No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    সে দিনের কালীঘাট-ফলতা রেললাইনের ওপরেই আজকের জেমস লঙ সরণী

    সে দিনের কালীঘাট-ফলতা রেললাইনের ওপরেই আজকের জেমস লঙ সরণী

    Story image

    ‘ও মাস্টার আমারে একটা কালী মায়ের টিকিট দিও’। রমণীর কথা শুনে টিকিট মাস্টার টরেটক্কার মতো কল খট খট করে একটা টিকিট দিলে। তার পর টুনুনাংটাং টুনুনাংটাং করে বেল বাজলে দেখা গেল বাঁশিতে ফুঁ তুলে, ঝম ঝম করে ঢুকে পড়লো ‘ম্যাকলিড সাহেব’-এর রেলগাড়িটা। পল্লী-গায়ের মা-বোনেরা ম্যাকলিয়ড কোম্পানির এই রেলগাড়িকে আদর করে বলে ‘ম্যাকলিড’ সাহেবের গাড়ি। ততদিনে লন্ডন দেশের  ম্যাকলিয়ড রাসেল কোম্পানির এই শাখা আহমেদপুর থেকে কাটোয়া, বর্ধমান থেকে কাটোয়া কিম্বা বাঁকুড়া-দামোদর রেলপথের বিস্তারে ব্যস্ত। কিন্তু কালী মায়ের থানের টিকিট কিনতে আসা এই পল্লী রমণী বর্ধমান বা বাঁকুড়ার নয়। তিনি যেতে চেয়েছেন খোদ কলকাতার দক্ষিণ সদরে কালী মায়ের ভদ্রাসন কালীঘাটে। আসলে ১৯১৭-র ২৮ মে থেকেই ম্যাকলিয়ড কোম্পানি খোদ কলকাতার বুকে রেলগাড়ি চালু করেছিল। গাড়ি যেতো কালীঘাট থেকে ফলতা পর্যন্ত। তাই এই রেল রাস্তার নাম ছিল ‘কালীঘাট- ফলতা রেলওয়ে’। ইংরেজি ভাষায় ছোট করে বলা হতো কে.এফ.আর। সে দিনের রেলপথ মানচিত্রে কালীঘাটের মন্দির যেতে গেলে নামতে হত আজকের মাঝেরহাট স্টেশনে। সেখান থেকে ছোট লাইট-রেলওয়ের গাড়িটি কু-ঝিক ঝিক করতে করতে চলে যেতো ফলতা অবধি। কার্যত যে রেল পথ দিয়ে গাড়িটি পরাণের মা, হারাধনের বউ, কিম্বা হালদার পুরুতকে নিয়ে যাতায়াত করতো সেটিই আজকের শহর কলকাতার ব্যস্ততম রাস্তা জেমস লঙ সরণী। এখান দিয়েই চলত রেলগাড়ি, যেমন আজকের ট্রাম গাড়ি। সেকালে রেওয়াজ ছিল বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে রেলকে হাত দেখিয়ে উঠে পরার। অথবা কবিরাজের কাছে একটু মাচার লাউ রেখে আসতে দাঁড়িয়ে যেত রেলগাড়ি। কিম্বা পুকুরের মাছও গাড়ি থামিয়ে তুলে দেওয়া হত ড্রাইভার বা গার্ড সাহেবের কামরাতে। তাঁরাও আবার শহর থেকে রেল চালিয়ে খবর নিয়ে আসতো পল্লীর মানুষজনদের জন্যে। এমনই ছিল রেলপথের গল্প।

    সে দিনের এই কালীঘাট-ফলতা রেলওয়ের রেলপথের কথা আজ আর কারও মনে পরে না।  প্রায় তেতাল্লিশ কিলোমিটারের রেলপথে সে দিন ছিল সাকুল্যে আঠারোটি স্টেশন। ওই সময়ের কিছু আগের কথা। মিশরের বুক চিরে পাতা শুরু হল ইজিপ্সিয়ান ডেল্টা রেলওয়ের পথ। আর তাই ইজিপ্সিয়ান ডেল্টা রেলওয়ের জন্য যে ইঞ্জিন গুলো তৈরি হয়েছিল, মহাযুদ্ধের বাজারে বাগনাল কোম্পানি সে গুলির সব কটিকে ইজিপ্টে পাঠাতে পারেনি। সেগুলির থেকে বেশ কিছু ইঞ্জিন এসে গেল ভারতে। তার কারণ এ দেশে তখন অনুন্নত, অপরিচিত জায়গাগুলোকে রেলপথে সংযোগ করার কাজ শুরু করেছে ইংরেজ বাহাদুর। আর রেল চালাতে গেলে ইঞ্জিন তো দরকার। এই বিপুল কর্মকাণ্ডেরই অন্যতম ফলশ্রুতি কালীঘাট-ফলতা রেলওয়ে। আজও যার সাক্ষ্য বহন করছে ঘোলশাপুর, শখের বাজার, পৈলান স্থান-নাম-গুলি। আসলে গ্রাম পালটে শহর হয়ে গিয়েছে বহুদিন। কিন্তু প্রিয় শহরের ছোট্ট রেলপথের স্মৃতি রয়ে গেল আদর মাখা কিছু পুরনো কাঁচ নেগেটিভের ফোটো প্রিন্ট-এ। তাই আজও যেন শোনা যায় মাঝ পথে হাত দেখিয়ে নিবারণ চাটুয্যে বলছেন “ও ম্যাকলিড সায়েবের ডেরাইভার গতি একটু আস্তে কর দিকি। কালী মায়ের থানে যাবো। মানত করা ছিল, আমার নাতি হয়েছে গো”।  

     

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @