No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    পঞ্চাশটি হেমন্ত পার ‘হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’-এর

    পঞ্চাশটি হেমন্ত পার ‘হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’-এর

    Story image

    ‘কতকালের পুরোনো নতুন চিঠি কুড়িয়ে পেয়েছে অই
    হেমন্তের অরণ্যের পোস্টম্যানগুলি
    একটি চিঠি হতে অন্য চিঠির দূরত্ব বেড়েছে কেবল
    একটি গাছ হতে অন্য গাছের দূরত্ব বাড়তে দেখিনি আমি।।’

    ভুরভুর করছে ফাল্গুন মাস। কলকাতায় তখনো অনেক গাছ। কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়ায় ফুল এসেছে। এমনই বসন্তে হেমন্ত অরণ্যের এক পোস্টম্যান নিয়ে এলেন তাঁর নতুন চটি কবিতার বই। তিনি অবশ্য বলতেন, পদ্য। ‘ঘাসে আবিল ভেড়ার পেটের মতন কত কালের পুরোনো নতুন চিঠি’-র হদিশ সেই বইতে। কবিতার নতুন বই এলে চিঠি ছাড়াই এক পাঠক থেকে অন্য পাঠকের কাছে পৌঁছে যায় খবর। সেই মোবাইল-ইন্টারনেট-ইমেইল-ফেসবুক-হোয়াটস্যাপহীন দুনিয়ায় কী অদ্ভুত এক নেশা নিয়ে হাজির হল ‘হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’। মোট বত্রিশটি কবিতার সাড়ে তিন ফর্মার একটা বই। কবির নাম না বললেও চলে—শক্তি চট্টোপাধ্যায়। আজ থেকে ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে এই বইয়ের প্রথম জন্ম।

    বইয়ের আবার দ্বিতীয়, তৃতীয় জন্ম হয় নাকি? হয় তো। এই বইয়েরই যেমন হয়েছে। প্রথম প্রকাশের সময় বইটির প্রকাশক ছিল অরুণা প্রকাশনী। সিগনেট বুক শপ ছিল পরিবেশক। কী অসামান্য এক প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়। হলুদের ওপর সবুজ রঙে প্রচ্ছদের কেন্দ্র থেকে চারপাশে ডালপালা মেলেছিল কোনো এক অলীক বিমূর্ত অরণ্য। সবুজেই লেখা বইয়ের শিরোনাম। কবির পদবিও মিশে গেছে সেই ডালপালার ভিতরে। তিনি তো অরণ্যেরই পোস্টম্যান। 

    এর ঠিক দশ বছর পরে এই বই নতুন করে বের করল ‘দে’জ পাবলিশিং’। প্রচ্ছদও গেল বদলে। গৌতম রায়ের আঁকা প্রচ্ছদ রং পালটে হয়ে গেল মেটে গোলাপি। প্রচ্ছদ জুড়ে সেই গোলাপির ওপর কালো কালো গাছ ডালে-ডালে যুক্ত হয়ে অরণ্যের আদল নিয়েছে। তারই মাঝে আরো গভীর গোলাপিতে লেখা বইয়ের শিরোনাম, কবির নাম। এরপর থেকে এই প্রচ্ছদের পোশাকেই বারবার পাঠক-পাঠিকাদের হাতে এসেছে এই বই। নতুন প্রচ্ছদের সঙ্গে সম্পর্ক পাতিয়েছি আমরা। পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়ের করা পুরোনো প্রচ্ছদ কোনো অজ্ঞাত অরণ্যে হারিয়ে গেছে। এই কারণেই, প্রচ্ছদ-শিল্পীকে বড়ো অসহায় লাগে মাঝে মাঝে। 

    অবশ্য, কবিতাগুলি বদলায়নি। কবিতা তো কবির পাঠানো চিঠিই। সময় বদলাতে বদলাতে সেই চিঠিরও মৃত্যু দণ্ডাদেশ এসে গেল। ‘একটি চিঠি হতে অন্য চিঠির দূরত্ব বেড়েছে’। তবু, এই বই আজও ঝোলায় নিয়ে ঘোরে সদ্য প্রেমে পড়া ঝাঁকড়া চুলের ছেলেটি। হেমন্তের অরণ্যের পোস্টম্যান আজো নেশা বিলোচ্ছেন। সেইসব নেশাদের দেখতে অবিকল না পাওয়া চিঠির মতন। 

    একটা কথা অবশ্য ভুল লিখেছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়। লিখেছিলেন, ‘একটি গাছ হতে অন্য গাছের দূরত্ব বাড়তে দেখিনি আমি’। পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতায়, গোটা দুনিয়াটায় এই কথা সূর্যের মতোই সত্যি ছিল। কিন্তু, আজ এই শহরে এলে শক্তি দেখতেন একটা গাছ থেকে অন্য গাছের দূরত্ব বেড়ে গেছে অনেক। মাঝে রোদে পুড়ছে রাস্তা, ফ্লাইওভার, নতুন জন্মানো আকাশচুম্বী বাড়ি। পঞ্চাশ বছরে অরণ্যরাও অনেকটা ফুরিয়েছে। হেমন্ত ঋতুটাও যেন ফিকে হয়ে আসছে ক্রমশ। চারপাশটাও বেমালুম বদলে গেছে এই বইয়ের দ্বিতীয় প্রচ্ছদের মতো।

    শক্তি বেঁচে থাকলে আজো কি হেমন্ত অরণ্য থেকেই চিঠি বয়ে আনতেন এই পোড়া শহরের পাঠকদের জন্য?

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @