No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    “আমার লড়াইটা কিছু কমেনি, বরং আরও বেড়েছে”

    “আমার লড়াইটা কিছু কমেনি, বরং আরও বেড়েছে”

    Story image

    মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতবর্ষের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট। বর্তমানে কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের প্রিন্সিপাল এবং পশ্চিমবঙ্গ ট্রান্সজেন্ডার ডেভলপমেন্ট বোর্ডের ভাইস চেয়ারপার্সন। পেঙ্গুইন থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে আত্মজীবনীমূলক বই ‘আ গিফট অফ গডেস লক্ষ্মী’। বঙ্গদর্শনের পক্ষ থেকে ডঃ মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিলেন সুমন সাধু।

    • ঝাড়গ্রামে অধ্যাপনার সূত্রে আপনাকে নানারকম গঞ্জনার শিকার হতে হয়। নানা জায়গায় এসব কথা আপনি বলেওছেন। সেখান থেকে একটি মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল হওয়ার জার্নিটা কেমন ছিল? এখন কতটা এঞ্জয় করেন?

    আমার জার্নির কথা বলতে গেলে রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যাবে। এই সমস্ত কথা ‘আ গিফট অফ গডেস লক্ষ্মী’ বইয়ে লেখা আছে। আমার আত্মজীবনী। বইটা পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। সারা ভারতে বিভিন্ন ভাষায় বইটি অনূদিত হয়েছে। বাংলাতে এখনও হয়নি। কারণ ওটা আমিই লিখব। কারিগর থেকে সেই বইটা বেরোবে। আর মহিলা কলেজ আমি ইচ্ছা করেই নিয়েছি। আসলে অধ্যাপকেরা বদলায় না। যাহা ঝাড়গ্রাম, তাহাই কৃষ্ণনগর। সবজায়গায় এক। যদি আমার প্রাণে উৎসাহ থাকে, তাহলে একটা মরে যাওয়া বাগানকেও সাজানো যায়। কিন্তু উৎসাহ না থাকলে একটা সুন্দর বাগানকেও তছনছ করতে পারি। তাঁরা একসময় পাঁকে ডুবে যান। সেইজন্যই আমি এখন সেবার জীবনে আসতে চাইছি।

    • সুপ্রিম কোর্ট ৩৭৭ ধারা নিয়ে একটি ঐতিহাসিক রায় দিল কিছুদিন আগেই। আমাদের তথাকথিত সমাজের চোখে এই ‘পরিবর্তন’ সত্যিই কতটা পরিবর্তন এনে দিয়েছে?

    আগে যেমন কাজকর্ম চলত, এখনও তাই চলবে। একটা রায়েতে তো হঠাৎ করে মানসিক পরিবর্তন হয়ে যায় না। ধীরে ধীরে হয়। তবে আমার মনে হয় ৩৭৭-এর মধ্যে ট্রান্সজেন্ডাররা পড়ে না। আর হোমোসেক্সুয়ালিটি ছিল, আছে, চলবে। আইনের তোয়াক্কা না করেই চলবে। আইন প্রশাসন এগুলো সভ্যতা আসার পরে এসেছে। পশু-পাখি সবার মধ্যেই সমকামিতা থাকে। প্রকৃতিকে তুমি কীভাবে আইন দিয়ে বাঁধবে!

    • গ্রামের প্রান্তিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব যাদের মধ্যে কম এবং নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে যাঁরা সমকামী বা রুপান্তরকামী, তাঁদের লড়াইটা শহুরে ডিগ্রিধারী মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত এলজিবিটি কমিউনিটির থেকে কতখানি আলাদা বলে আপনার মনে হয়?

