No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    গণেশের বেহুলা বিষাদপ্রতিমা নয়

    গণেশের বেহুলা বিষাদপ্রতিমা নয়

    Story image

    বাঙালির একটা নিজস্ব একরোখা চরিত্র আছে। আছে লড়াই করে জিতে নেওয়ার মতো একটা জেদি মনোভাব। এমন কী দেবতা মানলেও দৈবের কাছে মাথা নত না করার প্রবণতাও বাঙালির মজ্জাগত। সমকালের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী গণেশ পাইনের ছবিতে বারে বারেই ফিরে এসেছে বাঙালির এই এক রোখা জেদি চরিত্রের উপাখ্যান। সেই কাজটি করার জন্য বারে বারেই শিল্পী ফিরে গিয়েছেন গল্পে। আর ছবির পরতে পরতে সেই গল্পকে ব্যাখ্যা করেছেন নিজস্ব চিত্র ভাষায়। ফলে গল্প অন্য অর্থের ব্যঞ্জনায় প্রকাশ পেয়েছে ছবিতে। এরকম ভাবে অনেক ছবি এঁকেছেন নানা সময়ে। মঙ্গলকাব্য থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ সকলের কাহিনিরই এক বিরল সম্প্রসারিত ব্যাখ্যা ছবিতে রচনা করেছিলেন গণেশ পাইন। কিন্তু আশ্চর্য ভাবে তেমন কাহিনিকেই ছবিতে ফিরিয়ে আনতেন গণেশ পাইন যেখানে মৃত্যুকে জয় করার অঙ্গীকার থাকে। যেমন একটি ছবি হল- ১৯৯৯ সালে আঁকা বেহুলার ছবি। এই মঙ্গল কাব্যের বেহুলা দৈবকে মেনে তো নিলেনই না, উলটে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিলেন। গোটা মঙ্গলকাব্য জুড়ে এক উলটো কথন। যেখানে ভক্তের মন পেতে দেব-দেবতারা উঠে পড়ে লেগেছেন এবং তা আদায় করতে নিজেদের শক্তির অপপ্রয়োগ করছেন। নইলে কী চাঁদ সদাগরের ডিঙা ডোবে?

    অধ্যাপক শোভন সোম মন্তব্য করেছিলেন ‘এই দেব-দেবীরা যেন-তেন প্রকারেণ মানুষের হাত থেকে পূজা পাবার জন্য রীতিমতো কাঙাল। মঙ্গলকাব্যে মানুষকে বারবার দৈব পরাস্ত করতে চেয়েছে এবং মানুষও অসম দৈবের সঙ্গে তার প্রতিবাদী তীব্রতায় যুঝেছে।” সেরকমই একটি চরিত্র হল বেহুলা। যে মৃত্যুঞ্জয়ী এক মেয়ের প্রতীক হয়ে রইল গণেশ পাইনের ছবিতে। স্বদেশী যুগের বিপ্লবে নেতাজি সুভাষের প্রাণে কিম্বা ষাট সত্তর দশকে নকশাল বাড়ির ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সর্বত্রই বাঙালি মানসে মৃত্যুকে জয় করার ইচ্ছে। ১৯৬৯ সালে নকশাল আন্দোলনের যখন শুরুর যুগ তখনও একবার গণেশ পাইন এঁকেছিলেন বেহুলার ভাসানের ছবি। এবার দেখা যাক ১৯৯৯ তে আঁকা বেহুলার ছবিটিকে বিশ্লেষণাত্মক তাৎপর্যে। ছবিতে লখীন্দর পরিণত হয়েছে শব কঙ্কালে। লখীন্দরের হাড়গোড় বার করা সেই শব নিয়ে ভেসে চলেছ বেহুলা। কিন্তু তাঁর মাথায় আমরা দেখতে পাই একটি পূর্ণ কলস বা ঘট। সেখান থেকে পাতা বেড়িয়ে আসছে। এই পূর্ণ ঘট বাঙালি জীবনের বিশ্বাসে উর্বরতার প্রতীক। মানে জীবন স্পন্দনের প্রতীক। আর তখনই বেহুলা নিছক এক শববাহী নারী নয়, সে মৃত্যুর বিপ্রতীপে জীবনের ব্রত মাথায় নিয়ে চলে।  অধ্যাপক শোভন সোমের মতে “গণেশের বেহুলা বিষাদপ্রতিমা নয়, এই বেহুলায় আমরা মৃত্যুকে জয় করবার সংকল্প বাক্য, আমাদের ঐতিহ্যের সূত্রে, আবার কালের সন্ধিক্ষণে স্মরণ করি।”

    বলতে দ্বিধা নেই যে আজ যখন বাংলার কারিগরি শিল্পের আঁতুড় ঘরগুলির চেহারা লখীন্দরের কঙ্কালের মত সেখানে আবারও বেঁচে থাকার আশার আলো দেখাতে পারেন হয়তো একজন ‘বেহুলা’।

    ছবি ও তথ্যসূত্র- ‘কাল সমুদ্রে আলোর যাত্রী’, শোভন সোম, দেশ।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @