হওয়া না হওয়া গান : সপ্তর্ষি রাউতের সংগীত-জার্নাল

হওয়া না হওয়া গান প্রকাশ করছেন সপ্তর্ষি রাউত ও রঞ্জন প্রসাদ
একটি বাড়িকে উদ্দেশ্য করে সাইমন এবং গারফাঙ্কেল গেয়েছিলেন Homeward Bound গানটি, যেখানে তাঁরা বলছেন, Home where my thought’s escapin’/ Home where my music’s playin’/ Home where my love lies waitin’। আবার মৌসুমি ভৌমিক তাঁর “বাড়ি কোথায়” গানে নিরবিচ্ছিন্ন এক আর্তি নিয়ে বার বার জানতে চেয়েছেন, “বাড়ি কোথায়? বাড়ি কোথায়? বাড়ি কোথায়?” এ খোঁজ শুধু পরিচিত আস্তানার কথা বলে না, আমাদের মনের ভিতর যে ঘর আছে, যেখানে বিচিত্র কর্মকাণ্ড চলে, যেখানে নিজের সঙ্গে টানাপোড়েন চলে, নিজেরাই যেখানে প্রবেশ করতে পারি না অনেক সময় –এই গান সেই খোঁজেরও। কারো ঠিকানা হারিয়ে যায়, কারো থাকে/ থাকে না, কারো বদলে যায়। কিন্তু ‘শিকড়’? শিকড় ছেঁড়া সহজ কথা নয়। সেই শিকড়ে যখন যখন টান পড়ে মন গুনগুন করে ওঠে “বাড়ি কোথায়? বাড়ি কোথায়? বাড়ি কোথায়?”
বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে দেবাশিস সেন শর্মা (মিকি), সপ্তর্ষি রাউত, রঞ্জন প্রসাদ, সপ্তর্ষি প্রকাশনের সৌরভ এবং গোর্কি মুখার্জি (বাঁদিক থেকে)
২০১৪ সালে প্রকাশিত গানের অ্যালবাম “শিকড়” জানা শুনেছেন, তাঁরা জানবেন সেখানেও একটি গান আছে “বাড়ি কোথায় আমার কোথায় ঘর বাঁধলি তুই”। সেই একই নিরবিচ্ছিন্ন আর্তি। গানটি গেয়েছিলেন সাহানা বাজপেয়ী, সুর স্যমন্তক সিন্হা-র, লিখেছিলেন সপ্তর্ষি রাউত। দীর্ঘ ১৫ বছরের বিরতির পর, শিকড়ের টানেই “শিকড়”-এর প্রত্যেকটি গান লিখে ফেলেছিলেন লন্ডননিবাসী সপ্তর্ষি। সম্প্রতি সপ্তর্ষি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বই “হওয়া না হওয়া গান”। ২০২৪-এর ১৫ জানুয়ারি দক্ষিণ কলকাতার পরাশর রোডের আবার বৈঠক ক্যাফেতে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হয়েছে বইটির, প্রকাশ করেন স্বনামধন্য গায়ক-গীতিকার রঞ্জন প্রসাদ।
গান যতটা সংগীতকারের ততটাই শ্রোতার। কিন্তু আমরা কি জানি কী কী ভাবে বুনে ওঠে গানের এক একটা শব্দবাক্যরূপ? সংগীতকার সপ্তর্ষি রাউত এমন কিছু গানের জন্মদিন নিয়ে গেঁথে ফেলেছেন এই জার্নাল।
রঞ্জন প্রসাদ এদিন বলছিলেন, একটি গান কীভাবে বৈশ্বিক হয়ে ওঠে, আপনার থেকে আপামরের হয়ে ওঠে। দেশ থেকে দেশান্তরে পৌঁছে যায়। কিছু গান, গান হয়ে ওঠে; কিছু হয় না। কিন্তু প্রত্যেকটি গানের নেপথ্যেই থাকে জার্নি, নিজস্ব গল্প। “হওয়া না হওয়া গান” সেইসব জার্নির কথা বলে। সপ্তর্ষির বেড়ে ওঠা দক্ষিণ কলকাতায়, আশি-নব্বই দশকে। বালিগঞ্জ সরকারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই কবিতা-গান লেখা শুরু। পরবর্তী সময়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একাধিক ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। কিন্তু নতুন দশক শুরু হতে লেখালেখি বন্ধ করে দেন সপ্তর্ষি। কাজের সূত্রে পরবাসী হয়ে, ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং-এর নামকরা প্রতিষ্ঠানের সিঁড়ি বেয়ে হারিয়ে যাওয়া লেখা এক ধাক্কায় ফিরে আসে একযুগেরও পর। ২০১৪ সালে, সাহানা-স্যমন্তক-গোর্কির সঙ্গে বের হয় অ্যালবাম, “শিকড়”। পরের দশ বছরে সপ্তর্ষি লিখেছে, যার বেশ কিছু হয়ে উঠেছে গান, আর অধিকাংশই সুরের মেলবন্ধনের অপেক্ষায়। এই বই সেই সব হওয়া-না-হওয়া গানের, আর তাদের হয়ে ওঠা গল্পের—যাতে মন ভাঙা, ঘর ভাঙা, মন খারাপের সঙ্গে সঙ্গে আসে দেশ ভাঙা রাজনীতি, আসে ঘরে ফেরা, আসে ঘর বাঁধা ভালোবাসা।
“যখন কলকাতায় ছিলাম, পড়াশোনা করছি, একাধিক ব্যান্ডের সঙ্গে গান লিখেছি। তারপর চাকরি নিয়ে প্রথম দেশের বাইরে চলে যাওয়া। পরবর্তী দীর্ঘ ১৪ বছর আমি কোনও গান লিখিনি, সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আবার গান লেখা শুরু করি ২০১৪ সালে। সাহানা-স্যমন্তকের সঙ্গে বেশ কিছু কাজ করেছি, স্বাধীন ভাবে কাজ করেছি। এই বইটা কিন্তু বিখ্যাত হয়ে ওঠা গানটান নিয়ে নয়। আমার অধিকাংশ গানই না হয়ে ওঠা গান। গত বছর জীবনে বেশকিছু ঘটনার সম্মুখীন হয়ে নিজের কাছে প্রতীজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম যে আমার গানের গল্পগুলো বলবো। আমি কবিতা লিখি না, গানই লিখি। এই বই তারই ফলপ্রসূ হয়ে ওঠা। বইটা তিনটে অধ্যায়ে ভাগ করেছি – মন/ঘর ভাঙার গান, রাজনৈতিক গান, প্রেমের গান। মোট ৩৬টি গান আর তার নেপথ্য গল্প আছে।” বঙ্গদর্শন.কম-কে জানান সপ্তর্ষি।
গান যতটা সংগীতকারের ততটাই শ্রোতার। কিন্তু আমরা কি জানি কী কী ভাবে বুনে ওঠে গানের এক একটা শব্দবাক্যরূপ? সংগীতকার সপ্তর্ষি রাউত এমন কিছু গানের জন্মদিন নিয়ে গেঁথে ফেলেছেন এই জার্নাল। আর সেই জার্নালে অসীম মমতায় রং-তুলির স্পর্শ করেছেন স্বনামধন্য শিল্পী হিরণ মিত্র। এ বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ তাঁর। এক অনস্বীকার্য যুগলবন্দিতে গড়ে উঠেছে “হওয়া না হওয়া গান”। এই বইয়ের মুখবন্ধ লিখেছেন সপ্তর্ষি রাউতের দীর্ঘকালীন বন্ধু সংগীতশিল্পী সাহানা বাজপেয়ী।