হাতের কাছে হেনরি আইল্যান্ড

আমরা গিয়েছিলাম কোজাগরী পূর্ণিমার পরের দিন। সন্ধ্যা নামল। সাদা চাঁদের আলোয় চরাচর ভেসে যাচ্ছিল তখন। মনে হচ্ছিল যেন কোন মায়াবী জগতে চলে এসেছি। আকাশ থেকে পরিরা যেন রুপা ছড়াচ্ছে। এই হল হেনরি আইল্যান্ডের রূপ।
সুন্দরী বা ম্যানগ্রোভ বুকিং হয় সরাসরি স্টেট ফিসারিস ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড এর ওয়েবসাইট থেকে অথবা বিকাশ ভবন। ১ম তল, নর্থ ব্লক, বিধান নগর, কলকাতা-৯১, এই ঠিকানায়। দূরাভাষ- ০৩৩ ২৩৫৮৩১২৩। কলকাতা থেকে হেনরি আইল্যান্ডের দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিমি সড়ক পথে। আরও ২.৫ কিমি এগিয়ে গেলে পরিচিত সমুদ্র সৈকত বকখালী। ধর্মতলা থেকে সরাসরি বাসে আসা যায়।
পরের দিন সকালে চোখ খুলতেই সব পরিষ্কার। অসংখ্য ভেড়ি আর মৎস্যরাজ্যের মাঝে একটা সুন্দর অবকাশ যাপনের জায়গা। হেনরি সাহেবের আবিষ্কার বিশেষজ্ঞ। বাইনোকুলার লাগিয়ে পাখি দেখতেন। তবে সাদা চোখে এখানে যা দেখা যায় তা এক কথায় অনবদ্য। ম্যানগ্রোভে ঘেরা এমন সমুদ্রসৈকত খুব একটা চোখে পড়ে না। সুন্দরী, গরান, হিজলের জঙ্গল একদিকে আর অন্য দিকে বঙ্গোপসাগর। তবে সমুদ্র এখানে অনেক দূরে, আর শান্ত। মনে হবে ক্যানভাসে আঁকা একটা ল্যান্ডস্কেপ। যদি ইচ্ছে থাকে পায়ে পায়ে ছুঁয়ে আসা যেতেই পারে ল্যান্ডস্কেপটাকে।

আমরা গিয়েছিলাম ভোরবেলায়। সূর্য ওঠা আর তার রং-এর খেলা অনেকক্ষণ ধরে ক্যামেরাবন্দী করেছিলাম। অবশ্য তার আগের দিন বিকেলেই ল্যান্ডস্কেপটাকে ছুঁয়ে এসেছিলাম আমরা। এখানে আরও একটি জিনিস আছে। অসংখ্য লাল কাঁকড়া। পা ফেলেছি কি পিঠ টান।

একটা কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। সূর্য ওঠার কথা বলার সময় মাছ ধরা দেখার কথাটা মনেই ছিল না। হ্যাঁ, ঠিক তাই। দেখি, মাছ ধরা তখন প্রায় শেষের পথে। আমরা স্থির করলাম মাছ কিনব। যেমন ভাবা তেমন কাজ। জীবনে মনে পড়ে না যে কোনদিন পাকা রসিদ দিয়ে মাছ কিনেছি। যে মাছটা কিনলাম সেটা একটা দশাসই তেলাপিয়া। ওজন দেখে তো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। প্রায় দু’কিলো। আর নাম। সেটা আরও সাঙ্ঘাতিক ‘মনোসেক্স’।

অনেকদিন আগে থেকেই এই হেনরি আইল্যান্ড নামটা মাথার মধ্যে ঘুরছিল। সাদা বালি, লাল কাঁকড়া, আর অসংখ্য মাছের ভেড়ি। একটা ওয়াচ টাওয়ার’ও আছে। থাকা খাওয়া বন্দোবস্ত ‘সুন্দরী বা ‘ম্যানগ্রোভ’এ। সমস্তটাই পরিচালনা করে স্টেট ফিসারিস ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড।

‘সুন্দরী’ সমুদ্রের খুব কাছে। তবে নন এসি। ডবল বেড দিন প্রতি ৮০০ টাকা ভাড়া। খাওয়া খরচ আলাদা। মৎস্য রসিক বাঙালিদের জন্য জ্ঞাতব্য যে, যে সমস্ত মাছ এখানে রান্না হয় তা সবই ভেড়ির, অতএব টাটকা এবং সুস্বাদু।
