কান্দির রাজবাড়িতে গৃহদেবতার ভোগ রাধাবল্লভী

জিনিসটা আদতে একটি অতীব সুস্বাদু খাদ্য বিশেষ। গালভরা একটা সংস্কৃত নামও রয়েছে তার – বেষ্টনিকা। বুঝলেন না তো কীসের কথা বলছি! আচ্ছা আরেকটু বলি। গরম গরম ধোঁয়া ওঠা... মুখে দিলেই চোখ অনির্বচনীয় এক আনন্দে নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে আসে। সঙ্গে মাখা মাখা আলুর দম বা ছোলার ডাল... স্বর্গীয় অনুভূতি...
কী বললেন, লুচি? ঠিক কাক্কেশ্বর কুচকুচের মতো মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলতেই হচ্ছে “হয়নি হয়নি ফেল”… তবে কাছাকাছি এসে পড়েছেন। এই খাবারটিও ময়দা, ডালবাটা, নুন, তেল অথবা ঘি সহযোগে তৈরি করা হয়ে থাকে। আরেকটু ক্লু দিয়েই দিই। মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির সিংহ রাজবাড়িতে এই বিশেষ খাবারটি দিয়ে গৃহদেবতা রাধাবল্লভের ভোগ দেওয়া হয়..... এই তো, এবার ধরেছেন, আমি রাধাবল্লভীর কথাই বলছি। শ্রীরাধিকার বল্লভ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণকে ভোগ দেওয়া হয় এই বড়ো আকারের ডালপুরি দিয়ে। সেখান থেকেই নাম হয়েছে রাধাবল্লভী।
আরেক দল গবেষকের মতে রাধাবল্লভীর আবিষ্কারক মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব। তিনি খড়দহের শ্যামসুন্দরের জন্য অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবার জন্য রাধাবল্লভীর উদ্ভাবন করেছিলেন।
আবার এমন মতও প্রচলিত যে শোভাবাজার রাজবাড়ির গৃহদেবতা রাধাভল্লভকে ডালের পুর দেওয়া বড়ো আকারের লুচি দিয়ে প্রতিদিন ভোগ দেওয়া হতো। সেখান থেকেই এই নামের উৎপত্তি।
তবে নামের পিছনে যে কাহিনিই থাকুক না কেন, রাধাবল্লভীর স্বাদ নিয়ে একটা শব্দই ব্যবহার করা যেতে পারে.....লা-জবাব। লুচির মতো ফুলকো নয়, কচুরির মতো মুচমুচেও নয়। আকারে লুচির থেকে বেশ কিছুটা বড়ো। পুরে ডাল থাকবে কিন্তু কচুরির মতো হিং থাকবে না। তার বদলে ছোলার ডাল বা বিউলির ডাল বাটা পাঁচফোড়ন, আদা, নুন ও চিনি সহযোগে তেলে বা ঘি’য়ে নরম আঁচে ভেজে নিয়ে পুর তৈরি করতে হবে। সেই পুর ময়দার লেচিতে মিশিয়ে , বড়ো বড়ো করে বেলে ঘি, তেল বা বনস্পতিতে ভাজলেই ব্যস্, রাধাবল্লভী তৈরি। যোগ্য সঙ্গতসঙ্গী মিষ্টি মিষ্টি ছোলার ডাল বা ঝাল ঝাল আলুর দম। আহা.... “মাটিতে যে আজ স্বর্গ এসেছে নামি”....
‘রাধাবল্লভ’-এর প্রিয় খাবার
এবার বরং বিখ্যাত এক দোকানের সুলুকও দেওয়া যাক। হয়তো বাড়িতে বানিয়েই আপনি সেরা রাধাবল্লভীটি ঠাকু্রকে ভোগ দেবেন, নিজেও তার স্বাদ গ্ৰহণ করবেন। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে কখনো সখনো আপনার বা আমার ইচ্ছে করেই যে বিখ্যাত কোনো মিষ্টির দোকানে গিয়ে রাধাবল্লভীর স্বাদ নিয়ে আসি। তাহলে আর দেরি কেন? সোজা চলে আসুন কলেজ স্ট্রিটের পুঁটিরাম। কেন অন্যান্য দোকান ছেড়ে পুঁটিরামের নাম বললাম? কারণ আছে বন্ধু। এই পুঁটিরামের আত্মীয় ছিলেন জিতেন্দ্রনাথ মোদক। তিনি নাকি প্রথম বৃন্দাবন থেকে রাধাবল্লভী তৈরির পদ্ধতি শিখে আসেন এবং এই পুঁটিরামের দোকানেই কলকাতায় প্রথম রাধাবল্লভী বিক্রি শুরু হয়। আর সাথে সাথেই যাকে বলে ‘সুপারহিট’..
তাহলে... এবার জেনে গেলেন তো ঐতিহাসিক ‘বেষ্টনিকা’র কথা? দেরি না করে গরম গরম বানিয়ে ফেলুন অথবা কিনে নিয়ে আসুন ‘রাধাবল্লভ’-এর প্রিয় খাবারটি।