    গ্রামের মানুষরা সুপ্রিম কোর্টে যাবে না। তারা সত্যিই এতকিছু জানেও না। এটা কিন্তু সত্যি ঘটনা। তারা তো পরিশ্রম করে খায়। তারা কখন খবরের কাগজ পড়বে! ৩৭৭-এর ব্যাপারটাই হয়তো তারা জানে না। তাই তাদের কিছু যায় আসে না। টাকা-পয়সা থাকলেই সে হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্ট দেখাবে। আইন এমন একটা জিনিস, যেখানে পয়সা লাগবে। আবার শুধু পয়সা দিলেও হবে না, শিক্ষা বুদ্ধি এসবেরও তো দরকার আছে। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে- এটা তো আমার লেখা নয়। এখনও এটাই হয়ে আসছে।

    • আমি আগে আপনার ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখেছি, যে সমস্ত পুরুষরা নিজেদের মনেপ্রাণে নারী ভাবেন বা সেক্স চেঞ্জ করেছেন তাদের আপনি আশ্রয় দিয়েছেন। এই যে একসঙ্গে সঙ্গে থাকা, এটা নিয়ে কিছু বলুন।

    হ্যাঁ, আমার তো বিরাট আশ্রয়। কিছুদিন আগেই ২৩ সেপ্টেম্বর আমার জন্মদিন গেল। মানবী ফাউন্ডেশন নাম দিয়ে একটা এনজিও খুললাম। এবার আমাকে সরকার স্বীকৃত হতে হবে। মানে অসরকারি হতে গেলে যে সরকারি রেজিস্ট্রেশন দরকার, সেটা তো প্রয়োজন। আমি একটা প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার পেয়েছি। সেখানে অনেকে আসে, থাকে। এবার কজনকে আমি আশ্রয় দিতে পারব ওই ছোটো ঘরে? সেখান থেকেই মানবী ফাউন্ডেশনের ভাবনা। সত্যিই নিজের হাতে কাজ করতে চাইছি। আমি একটা কলেজের প্রিন্সিপাল, সেখানে হয়তো প্রচুর টাকা আছে। কিন্তু কাজ নেই তেমন। আমার মতো অনেকের জন্য কাজ করতে চাই।

    • সোমনাথ থেকে মানবী হয়ে ওঠার লড়াইয়ে সেই শুরুর দিনগুলো মিস করেন? নাকি সেগুলো আর মনে রাখতে চান না?

    আমার লড়াইটা কিছু কমেনি, বরং আরও বেড়েছে। সোমনাথকে নিয়ে টানাটানি করছ দেখে আমার মনে হচ্ছে তুমি ভবিষ্যতে অধ্যাপক হবে (হেসে)। আসলে কী জানো, সোমনাথকে আমার নাথবতী অনাথবৎ মনে হয়। সোমনাথকে মিস করা মানে পেনিসটাকে মিস করা। আর সেটা আমার জীবনে একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল। লড়াইয়ের দিনগুলো অবশ্যই মনে পড়ে, কিন্তু সোমনাথকে না। আর আগেই তো বললাম, লড়াই এখন আরও বেড়েছে। অনেক দায়িত্ব এসেছে। 

    • এলজিবিটি কমিউনিটির বহু মানুষের অনুপ্রেরণা আপনি। আপনার অনুপ্রেরণা বিশেষভাবে কেউ আছেন কি?

    শুধু শহুরে এলজিবিটি নয়, আমার কাছে অনেক গ্রামের ছেলেরাও আসে। গ্রাম মানে একদম প্রত্যন্ত গ্রাম। এই তো কদিন আগেই একজন এসেছিল। আমার কাছে বসে যাত্রাসুরে গান গাইল। এখন তার নাম প্রস্ফুটিতা সুগন্ধা। সে অঙ্কে মাস্টার্স করেছে। বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুরের মাথাখালি স্কুলে চাকরি করে। আর আমার জীবনের অনুপ্রেরণা তো অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতির ‘বাংলা শিক্ষার অবসান’ প্রবন্ধে লিখেওছেন পুরুষের থেকে প্রেমপত্র পাবার কথা। তাছাড়া ওঁর অনেক লেখাতেও ট্রান্সজেন্ডার প্রসঙ্গ এসেছে। আর একজন আছেন, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। যিনি একাধারে শংকর, অন্যধারে কালী। 

    • আপনাকে তো এবার চলচ্চিত্রেও দেখা যাবে...

    হ্যাঁ। কৌশিকের (গঙ্গোপাধ্যায়) ছবি ‘নগরকীর্তনে’ অভিনয় করেছি। আমি আমার চরিত্রেই অভিনয় করেছি। মানে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রেই। সবচেয়ে আনন্দ পেয়েছি ছবিটা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে বলে। এবছর গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও দেখানো হবে এই ছবি।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @