No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    গ্লোব বন্ধ হওয়ার আগে এই সিনেমা হলের বৃহত্তম হিট ছিল ‘টাইটানিক’

    গ্লোব বন্ধ হওয়ার আগে এই সিনেমা হলের বৃহত্তম হিট ছিল ‘টাইটানিক’

    Story image

    কলকাতার রঙিনতম বাজার নিউমার্কেট। দিনের আলোয় সেখানে কয়েক লক্ষ পায়ের ছাপ। রাত গভীর হলেই সব শান্ত। নামানো শাটার বেয়ে দু-এক ফোঁটা ঘাম নেমে আসে শহরে। দিনের ব্যস্ততা ভেঙে প্রকট হয়ে আসে রাতের হলুদ আলো। লিন্ডসের উপর দিয়ে মেঘ উড়ে যায়। সময়ে সময়ে বৃষ্টি হয় সেখানে। ব্রিটিশ কলোনির ফেলে যাওয়া অভিমান ধুয়ে গিয়ে মেশে আমাদের একক গঙ্গায়। তারপর? ভোর হয়। গোটা পশ্চিমবঙ্গ থেকে কারণে অকারণে ছুটে আসে মানুষ এই বাজারে। কেউ ঘোরে, কেউ সওদা করে আর কেউ বেবাক লোক দেখতে যায়। ঘুরতে ঘুরতে এক-দুটো শপিংমল যা একসময় সিনেমাহল ছিল। তেমনই এক হলের নাম গ্লোব। লিন্ডসে স্ট্রিটের গৌরব ছিল এ’হল।

    ৭-ই লিন্ডসে স্ট্রিটের এই বাড়ি কলকাতার হেরিটেজ বিল্ডিংগুলির একটি ছিল। গ্লোব সম্ভবত কলকাতার বৃহত্তম সিঙ্গল স্ক্রিন হল। প্রকৃতপক্ষে ১৮৬৭ সাল নাগাদ একটি উডেন অপেরা হাউজ গড়ে ওঠে এই ঠিকানায়। বিজৌ গ্র্যান্ড অপেরা হাউজ। ১৯০৬ নাগাদ হাতবদল হয় এই অপেরা হাউজের। মালিক হন ইএম কোহেন। অপেরা পরিবর্তিত হয় থিয়েটার হলে এবং নাম হয় গ্র্যান্ড অপেরা হাউজ। এরপর ১৯২২ সালের ২কলকাতার প্রথম সারির যে সমস্ত হল ধারাবাহিকতার সঙ্গে ইংরেজি সিনেমার স্ক্রিনিং করে গেছে, গ্লোব তাদের মধ্যে অন্যতম। জানা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যালায়েড বাহিনীর যে ট্রুপ কলকাতায় ঘাঁটি গেড়েছিল তাদের বিনোদনের ব্যবস্থাও করেছিল গ্লোব সিনেমা। 

    ঐতিহ্যবাহী গ্লোব

    ২০০০ সালে প্রিয়া সিনেমার ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর অরিজিৎ দত্ত লিজে নেন এই হলটি। ৬ বছর কোনওরকমে চালানোও হয় এই হল। এরপর ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই ২০০৬ সাল নাগাদ তাঁরা মালিকানা সত্ত্বাধিকারীদের হাতে ফিরিয়ে দেন গ্লোব। ২০১১ সালের জুলাই মাস নাগাদ নিতিন কুমার জৈন, মেঘ রাজ দাগা ও দেবিন্দর সিং সান্ত এই তিন বাণিজ্যপতী অর্জন করেন গ্লোবের মালিকানা। ২০১৪ সালে এই গোষ্ঠীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয় হলের পুনর্নির্মাণের কাজ। গড়ে ওঠে গ্লোব শপিং মল।

    প্রায় ১০০টি দোকান ও প্রচুর খাবারের দোকান নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গ্লোব মল। গ্লোব বন্ধ হওয়ার আগে এই হলের বৃহত্তম হিট ছিল ‘টাইটানিক’। এখন পাঁচতলা মলের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা জুড়ে রয়েছে সিনেমাহলদুটি। 

    গ্লোবের সিঙ্গল স্ক্রিন আভিজাত্য আজ নেই। নেই তার ঐতিহ্যের নামমাত্রও। এই কর্পোরেট চেহারায় আর পাঁচটা মলের মতোই আরেকটি মাল্টিপ্লেক্সে পরিণত হয়েছে এই হল। তবু কিছু যেন রয়ে গেছে। কোথাও যেন রয়ে গেছে ‘গ্লোব’ নামের মহত্ব। কোথায় যেন সেই বিশ্বের ছোঁয়া রয়ে গেছে এই নামমাত্রের মধ্যে। হাজার বদলের পর তবু তো নামটুকু রয়ে গেল! গ্রীষ্মের দুপুরে ওবাড়ির ছায়ায় দাঁড়িয়ে কেউ তো বলতে পারবে ফোনে, ‘গ্লোবের নিচে অপেক্ষা করছি। চলে এসো...’। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @