মউলিদের আশার আলো দেখাচ্ছে দেগঙ্গার মধু হাব

মধুর দেশ এই রাজ্য। গোটা রাজ্যে প্রায় একলক্ষ মধুচাষির বাস। উৎকৃষ্ট মধু উৎপাদনের পরেও ফড়েদের কবলে পড়ে প্রাপ্য দাম পান না তারা। মধুচাষি বা মউলিদের আর্থিক দুরাবস্থা কমাতেই তৈরি হচ্ছে মধু হাব। দেগঙ্গায়। মধুর প্রাপ্য দাম এবং সরকারি নজরদারিতে রপ্তানি—এই দুই সমাধানে নতুন আশায় বুক বাঁধছেন মউলিরা।
বিশ্বের দরবারে ভারী কদর সুন্দরবনের বনফুলের মধুর। এছাড়াও, সর্ষে, পদ্মের ফুল, আম, লিচু, কমলার মধুও বিখ্যাত। অসংখ্য মৌমাছি পালক বা মউলিদের জীবন-জীবিকা নির্ধারিত হয় মধু সংগ্রহ ঘিরে। চাক-ভাঙা মধু জোগাড় করতে প্রাণ হাতে নিয়ে বনে ঢোকেন সুন্দরবনের মউলিরা। আবার, দেগঙ্গা ও তার আশেপাশের গ্রামেও রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার মৌমাছি পালক। এরা মৌমাছি প্রতিপালন করেন। বছরে প্রায় ১৬ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপন্ন হয় এই রাজ্যে। গোটা দেশের এক-ষষ্ঠাংশ-এরও বেশি। অথচ, এই মধুর অধিকাংশই সামান্য টাকার বিনিময়ে ফড়েদের হাত ঘুরে চলে যায় ভিন রাজ্যে। মধুর দেশের মউলিদের আর্থিক দুর্দশা কমে না।
মউলিদের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতেই এবার মধু হাব গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিয়েছে রাজ্য সরকার। দেগঙ্গার কাছে বিশ্বনাথপুর ক্যাম্পে এক একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে এই হাব গড়ে তোলার জন্য। রাজ্যের উদ্যান পালন দপ্তর সমবায় ব্যাংকের আর্থিক সাহায্যে শুরু করতে চলেছে এই হাব তৈরির কাজ। অংশীদার হবেন মউলিরাও। আপাতত বিনিয়োগ করা হবে প্রায় ১০ কোটি টাকা।
এই হাবে দৈনিক ৩০০ কিলো মধুর প্রসেসিং সম্ভব। হাবের মধ্যেই থাকবে আধুনিক ল্যাবরেটরি, প্রসেসিং ইউনিট, কালেকশন কাউন্টার, প্যাকেজিং সেন্টার ইত্যাদি। বাজার ধরতে ব্র্যান্ডিং-এর দিকেও নজর দেওয়া হবে। এই মধু হাবের নাম ‘সুন্দরবন হানি হাব’ রাখার প্রস্তাব এসেছে।
শুধু সুন্দরবন বা দেগঙ্গাই নয়, গোটা রাজ্যে প্রায় এক লক্ষ মধুচাষি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে পোষা মধুদের ব্যবহার করে তারা মধুচাষ করেন। এইসব মধু চাক বাঁধে না। দাদন, ফড়েদের কবলের পাকে পড়ে উৎকৃষ্ট মধু উৎপাদন করা সত্ত্বেও প্রাপ্য দাম পাচ্ছেন না কেউই। রাজ্যেরও কোনো লাভ হচ্ছে না। নতুন মধু হাব মউলিদের মুখে হাসি ফোটাবে বলেই মনে করছে উদ্যান পালন দপ্তর। সেইসঙ্গে রাজ্যের আওতায় ও নজরদারিতে মধু রপ্তানির লাভও ঘরে আসবে।