No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বনের মধ্যে শবদেহ, চাদর সরাতেই নিজের মৃতমুখ দেখতে পেয়েছিলেন বিভূতিভূষণ  

    বনের মধ্যে শবদেহ, চাদর সরাতেই নিজের মৃতমুখ দেখতে পেয়েছিলেন বিভূতিভূষণ  

    Story image

    প্রথম স্ত্রী গৌরীর মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যেই চলে গেলেন বোন মণি। দুই কাছের মানুষের মৃত্যুশোক অনেকটাই ভেঙে দিল বিভূতিভূষণকে। চলে এলেন কলকাতায়। একদিন টালিগঞ্জের কাছে দেখা পেলেন এক সন্ন্যাসীর। তাঁর কাছ থেকে শুনলেন আত্মা-তত্ত্বের ব্যাখ্যা। ঘোর চেপে গেল। শুরু হল পরলোক-চর্চা। সেই সন্ন্যাসীর কাছ থেকেই শিখলেন প্ল্যানচেট তথা ‘মণ্ডল’। এরপর, এই পরলোক-চর্চাই তাঁকে ঘিরে থাকবে আমৃত্যু।

    এই পরলোকচর্চার নেশাতেই বিভূতি যোগ দিলেন কলেজ স্কোয়ারের থিওসফিক্যাল সোসাইটিতে। এখানে তাঁর আত্মা-চর্চার প্রতি প্রেম আরো ঘন হল। জ্ঞানও বাড়ল। একাধিকবার নাকি প্ল্যানচেটে নিজের প্রথম স্ত্রী গৌরীর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর শোকে ভেঙে পড়েছেন কান্নায়। বিভূতিভূষণের আগেও বাংলার বহু রথী-মহারথীদের বিশ্বাস ছিল প্ল্যানচেটে। প্যারীচাঁদ মিত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ—তালিকা বাড়ালেই বাড়বে। আর, বিভূতিভূষণের জীবনের সঙ্গে তো অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে গেছিল এই প্রেতচর্চা।

    পরলোকচর্চার জন্য মাশুলও দিতে হয়েছে তাঁকে। জাঙ্গিপাড়া দ্বারকানাথ হাইস্কুলে তখন পড়াচ্ছেন বিভূতিভূষণ। সেখানেও শুরু হল প্ল্যানচেট। কয়েকজন সঙ্গী-সাথীও জুটে গেল। মাস্টার প্রেতচর্চা করে জানাজানি হতেই স্কুলে ছাত্র কমতে শুরু করল। বেগতিক বুঝে স্কুল কর্তৃপক্ষ শেষমেশ তাড়িয়েই দিলেন বিভূতিভূষণকে। তারপরেও অবশ্য পরলোকচর্চায় ইতি টানেননি তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রী কল্যাণীদেবীর বাবা ষোড়শীকান্ত ছিলেন তান্ত্রিক। তাঁর কাছ থেকেও প্রেতচর্চা সম্পর্কে নানাকিছু জানতে চাইতেন বিভূতি। ‘তারানাথ তান্ত্রিক’-এও বোনা রয়েছে শ্বশুরমশাইয়ের কথাই। ধীরে ধীরে এই চর্চা আড়াল-আবডাল রেখেই ঢুকে পড়তে শুরু করল তাঁর লেখাতেও। ‘দেবযান’ উপন্যাসে সে প্রসঙ্গ তো স্পষ্ট। 

    এরপরে এক ভৈরবীর কাছেও শবসাধনার পাঠ নেওয়া শুরু করেছিলেন বিভূতিভূষণ। তখন তাঁর শেষ বয়স। শেষ বয়সে পরলোকচর্চা আর নিছক নেশা নয় তাঁর কাছে। জীবনকে শুধু বস্তুপৃথিবীর গণ্ডীতে দেখতেন না। প্রেতাত্মাদের সঙ্গে নাকি নিয়মিত কথা বলতেন নিজের ঘোরে। অসুস্থ ছেলেকে বুকে জড়িয়ে অদৃশ্য কাউকে বলছেন, “একে দেব না।” এরপর, অনেকের সঙ্গে মিলে একদিন ঘুরতে গেলেন ফুলডুংরি। হঠাৎ দলছুট হয়ে গেলেন। বনের মধ্যে দেখতে পেলেন একটা শববাহী খাট। একটা মৃতদেহ চাদর দিয়ে ঢাকা। চাদর সরাতেই চমকে উঠলেন বিভূতিভূষণ। এ যে তাঁরই দেহ! তাঁর আর্ত চিৎকার শুনে ছুটে এসেছিলেন সবাই।

    হয়তো হ্যালুসিনেশন। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই নশ্বর জীবন ফেলে চলে গেলেন বিভূতিভূষণ। সে-দিনটাও ছিল পয়লা নভেম্বর।

    তথ্য-ঋণ: যমুনা বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘উপল ব্যথিত গতি’, ‘মৃত স্ত্রীর আত্মার সঙ্গে কথা হত প্ল্যানচেটে’, পত্রিকা, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @