No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও শরৎচন্দ্র

    দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও শরৎচন্দ্র

    Story image

    ১৯২১ সাল। শরৎচন্দ্র তখন বাংলা কংগ্রেসের সভাপতি। এদিকে সুভাষচন্দ্র চিত্তরঞ্জের সাহচর্যে যোগ দিলেন দেশসেবায়, বিবেকান্দের ভাবাদর্শে ভাবিত তরুণ সুভাষ ভেবেছিলেন  সন্ন্যাসী হবেন। চিত্তরঞ্জনই সুভাষকে আটকালেন। কংগ্রেসে দলাদলি আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তখন তুঙ্গে। দেশবন্ধুর অর্থবল আর জনবল দুই-ই হাতছাড়া। টাকার যোগাড় করতে ধনীর দ্বারস্থ হতেই হত। মাঝেমাঝেই দেশবন্ধুর সফরসঙ্গী হতেন শরৎ এবং সুভাষ। তা সেরকমই এক বর্ষার রাতের ঘটনা। শেয়ালদায় এক ধনীর বৈঠকখানায় অপেক্ষা করছেন তারা তিনজন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর অধৈর্য শরৎ বললেন-"চলুন ফিরে যাই। গরজ কি একা আপনার? দেশের লোক যদি হাত মুঠো করে থাকে, আপনার কি একা ভূতে ধরেছে দেশোদ্ধার করার? " দেশবন্ধু মৃদু হেসে বললেন, -“এ ঠিক কথা নয় শরৎবাবু। দোষ আসলে আমাদেরই। আমরা ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারিনা। নইলে, বাঙালি আর যাই হোক কৃপণ নয়”।

    দেশবন্ধুর সম্পাদনায় তখন বের হত 'নারায়ণ' পত্রিকা। শরৎ সেখানে রাজনৈতিক প্রবন্ধ লিখতেন। 'নারায়ণ' পত্রিকায় লেখার জন্য পারিশ্রমিক দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। তা শরৎকে কত টাকা পারিশ্রমিক দেবেন তা ঠিক করতে না পেরে দেশবন্ধু একবার টাকার ঘর খালি রেখে একটা চেক পাঠালেন। টাকার ঘরে শরৎ একশো টাকা লিখলেন। তা দেখে শরৎ- এর এক বন্ধু মজা করে বললেন,-"মাত্র একশো টাকা লিখলেন শরৎদা? ওতে দু-পাঁচ হাজার টাকা বসিয়ে নিতে পারতেন, তাতে দাশ সাহেবের টাকায় এতটুকু টান পড়ত না।" শরৎচন্দ্র জবাবে বললেন,-"তা হয়ত পড়ত না। কিন্তু চিত্তরঞ্জনের সংস্পর্শে এসে চিত্ত কলঙ্ক করতে পারব না ভাই।"

    বরিশালের এক সম্মেলনে যাচ্ছেন দেশবন্ধু। সফরসঙ্গী শরৎচন্দ্র। রাতের অন্ধকারে দুজনে স্টিমারের ডেকে বসেছেন। নানান আলোচনা চলছে। কথায় কথায় দেশবন্ধু জিজ্ঞাসা করলেন,-"আপনি চরকায় বিশ্বাস করেন?" শরৎ বললেন,-"আপনি যে বিশ্বাসের কথা বলতে চাইছেন, সে বিশ্বাস সত্যিই আমার নেই।" দেশবন্ধু বললেন,"কেন নেই?" শরৎ বললেন,-"কেন জানেন? কারণ ভারতবর্ষের ত্রিশ কোটি লোকের মধ্যে পাঁচ কোটি লোকও যদি সুতো কাটে তাহলে ষাট কোটি টাকার সুতো হতে পারে। আর দশ লক্ষ লোক এক সাথে হাত লাগালে একদিনেই একটা বাড়ি তোলা যেতে পারে। মানুষগুলোকে কেবল এক করতে হবে।" দেশবন্ধু আবেগের সাথে বললেন, ---"আপনারা দয়া করে আমাকে এই পলিটিক্সের বেড়াজাল থেকে উদ্ধার করে দিন, আমি ওই ওদের মধ্যে গিয়ে থাকব।"

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @