No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ব্রিটিশ যুগে বাঙালির কর্মকাণ্ড এবং সেকেলে কলকাতার বাবুঘাট

    ব্রিটিশ যুগে বাঙালির কর্মকাণ্ড এবং সেকেলে কলকাতার বাবুঘাট

    Story image

    লকাতার গঙ্গার ঘাট জুড়ে তখন কত কথা ও কাহিনি। কোনও ঘাটে সওদাগরের দল এসে নামে, তো কোনও ঘাটে মানুষজন নিজেদের ধর্মাচরণে ব্যস্ত থাকে। আবার কোনও ঘাটে শোনা যায় বিলিতি জাহাজের ভোঁ, তো কোনও ঘাটের নামই হয়ে যায় অন্য দেশের নামে, কারণ সেই অন্য দেশে তখন এ দেশ থেকে পাঠানো হচ্ছে দলে দলে দাস-দাসী। সে যাই হোক এমনই একটি ঘাটের নাম হল বাবু রাজচন্দ্র দাসের ঘাট।

    বাবু ধর্মপ্রাণ, বাবু মহানুভব তাই এমন বাবুর নামে তৈরি ঘাটকে কলকাতার মানুষ ভালোবেসে বলতে লাগলো বাবুঘাট। ইনি কলকাতার জানবাজারের জমিদার শুধু নন, হিসেব মতো ইনি কলকাতার রানি রাসমণিদেবীর পরম কুলীন স্বামীও বটে। রানিমা তাঁর স্বামীর নামে এই ঘাটের নাম রেখেছেন রাজচন্দ্র দাসের ঘাট। বলতে গেলে হিন্দু ধর্মাচারীর কত হরেক প্রকার কাজ থাকে গঙ্গাকে সামনে রেখে। কেবল স্নানযাত্রাতেই হিন্দুর কাজ থেমে থাকে না। কিন্তু তাঁর জন্যে সাজানো গোছানো ঘাটের বড়োই অভাব। এবার সেই অভাবই পূরণ হতে চলল।

    কিন্তু এই ঘাটের মাথায় যে ফলক লেখা আছে সেটি অন্য কারণে গুরুত্বের দাবি রাখে। সেই ফলকটি সকলের চোখের আড়ালে অন্য রকম একটি বার্তা প্রকাশ করে আসছে। এই বার্তার আড়ালে রয়ে গেল এক সাদামুখো সাহেবের দৃষ্টিভঙ্গি। সাহেবের নাম লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক। আঠারশো তিরিশের কলকাতা। বেশ গুছিয়ে যখন গ্রেকো রোমান আর্কিটেকচার নকশায় ডরিক কলাম সঙ্গে করে গড়ে উঠল ঘাটের চাতাল আর ছাঁদ নকশা। তখন এই সাহেব বিস্তর প্রশংসা করে বললেন এমন কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ ব্যয়কে দরাজ হস্তে সমর্থন করা দরকার। আর এই প্রশংসার উল্লেখও রইল ঘাটের ফলকের শরীরে। এমন প্রশংসা সে যুগে বিরল বললে কম বলা হবে। এটি কলকাতার এমন একটি ঘাট যেখানে প্রথম যুগে বসানো ছিল এমন একটি কল যা দিয়ে গঙ্গা থেকে জল তুলে কলকাতার ওই অঞ্চলের রাস্তাকে পরিষ্কার করা হত। এমন খবর পেয়ে কে না সাধুবাদ জানাবেন।

    বাবুঘাটের ঐতিহাসিক ফলক

    তা ছাড়া সতেরশো চুরাশির কলকাতার মানচিত্র বলে দেয় যে এই ঘাটের এলাকা থেকেই গণ্য করা হত ডিহি কলকাতার দক্ষিণের সীমানাকে। অন্তত কর্নেল উডের মানচিত্র সেরকমই কথা বলে আমাদের। সব মিলিয়ে কলকাতার একটি ঘাটের আড়ালে ধরা আছে ব্রিটিশ পতাকা যুগের বাঙালির কর্মকাণ্ডের এক বিশেষ বার্তা। যা সাহেবের মন জয় করেছিল অচিরেই। আর এই মন জয় করার হিসেব ধরা আছে ঘাটের পেডিমেন্টের ঠিক নিচে। বাবুঘাটে আজও লোকের ঢল নামে। কিন্তু ফলক নামায় লিখিত ইতিহাসটুকু ক’জনের আর পড়ে দেখার সময় আছে তা বলা বিস্তর মুশকিল।

     

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @