No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী পুতুলের নাম হিঙ্গুল কেন? 

    বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী পুতুলের নাম হিঙ্গুল কেন? 

    Story image

    হাজার বছরেরও প্রাচীন বাঙালি সংস্কৃতির কতই না বৈচিত্র্য। বাংলার লোকসংগীত, মার্গসংগীত, হস্তশিল্প, খাবার-দাবার, পোশাক-আশাক, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, সাহিত্য, সিনেমা – সবেতেই রয়েছে সৃজন ও মননের আশ্চর্য মেলবন্ধন। আমাদের পুতুলশিল্পও কম বিস্ময়কর নয়। কয়েক প্রজন্ম আগেও শহরের বাচ্চা ছেলেমেয়েদের অন্যতম প্রধান খেলনা ছিল পুতুল। গ্রামেগঞ্জের কচিকাঁচারা এখনও পুতুল নিয়ে খেলে। গ্রামের নানা রকম মেলা, যেমন, রাসের মেলা, রথের মেলায় পুতুল সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। বেশ কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও ব্যবহৃত হয় পুতুল।

    অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পুতুল তৈরি হয় আমাদের বাংলায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মজিলপুরে পাওয়া যায় আহ্লাদ-আহ্লাদী, কলসি কাঁধে মেয়ে, গ্রামীণ নারী, বেনেবউ, পশুপাখি, সাহেব-মেম ইত্যাদি নানা ধরনের পুতুল। এখানকার দেবদেবী পুতুলও বিখ্যাত। হাওড়া জেলার রানিপুতুলে দেখা যায় ব্রিটিশ রানি ভিক্টোরিয়ার আদল। হুগলির শ্যাওড়াফুলিতেও এই পুতুল তৈরি হয়। টেপা পুতুল পাওয়া যায় বাংলার নানা জায়গায়। এছাড়া, মুর্শিদাবাদের কাঁঠালিয়া, বাঁকুড়ার পাঁচমুড়া, নদিয়ার নবদ্বীপ এবং আরও নানা জায়গার পুতুল বিখ্যাত। 

    বাংলার নিজস্ব মার্গ সংগীতের একমাত্র ঠিকানা বিষ্ণুপুর। বাঁকুড়া জেলার এই মন্দির শহরের পথে ঘাটে অলিতে গলিতে কথা বলে ইতিহাস। শ্যামরাইয়ের মন্দির, জোড়বাংলা মন্দির – বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা বাংলার অমূল্য সম্পদ। রাসমঞ্চের মতো স্থাপত্য সারা ভারতে বিরল। বিষ্ণুপুরের আরেকটি আশ্চর্য অবদান দশাবতার তাস। পূর্বতন মল্ল রাজাদের রাজধানীতে কয়েকটি মাত্র পরিবারই এই বিশেষ ধরনের তাস বানাতে ও খেলতে পারদর্শী। দলমাদল কামান দেখতেও বিষ্ণুপুরে ভিড় করেন বহু মানুষ। এখানকার রাস উৎসবও খুব বিখ্যাত। এহেন সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পীঠস্থানেও রয়েছে পুতুল তৈরির বিশেষ ঘরানা। 

    বিষ্ণুপুরের হিঙ্গুল বা হিম পুতুলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। হিঙ্গুল বা হিম এক ধরনের খনিজ পদার্থ। এক সময়ে বিষ্ণুপুরের পুতুলগুলো রাঙিয়ে তুলতে লালচে রঙের এই পদার্থ ব্যবহৃত হত। এই রং দিলে বেশ চকচকে হত পুতুলগুলো। এই কারণেই পুতুলগুলোর এমন নাম। তবে, এখন শুকনো গুঁড়ো রং দিয়েই হিম পুতুলকে রঙিন করা হয়। কাঁচা মাটিকে হাতে টিপে পুতুলের রূপ দিয়ে রোদে শুকোনো হয়। তাতে পরে ভেষজ রঙের প্রলেপ। পুতুলের উচ্চতা হয় মোটামুটি এক আঙুলের মতো। 

    বাচ্চাদের খেলনা হিসেবেই এই পুতুল জনপ্রিয়। পাশাপাশি, ষষ্ঠীপুজো ও জিতাষ্ঠমীর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে হিঙ্গুল পুতুল কাজে লাগে। কেউ কেউ মানত করার জন্য হিঙ্গুল পুতুল ব্যবহার করে থাকেন। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার, খানিকটা ইউরোপীয় প্রভাব এসে মিশেছে এই পুতুলের সাজসজ্জায়। হিঙ্গুল পুতুলের পরনে থাকে ফ্রক, মাথায় পাশ্চাত্য রীতির টুপিও দেখা যায়। 

    বর্তমানে বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাস ও দুর্গাপটের শিল্পী শীতল ফৌজদারের পরিবারই হিন্দুল পুতুল তৈরি করে থাকে। এই বাড়ির মহিলারা যে সব পুতুল বানান, সেগুলি অবশ্যই তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। শীতল ফৌজদার জানালেন, “আমরাই হিঙ্গুল পুতুলের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছি। আরও বেশি মানুষের কাছে আমাদের কাজ পৌঁছক, বাংলার মানুষ এই পুতুলকে রক্ষা করতে আরও বেশি করে এগিয়ে আসুন, সেটাই আমরা চাই”। 

    বিষ্ণুপুরের হিঙ্গুল বা হিম পুতুল অনলাইনে কিনতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

    তথ্যঋণ – সোমা মুখোপাধ্যায়, তারাপদ সাঁতারা। 
     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @