির নাম মল্টি কার্লো মেথড। দেশটিতে এয়ারপোর্ট নেই ঠিকই তবে ফ্রান্সের নাইস কোর্ট ডি আনজুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে মোনাকো পৌঁছোতে লাগে মাত্র ২৫ মিনিট। তাই ফ্রান্স হয়েই মোনাকোতে যাওয়া ভালো।

এয়ারপোর্টবিহীন দেশের প্রসঙ্গে বলতে হয় লিচেনস্টেইন দেশের কথা। এটি মধ্য ইউরোপের একটি ছোট্ট রাষ্ট্র এবং পৃথিবীর স্বাধীন ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্রগুলির অন্যতম। আল্পস পর্বতমালার অভ্যন্তরে রাইন নদীর উপত্যকার একটি অংশে অবস্থিত মোটামুটি ত্রিভুজাকৃতির মতো দেশটি ছবির মতো সুন্দর। লিচেনস্টেইন একটি রাজপুত্র-রাজ্য (principality), অর্থাৎ একজন রাজপুত্র এলাকাটি শাসন করেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র সুইজারল্যান্ডের মতো লিচেনস্টেইনও একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। রাজ্যটি ১৭১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮০৬ সালের ৬ই আগস্ট এটি স্বাধীনতা লাভ করে।
আরও পড়ুন
লিলিপুটদের প্রাচীন গ্রাম
লিচেনস্টেইনের কারুকার্যময় ডাকটিকিট বিশ্ববিখ্যাত। পর্যটকেরা এগুলি সংগ্রহ করতে ভালোবাসেন এবং এগুলি জাতীয় আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পৃথিবীতে সবচেয়ে কম অপরাধের দেশ লিচেনস্টেইন। তবে সরাসরি ফ্লাইটে দেশটিতে যাওয়া যায় না। প্রতিবেশী সুইজারল্যান্ডের গ্যালেন আলটেনহেইন এয়ারপোর্ট থেকে লিচেনস্টেইন-এর ভেদুজ এর দূরত্ব মাত্র ৩৮ কিলোমিটার।

এয়ারপোর্ট নেই এনডোরাতেও। দেশটি পূর্ব পিরেনিস পর্বতমালায় ফ্রান্স ও স্পেনের মাঝে অবস্থিত। এনডোরা বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্রগুলির একটি। এর আয়তন ৪৬৮ বর্গকিমি ও জনসংখ্যা প্রায় ৮৪ হাজার। এনডোরা একটি রুক্ষ এলাকা, গভীর গিরিখাত, সরু উপত্যকা ও সুউচ্চ পাহাড় এর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য। ১৯৫০-এর দশকে এসে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়। ক্ষুদ্র হলেও এনডোরাতে পিরেনিসের সেরা স্কি ও স্নোবোর্ডিং-এর ব্যবস্থা আছে। হাইকিং, বাইকিং ও আল্পস পর্বতমালার অসাধারণ দৃশ্যাবলি গরমকালে পর্যটকদের ডেকে আনে। তবে বেশির ভাগ অতিথিই দৈনিক ভিত্তিতে স্পেন বা ফ্রান্স থেকে প্রবেশ করেন, বিশেষত দেশটির করমুক্ত কেনাকাটার সুবিধা গ্রহণের জন্য। পর্যটন দেশটির আয়ের মূল উৎস। ১৯৩৩ সালে এনডোরবাসী স্বাধীন গণতান্ত্রিক হিসাবে প্রথম সংবিধান পাশ করে। পিরেনিজ পর্বতমালার উপত্যকায় গড়ে ওঠা এনডোরাতেও কোনো এয়ারপোর্ট নেই। ফ্রান্স বা স্পেনে নেমে সড়ক পথে দেশটিতে যাওয়া যায়। তবে স্পেনের গিরোনা-কস্টা ব্রাভা এয়ারপোর্টই দেশটির সব থেকে কাছে।

পৃথিবীর পঞ্চম ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র সান মেরিনোতেও কোনো এয়ারপোর্ট নেই। পর্বতময় দেশটির চারপাশে ইতালি। এপেন্নিনে পর্বতমালার উত্তরপূর্ব দিকে ইতালীয় উপদ্বীপে সান মেরিনো দেশটির অবস্থান। এর আকার মাত্র ৬১ কিলোমিটার ২৪ বর্গ মাইল-এর সামান্য বেশি। জনসংখ্যা ৩৩,২২৭ জন। এর রাজধানী সান মারিনো শহর এবং এর বৃহত্তম শহর সেররাভাল্লে। দেশের অর্থনীতি প্রধানত পর্যটন উপর নির্ভর করে। সান মারিনোকে একটি অত্যন্ত স্থিতিশীল অর্থনীতি বলে মনে করা হয়, ইউরোপের সর্বনিম্ন বেকারত্বের হারের মধ্যে কোন জাতীয় ঋণ এবং বাজেটের উদ্বৃত্ত মূল্য। রিমিনি শহরের ফেলিনি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নেমে সান মেরিনোতে যেতে হয়।