শিয়ালদহে রেল চলাচলের ইতিহাস

শিয়ালদহের কথা হাওড়ার থেকে অনেকটাই আলাদা। ইস্টার্ন বেঙ্গল গ্যারান্টিড রেলওয়ের পত্তন করা হয় ১৮৬২ সালে। ১৮৮৪ সালে সরকার একে নিয়ে নেওয়ার পরে নাম বদল করে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে রাখা হল আর নর্থ বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে আর সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হল। তার পরে একে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের সাথে মিলিয়ে নাম রাখা হল বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম রেলওয়ে।
বর্তমান শিয়ালদহ দক্ষিণ স্টেশনের নাম আগে ছিল বেলেঘাটা। যেখান থেকে প্রথম গঙ্গার পূর্ব পাড়ের ট্রেন চলে। ট্রেন চলে পোর্ট ক্যানিং পর্যন্ত। পোর্ট ক্যানিং হচ্ছে বর্তমান ক্যানিং ষ্টেশন, মাতলা নদীর পাড়ে অবস্থিত। এটা হল ১৮৬২ সালের কথা। লাইন তৈরি করলেন ক্যালকাটা অ্যান্ড সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে কোম্পানি। এই কোম্পানি তৈরী হয় ১৮৫৯ সালে। কিন্তু পরে গভর্ণমেন্ট এই কোম্পানীকে অধিগ্রহণ করেন। ভারতবর্ষে এই প্রথম কোন কোম্পানীকে সরকার অধিগ্রহন করেছিল।
সরকারী কোম্পানি হিসাবে কলকাতা অর্থাৎ বেলেঘাটা থেকে ডায়মন্ড হারবার লাইনের সংযোগ হয় ১৮৮৩ সালে আর বেলেঘাটা বজবজ ১৮৯০ সালে। লক্ষীকান্তপুরের লাইন অনেক পরে ১৯২৮ সালের কথা।
এখনও শেয়ালদহ থেকে বাংলার উত্তরে এবং বর্তমান বাংলাদেশ আর আসামে লাইন নিয়ে যাবার প্রসঙ্গ আসেনি। ১৮৫৭ সালে কলকাতার সাথে এই সমস্ত জায়গার যোগাযোগ বানানোর জন্য ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি তৈরি করা হয়েছিল। ১৮৮৪ সাল নাগাদ রানাঘাট এবং বনগার সাথে রেল যোগাযোগ চালু হয়ে গেল।
যেহেতু শেয়ালদহ স্টেশনের এলাকা একটু নীচু কাদায় ভরা জলা জমি থেকে উদ্ধার করা তাই স্টেশন তৈরি করতে গিয়ে প্রায় ৫০ ফুট(প্রায় দশ মানুষের মত) গভীর গর্ত করে ভিত তৈরি করতে হয়েছিল। তা ছাড়া শেয়ালদহ থেকে প্রায় দমদম পর্যন্ত লাইনের জমি চারদিকের জমির থেকে মাটি ফেলে অনেক উঁচু করে তৈরি করতে হয়েছিল। কারণ হচ্ছে পুব-পশ্চিমের রাস্তা এবং জলপথগুলি।
এখন কিন্তু কলকাতার কাছকাছি গঙ্গার দুই পাড়ের মধ্যে রেলপথের যোগাযোগ করা যায়নি। এই যোগ সম্ভব হল গঙ্গার উপর হুগলিতে জুবিলি ব্রিজ তৈরি করার পরে। নৈহাটি আর ব্যান্ডেলের মধ্যে এই ব্রিজ তৈরি ১৮৮৭ সালে। পরে দক্ষিণেশ্বরের কাছে বিবেকানন্দ সেতু বা উইলিন্ডন ব্রিজ তৈরি করে গঙ্গের উপরে দুই পাড়ের আর একটি যোগসূত্র স্থাপন করা হয় ১৯৩২ সালে।
এদিকে বর্তমান বাংলাদেশের সীমান্ত গেদে-দর্শনা পেরিয়ে আগে লাইন ছিল উত্তরে শিলিগুড়ি পর্যন্ত যেখান থেকে টয় ট্রেন যেত দার্জিলিং। পদ্মার উপরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তৈরি হবার আগে পদ্মার উপরে ফেরির বন্দোবস্ত ছিল। ব্রিজ হয়ে যাবার পরে ট্রেন থেকে আর নেমে ফেরিতে চড়তে হত না। সান্তাহার-এর পরে স্টেশন পার্বতীপুর। এই পার্বতীপুর থেকে মিটার গেজের ট্রেন ছিল আসাম পর্যন্ত। কুচবিহার স্টেট রেলওয়ে লাইনটা বাড়িয়ে বক্সা জয়ন্তী হয়ে মালবাজার পর্যন্ত নিয়ে যান।
(ঋণ – দিলীপকেব্লগ ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম)