No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ‘হাওড়া’ শব্দটি কীভাবে এল

    ‘হাওড়া’ শব্দটি কীভাবে এল

    Story image

    ‘হাওড়া’ শব্দটি উদ্ভূত হল কীভাবে এবং কীভাবে তা সমগ্র জেলার নাম-পরিচায়ক হয়ে উঠল, তা নিয়ে নানা মতামত প্রচলিত রয়েছে।

    এল.এস. এস ও’ম্যালী এবং এম. চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘হাওড়া জেলা গেজেটিয়ার’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, হাওড়া নামটির উৎপত্তি সম্ভবত ‘হাবোড়’ শব্দ থেকে। পূর্ব বাংলায় ‘হাওড়’ শব্দে বোঝায় নীচু জলাজমি। তবে এই শব্দটি বাংলার পশ্চিম-অংশে সুপ্রচলিত নয়।

    জে. ব্যানার্জী, সেক্রেটারী, হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃক সংকলিত ও সম্পাদিত ‘হাওড়া সিভিক কম্‌প্যানিয়ন’ গ্রন্থে মন্তব্য করা হয়েছে - হাওড়া নামটি নিশ্চিতভাবেই এসেছে ‘হাড়িড়া’ শব্দ থেকে- এই হাড়িড়া শব্দটির মূলে আছে হাড়োয়া অথবা হোয়াড় কিংবা হাওড় বা হায়ার কিংবা হায়র বা সায়র, যার অর্থ হচ্ছে সাগর, সমুদ্র। প্রাচীনকালে সাগরের তটেই তো এই অঞ্চলটি অবস্থিত ছিল। ওড়িয়া ভাষায় ‘হাবোড়া’ অর্থ, খানা খন্দ, খাল-বিল, জলমগ্ন এলাকাই অবস্থিত ছিল।

    সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অভিমত হচ্ছে, ‘ড়া অনুসর্গযুক্ত স্থান-নাম কিংবা দেশ-নামের উৎপত্তি ঘটেছে- অস্ট্রিক (কোল) শব্দ ‘ওড়াক’ থেকে, যার অর্থ বাসগৃহ।

    অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘হাওড়া শহরের ইতিবৃত্ত’ (প্রথম খণ্ড) গ্রন্থে নামকরণ প্রসঙ্গে আলোকপাত করে বলেছেন - ‘ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই শহরের পুরাতনপন্থী লোকেরা বলত ‘হাবড়া’, সেই নামেই জেলা। ...কেউ কেউ বলেন যে, হাওড়ার আসল নাম হাড়িয়ারা বা হাড়িয়াড়া। এ অঞ্চলে আড়া শব্দের অর্থ জলাশয়ের উচ্চ পাড়। বোধহয় হাড়ি সম্প্রদায় কোন জলাশয়ের উচ্চপাড়ে বসতি করেছিল বলে এই অঞ্চলের নাম হাড়িয়াড়া, তার থেকে হাবড়া ও হাওড়া। হাওড়া, হাবড়া হাড়িয়াড়া থেকে জন্মলাভ করেছে, তা প্রমাণের মতো কোনো তথ্য-উপাদান আপাতত হাতে নেই।’

    হাওড়া নামকরণের উদ্ভব ও প্রচলন বিষয়ে বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতিবিদ তারাপদ সাঁতরা মন্তব্য করেছেন, ‘...নামটির ব্যুৎপত্তি নিয়ে আলোচনা করলে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলে ‘আড়া’ – অন্ত বহু গ্রাম-নামের দেখা মেলে। এখানে ‘আড়া’ অর্থে বাসস্থান। ...সম্ভবত হাঁড়া পদবীধারী হা হাড়ি সম্প্রদায়ের বসতির দরুণ ‘হাড়িড়া’- পল্লীর নাম কালক্রমে হাড়িড়া থেকে চলতি কথায় উচ্চারণগতভাবে হাইড়িয়া এবং পরে হাইড়্যা হয়ে হাওড়া নামে রূপান্তরিত হয়েছে।

    এছাড়া হাওড়া নামে ব্যুৎপত্তি বিষয়ে অন্য একটি সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। গ্রাম-নাম গবেষণায় এ-কথা স্বীকৃত যে, অতীত বাংলার অধিকাংশ গ্রাম-নামের সৃষ্টি হয়েছিল নানাবিধ বৃক্ষলতাকে কেন্দ্র করে। ...ষোল শতকের কবি মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে উল্লিখিত হারিড়া গাছের আধিক্যের জন্য সেখানের সাবেক নামকরণ হয়েছিল হড়িড়া বা হাড়িড়া, যা পরে এই হাওড়া নামে রূপান্তরিত।’

    হাওড়া নামের উদ্ভব ও প্রচলন নিয়ে যতই বিতণ্ডা থাকুক, দেখা যাচ্ছে, ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ তারিখ, বুধবার ‘দ্য ক্যালকাটা গেজেট’ – অর্থাৎ রাজপত্রে প্রদত্ত বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কারভাবে ইংরেজি বানানে HOWRAH (হাওড়া) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এরপরে ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ অগস্ট মঙ্গলবার, সূচনা-প্রান্তিক ষ্টেশনরূপে হাওড়া থেকে রেলপথ চালু হবার পর ‘হাওড়া’ নামটি পাকাপাকিভাবে প্রচলিত হয়ে যায়। শ্রীরামপুর(হুগলি) থেকে প্রকাশিত রেলওয়ে সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ও ভাড়ার তালিকায় ইংরাজিতে ‘HOWRAH’ লিখিত হয়েছিল।

    এই ভাবে নগর কলকাতার বিপরীত দিকে অবস্থিত জেলা শহর হাওড়া-র নামেই জেলাটির নামকরণ প্রচলিত হয় সরকারের দপ্তরে ও সাধারণের মধ্যে।

    (ঋণ – জেলা লোকসংস্কৃতি পরিচয় গ্রন্থ ‘হাওড়া’-র ‘জেলা পরিচিতি’ অংশ থেকে গৃহীত)

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @