No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    “আমি একজন গুটিয়ে থাকা মানুষ”

    “আমি একজন গুটিয়ে থাকা মানুষ”

    Story image

    অন্তরা চৌধুরী একজন ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী এবং সুরকার। হিন্দি, বাংলা, তামিল, মালয়ালাম সহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন। তাঁর ‘বেঙ্গল নার্সারি সঙস’ বাঙালি শিশুদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাবা প্রখ্যাত সুরকার ও গীতিকার সলিল চৌধুরী এবং মা কণ্ঠশিল্পী সবিতা চৌধুরী। ভাই সঞ্জয় চৌধুরী একজন ভারতীয় সুরকার। বাবার কাছেই গান শেখার হাতেখড়ি মাত্র সাত বছর বয়সে। ‘বঙ্গদর্শন’-এর পক্ষ থেকে অন্তরা চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন সুমন সাধু। হাসিখুশি, প্রাণবন্ত অন্তরা শোনাচ্ছেন একজন ‘ইন্ট্রোভার্ট’ শিল্পীর গল্প।

    • একটা সময় ছিল যখন বাংলা গানের লিরিককে গুরুত্ব দেওয়া হত বেশি। এখনকার বাংলা গানে লিরিকের গুরুত্ব কতটা?

    আমার গানের জগতটা হচ্ছে বাবার গান। ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল, ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল এসবই বেশি শুনি। এখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অনেক কাজ করছে দেখি। কথাপ্রধান গান শেষ শুনেছিলাম হয়ত সুমনদার গানে। তারপর কিছু ব্যান্ডের গান, যেমন সুরজিত, অনিন্দ্য-উপল এঁদের থেকে শুনেছি। রূপঙ্করের গান খুব শুনি। কয়েকটা গান ভালো লাগে খুব। কিন্তু কথাপ্রধান গানের যুগ মনে হয় চলে গেছে। এখন অনেকবেশি কলোকিয়াল হয়ে গেছে। আমার বাবাদের সময়ও ছিল, কিন্তু তার মধ্যে একটা পোয়েট্রি ছিল। বাবার একটা গান আছে “যা গেছে তা যাক”, এগুলো এক একটা কবিতার মতো। এখন তো ক্লাসিক্যালের কোনোকিছুই আমি পাই না। খুব কম। তাই লিরিকের গুরুত্ব ব্যক্তিগতভাবে আমি পাচ্ছি না এখন। কেন জানি না হারিয়ে গেছে। যদিও শ্রীজাতর লেখা কয়েকটা গান বেশ ভালো লেগেছে। এরকম টুকরো টুকরো ভালোলাগা আছে।

    • পুজোয় বাংলা গানের অ্যালবাম থেকে কি নজর তুলে নিচ্ছে আজকের শ্রোতা?

    এখন গান-বাজনার পুরো ব্যাপারটাই পাল্টে গেছে জানো তো। এখন ইন্টারনেটের যুগে সব গান তুমি ইউটিউবে পেয়ে যাচ্ছ। মিউজিক কোম্পানিরা রিস্ক নিতে চাইছেন না আর। শিল্পীরা দেখছে কেউ তো আর কারোর গান কিনছে না। যে যার নিজের মতো ইনভেস্ট করে গান রেকর্ড করছে। নিজের ঢাককে নিজেই পেটাতে হচ্ছে। আবার কোয়ালিটিরও ভীষণ অভাব দেখা যাচ্ছে। কারণ আমরা টেকনোলজিটাকেই মিসইউজ করছি। এখন পিচ কারেক্টার এসে গেছে, যে কেউ গান গাইছে। যার ফলে প্রত্যেকেই গায়ক-গায়িকা হয়ে যাচ্ছেন। সবাই যদি এখন গান-বাজনা শুরু করে, তাহলে যারা বহুদিন ধরে রেওয়াজ করে সাধনার মতো গানটাকে আত্মস্থ করার চেষ্টা করছে, তাদের কী হবে! আর যারা নিজেদের বেশি মার্কেটিং করতে পারবে, তারা এগিয়ে যাবে। যারা ইন্ট্রোভার্ট, তারা পিছিয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে আসলে। লোকে এখন ফ্রি জিনিসে লাইক দেবে, কমেন্ট করবে, ম্যাক্সিমাম শেয়ার করবে; কিন্তু কেউ কিনবে না।

    • একসময় আপনি শিশুদের জন্য প্রচুর গান গেয়েছেন। এখনও বাচ্চাদের যে-কোনো অনুষ্ঠান মানেই আপনার গান। আপনার পর এই তালিকায় খুব বেশিজনের নাম শোনা যায় না কেন? সেই ক্রেজটাই কি নষ্ট হয়ে গেছে?

