ইফতারের শাহী শরবত

এখন পবিত্র রমজান মাস। আর কয়েকদিন পরেই আকাশে উঁকি দেবে ঈদের চাঁদ। আকাশে চাঁদের উপস্থিতি গণনা করে এই মাস নির্ধারণ করা হয়। ইসলামিক ক্যালেন্ডারের নবম মাসটিই হল ‘রামাদান’ বা রমজান মাস। কথিত আছে, এই মাসেই হজরত মহম্মদ পবিত্র কোরানের উপদেশগুলি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
ইফতারে বাড়ির সকল সদস্য এমনকী আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব একসঙ্গে আহার গ্রহণ করেন। রোজকার নিয়ম মাফিক খাদ্য তালিকারও কিছু অদলবদল ঘটে তো যায়ই। সেই অদলবদলের পরম্পরা আজ অন্য একটা ইতিহাস তৈরি করে ফেলেছে। তাই ইফতারের খাবার তালিকা মানেই তা গড়পড়তা তালিকা থেকে স্বাদে গন্ধে বা চরিত্রে একেবারেই আলাদা।
‘রামাদান’ শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ ‘রামীদা’ বা ‘আর-রামাদ’ থেকে যার মানে করলে দাঁড়ায় ভয়াবহ দাবদাহ। রমজান পালনের মাধ্যমে মানুষ শিক্ষা পায় ত্যাগ এবং কৃচ্ছ্বসাধনের।
রমজানের একমাস ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সকালে সূর্য ওঠার আগে আহার করেন। একে বলে সেহরি। তারপর সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আবার আহার গ্রহণ করেন। একে বলে ইফতার। সেহরির সময় থেকে ইফতার পর্যন্ত দীর্ঘ সময় প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা খালিপেটে থাকেন সকলে। এর জন্য সেহরির খাবারে থাকে শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাবার যা শরীরে দীর্ঘক্ষণ শক্তি যোগায়, পেশিকে মজবুত রাখে, কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেহরি ও ইফতারে প্রচুর পরিমাণে সরবত জাতীয় খাবার রাখা হয়। ফল, শাকসবজি, রুটি, ভাত, আলু, মাছ, মাংস, দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার, চর্বি ও মিষ্টি খাওয়া হয়। তাই ইফতার শুরু করা হয় খেজুর দিয়ে। এর সঙ্গে নানা ধরনের ফলের রস। চলুন শিখে নিই কয়েকটি শরবতের রেসিপি -
শাহী পেস্তার শরবত:
উপকরণ :
দুধ ১ লিটার, পেস্তা বাদাম ১৫/২০টি, সবুজ ফুড কালার ২/৩ ফোঁটা, গোলাপজল ১ টেবিল চামচ, জাফরান সামান্য, চিনি আধা কাপ বা প্রয়োজনমতো।
প্রণালী :
দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে। গরম দুধে চিনি, বাদাম বাটা, পেস্তাবাদাম বাটা, ফুড কালার ও গোলাপ জল মিশিয়ে ঠান্ডা করার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন।
শসার শরবত:
উপকরণ :
শসা কুচি ১ কাপ, জল ২ কাপ, ধনে পাতা কুচি ১ টেবিল চামচ, নুন পরিমাণমতো, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, বিট লবণ আধা চা চামচ, কাঁচালঙ্কা কুঁচি ১টি, বরফ কুঁচি পরিমাণমতো।
প্রণালী:
সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে করে বরফকুঁচি দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
আখের গুড় ও লেবুর সরবতঃ
উপকরণ : আখের গুড় ১ কাপ, বড় লেবু ২টি, ১ চা চামচ বিটনুন গুঁড়ো, ৪ কাপ ঠান্ডা জল
প্রণালী:
আখের গুড় ভালো করে মিশিয়ে লেবুর রস মেলাতে হবে। বিটনুন দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। সবশেষে বরফের কুঁচি দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
দই দিয়ে বেলের শরবতঃ
উপকরণঃ
বেল ছোট চারটি বা বড় দুটি, মিষ্টি দই আধা কাপ বা স্বাদমতো, চিনি বা গুড় স্বাদমতো, জল ২ গ্লাস, দুধ ১ থেকে ২ কাপ, নুন স্বাদ অনুযায়ী।
প্রণালীঃ
বেল ভেঙে ভেতরের অংশকে কুড়িয়ে নিতে হবে। তারপর দু’গ্লাস জল দিয়ে আধঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার হাত দিয়ে ভালোভাবে চটকে নিয়ে যতদূর সম্ভব আঁশ উঠিয়ে নিতে হবে। অথবা বড় চালনিতে ঢেলে আঁশ ছাড়িয়ে নেওয়াও যেতে পারে। এবার বেলের সঙ্গে মেশাতে হবে দই, চিনি বা গুড়, দুধ, নুন। ফ্রিজে ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে হবে।
ফল-আইসক্রিমের ককটেল
উপকরণ :
তরমুজ কিউব করে কাটা এক কাপ, আনারস কিউব করে কাটা এক কাপ, কমলা এক কাপ, আপেল কিউব করে কাটা এক কাপ, কলা কিউব করে কাটা এক কাপ, চিনি এক কাপ, এলাচ গুঁড়ো সামান্য, আইসক্রিম তিন টেবিল চামচ, আইস কিউব এক কাপ।
প্রণালী :
প্রথমে একটি ব্লেন্ডারে তরমুজ, আনারস, কমলা, আপেল, কলা ও চিনি এক সঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করতে হবে। এবার এতে আইসক্রিম, এলাচ গুঁড়ো ও আইসকিউব দিয়ে আবারও ব্লেন্ড করতে হবে। এরপর একটি গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করতে হবে।