নেপাল সুইটসের রাজকীয় গোলাপ পাতি সন্দেশ

হিন্দিতে সন্দেশ কথাটার মানে হল খবর। কিন্তু আমাদের মাতৃভাষায় সন্দেশ এক মনভোলানো মিষ্টি খাবার। গোটা বাংলা তো বটেই, কলকাতায় বিশেষ করে সন্দেশের ফ্যান খুব বেশি। রসগোল্লার পরে যে মিষ্টির নাম চলে আসে, তা হল সন্দেশ। কলকাতার মিষ্টির দোকানগুলোতে কোনোটায় রসগোল্লা বিখ্যাত, সন্দেশ বিখ্যাত, কোনটায় বা দরদেশ বিখ্যাত। গোলাপ পাতি সন্দেশের জন্য নেপাল সুইটসের বেশ নামডাক। এই বিশেষ ধরনের সন্দেশ তৈরির গোলাপ জল উত্তরপ্রদেশের কনৌজ থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে আনা হয়। কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না, সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গোলাপের পাপড়ি থেকে গোলাপ জল বানানোর পর সেটাকে গোলাপ পাতি সন্দেশে ব্যবহার করা হয়।
মিন্টো পার্ক থেকে শরৎ বোস রোড ধরে গিয়ে কিছুটা গেলেই ১৬বি, শরৎ বোস রোড, কলকাতা ২০। এই ঠিকানায় গত ৭০ বছর ধরে যে দোকানটি অঞ্চলের সমস্ত মানুষ, বিশেষ করে উচ্চবিত্ত মানুষের পছন্দের, সেটি হলো নেপাল সুইটস। মিন্টো পার্ক, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড – এই অঞ্চলটি উচ্চবিত্ত মানুষের বাস। তাদের খাবার দাবারও একটু এলিট মানের না হলে ওই অঞ্চলে অন্যান্য বিখ্যাত দোকানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠা মুশকিল। প্রয়াত উমা শংকর গুপ্তার হাত ধরে নেপাল সুইটসের যাত্রা শুরু হয়। ওঁর পূর্বপুরুষ ছিলেন বড়োবাজার অঞ্চলের বিখ্যাত নেপাল হালুইকর।
নেপাল সুইটসের বর্তমান মালিক রবি গুপ্তা জানালেন, তাঁদের মোট বিক্রির ৭০ শতাংশই হল গোলাপ পাতি সন্দেশ। তাঁরা নিজেরাও জানেন না যে শুধু এই গোলাপ সন্দেশ কেন এত মানুষের কাছে জনপ্রিয়! অন্যান্য মিষ্টির মানও ভালো, কিন্তু চাহিদা গোলাপ পাতির মতন নয়। সারা বছর ধরে কলকাতার বিখ্যাত ইন্ডাস্ট্রিইয়ালিস্টদের বাড়িতে খাবার টেবিলে নেপাল সুইটসের গোলাপ সন্দেশ থাকেই। বিদেশে কিংবা ভারতের অন্যান্য জায়গাতে যারা যান তারাও অনেকে এই গোলাপ পাতি সন্দেশ নিয়ে যান । এই মিষ্টি তৈরি করার ১৫ থেকে ২০ ঘন্টার মধ্যেই খেয়ে নিতে হবে, কারণ এটি অত্যন্ত নরম পাকের। দিনে দিনে দেশের বাইরে ও ভেতরে এই সন্দেশের চাহিদা বাড়ছে। কারণ জিজ্ঞাসা করায় রবি গুপ্তা বললেন, সবই ওপরওয়ালার ইচ্ছে। প্রতিবেদক নিজে কুড়ি টাকা দামের গোলাপ সন্দেশ খেয়ে দেখলেন, মুখের মধ্যে মিল্ক ক্রিমের স্বাদ পাওয়া গেল। এক কথায় অনবদ্য। দোকানের অন্যান্য সন্দেশগুলোও খেতে অসাধারণ।
যতক্ষণ প্রতিবেদক দোকানে ছিলেন, দেখলেন, যে সমস্ত মানুষ কিনতে আসছেন তাদের বেশিরভাগই গোলাপ পাতি সন্দেশ নিয়ে যাচ্ছেন। দোকানের মালিক বললেন, যেহেতু এটি কোন ফ্যাক্টরি প্রোডাক্ট নয়, সেজন্য ঠিকঠাক মান বজায় রেখে অন্য ব্রাঞ্চ চালু করা খুব কষ্টসাধ্য। কী পরিমাণ যে এই সন্দেশ বিক্রি হয়, সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। গোলাপ পাতি সন্দেশের দাম রাখা হয়েছে কুড়ি টাকা। অন্যান্য সন্দেশের দামও খুব বেশি নয়। মিন্টু পার্ক অঞ্চলে এলে গোলাপ পাতি সন্দেশ অবশ্যই খেয়ে দেখবেন। কলকাতার শ্রেষ্ঠ গোলাপ জল দেওয়া গোলাপ পাতি সন্দেশের ঠিকানা নেপাল সুইটস, নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে।
ছবি সূত্র-রবি গুপ্তা