    হ্যাঁ, লোপামুদ্রা কয়েকটা ছোটদের গান করেছে। অমিত ব্যানার্জী, কল্যাণ সেন বরাট এঁরাও বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেছেন। আসলে আমার বাবার গানের মূল যে কনসেপ্ট, এই চিন্তাটা তো সাধারণ চিন্তা নয়। আমার খুব সৌভাগ্য যে ওই সময়টা জন্মেছিলাম, তাই গানগুলো পেয়েছিলাম। এখনকার বাচ্চারা আমার বাচ্চা বয়সের থেকে অনেক ভালো গান করে। কিন্তু ছোটরা ছোটদের গান গাইতে চায় না, এটা ভুল কথা। আমার একটা মিউজিক স্কুল আছে, ‘সুরধ্বনি’, যেখানে আমি আমার গাওয়া ছোটদের গান ছোটদেরই শেখাই। সেখানকার বাচ্চারা দারুণ এঞ্জয় করে। তাই ছোটরা যে ছোটদের গান এঞ্জয় করছে না তা নয়, আমরা আসলে দিচ্ছি না। আমি বাচ্চাদের নিয়ে একটা ছবিও করেছিলাম সুরকার হিসাবে, ‘সাধুবাবার লাঠি’। বাচ্চাদের নিয়ে অন্যরকমভাবে কিছু কাজ শুরু করেছি এখন। আমি সবসময় ওদের জন্য ভাবি।

    • মাত্র সাত বছর বয়স থেকে আপনি গান গাইছেন। বাবা সলিল চৌধুরী, মা সবিতা চৌধুরী আপনাকে গান শেখাচ্ছেন। সেইসব অভিজ্ঞতা থেকে একটু বলুন।

    ছোট থেকে আমি পুতুল খেলতে খেলতে গান করতাম। একদিন হিন্দি ছবির অফার এলো বাবার কাছে। ছবির নাম ‘মিনু’, বাবারই লেখা গল্প। তখন বাবা একটা বাচ্চাদের গলা খুঁজছিল। আর আমাদের ছোটবেলায় সব বাচ্চাদের গান লতাদি, আশাদিরা গাইতেন। তখন মা-ই বাবাকে বলল মেয়েকে দিয়ে গাওয়াও, ও সারাক্ষণ লতার গান করে। তারপর বাবা আমার একটা অডিশন নিল। বাবা বলল গলায় সুর আছে, তাল আছে, ঠিক আছে ওকে দিয়ে চেষ্টা করব। সেই থেকে শুরু হল আমার একের পর এক গান গাওয়া। মান্নাকাকার সঙ্গে গাইলাম। প্রত্যেকটা গানের রেকর্ডিং-এর পর বাবা আমায় কোলে নিত, এটাই ছিল গিফট। তারপরেই বাবা বলল তোমায় গানের বেস তৈরি করার জন্য ক্লাসিক্যাল শিখতে হবে। কৃষ্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমায় ভর্তি করানো হল। ওঁর কাছে দশ বছর শিখেছিলাম। তারপর শ্রীকান্ত বাকরেজির কাছে আরও তিন বছর শিখেছি। পাশাপাশি চলল ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল শেখা। পড়াশোনা আর গান বাজনা এসব ছাড়া আমার জীবনে কিছু ছিল না। আমি খুব ওই পরিবেশটা মিস করি। একটা ঘরে বাবা পিয়ানো প্র্যাকটিস করছে, একটা ঘরে মা হারমোনিয়াম নিয়ে বসেছে, একটা ঘরে দাদা ড্রাম বাজাচ্ছে- সারাদিন আমার এইভাবে কেটে যেত।

    • চলচ্চিত্রে আপনাকে খুব বেশি গান গাইতে দেখা যায় না কেন?

    আমি একটু গুটিয়ে থাকা মানুষ। আমার বাবা যতদিন ছায়ার মতো ছিল, ততদিন কাজ করেছি প্রচুর। বম্বেতে গেয়েছি সুধীর মিশ্রর ছবিতে, কলকাতায় গৌতম ঘোষের ছবিতে গান গেয়েছি, শান্তনুর সুরে ‘অন্তহীন’ ছবিতে গেয়েছি। কিন্তু ওই ঘরে ঘরে গিয়ে আমাকে একটা গান দাও বলতে পারি না একদম। কিছু মানুষের কাছে আমি কমফর্টেবল। বাবা মারা যাবার পর আমার কাজের দরকার ছিল, সেসময় প্রচুর স্ট্রাগেল করেছি। বম্বেতে গিয়েছি, চেন্নাইতে গিয়েছি। এ.আর রহমানের জন্যেও গেয়েছি। এখন যদি কাজ আসে নিশ্চয় করব। নতুন গান হলে ভালো, নাহলে তো বাবার গান নিয়ে বেঁচে আছি।

    • এখন রেওয়াজ কীভাবে চলে আপনার?

    রেওয়াজ আমার ফুল টাইম। সকালে এক ঘণ্টা, বিকেলে এক ঘণ্টা। এর মাঝে ক্লাস আছে, রেকর্ডিং আছে, টিভি শুটিংগুলো আছে। আর মাঝে মাঝে হাজবেন্ডের সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাই, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিই।

    • ক্লাসিক্যাল থেকে ব্যান্ড, সেখান থেকে ফিউশন। বাংলা গানের এই বিবর্তন সম্পর্কে কিছু বলুন।

    ফিউশন আমার খুব একটা ভালোলাগে না। একইসঙ্গে মনে হয় বোরিং লাগছে। খুব বেশিক্ষণ শুনতে ইচ্ছা করে না। আমি যখন ক্লাসিক্যাল শুনি তখন পিওর ক্লাসিক্যাল শুনি, ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল শুনলে সেটা পিওর ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল হয়। বা আমি দেখেছি কেউ আধুনিক গানটা গাইছে, আরেকজন ওই রাগের উপরেই আলাপটা গাইছে; এরকম কিছু কিছু গান বেশ ভালো লাগে। কিন্তু সমস্ত গানের ফিউশন হলে আমি খুব কনফিউশনে পড়ে যাই।

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @