শিবের আবাহন করে অনুষ্ঠিত হয় গম্ভীরা

অভিনয়, গান এবং নৃত্যের সমন্বয় দেখা যায় কোথায়? আপনার হয়তো সবার প্রথমে বলিউডের কথাই মনে হবে। তবে চলচ্চিত্র আবিষ্কার হওয়ার বহু আগে, প্রাচীন কাল থেকেই বাংলায় প্রচলিত রয়েছে এমন লোকশিল্প, যাতে একসঙ্গে দেখা পাবেন এই তিনের। মালদা জেলার সেই নৃত্যনাট্যের নাম গম্ভীরা, যা আজকের যুগেও অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে। মিলেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
মহানদী এবং কালিন্দী নদীর সঙ্গমে মালদা জেলা। কলকাতা থেকে মোটামুটি ৩৫০ কিলোমিটার দূরে। কেবল আম বাগান নয়, সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের জন্যও এই জেলার নাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আম, রেশম এবং পাট উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । তুঁতের খেত এবং আমের বাগান ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। তবে এখানকার শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে খুব কম লোকই সচেতন। পাল, সেন, সুলতানি যুগ থেকেই উন্নত সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে চলেছে মালদা।
মালদায় যদি ঘুরতে যান, নিজের চোখে দেখবেন পাল, সেন, সুলতানি, মুঘল এবং নবাবি আমলের নিদর্শন। বিশেষ করে গৌড় এবং পান্ডুয়ার ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলি দেখতে ভুলবেন না। জগজীবনপুরে পাওয়া গিয়েছে বৌদ্ধ মঠের ধ্বংসাবশেষ। একাধিক ধর্ম, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের মিলন ঘটেছে মালদায়। এক সময় বাংলার রাজধানীও ছিল এখানে।
মালদার আরেক প্রধান আকর্ষণ লোকসংস্কৃতি। মহাদেব শিবের উদ্দেশ্যে নাচ এবং গানের মাধ্যমে গৌড় অঞ্চলে গম্ভীরার উৎপত্তি এবং বিকাশ হয়। পরে অভিনয়ও তার অংশ হয়ে ওঠে। মঞ্চে সাধারণত দু’জন অভিনেতা তাঁদের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে সংলাপ বলেন। নাচ-গানের মধ্যে দিয়ে শিবের কাছে সমাধানের আবেদন করেন।
গম্ভীরা অবশ্য পুরুলিয়া জেলার ছৌ নাচের মতো রঙিন নয়। তবে গল্প বলার ধরনের জন্য অনন্য। গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের দুঃখকষ্টের ছবি ফুটে ওঠে মঞ্চে। কেবল নাচ-গানের জন্যই গম্ভীরা বিখ্যাত নয়। একে তুলনা করা হয় জাপানের নোহ নাটকের সঙ্গে। দুটি লোকশিল্পই উঠে এসেছে গ্রামীণ জীবনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে। মুখোশ ছাড়া নোহ যেমন অসম্পূর্ণ, গম্ভীরাও তাই।
সাধারণত বাংলা বছরের শেষে গম্ভীরা নৃত্যনাট্য শুরু হয়। অর্থাৎ এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ, যখন চৈত্র শেষ হয়ে বৈশাখ আরম্ভ হচ্ছে। চৈত্রসংক্রান্তির চারদিন আগে গম্ভীরা উৎসবের সূচনা। প্রথম দিনে থাকে ঘটভরা অনুষ্ঠান। পরের দিন হয় ‘ছোটো তামাশা’। তৃতীয় দিনের ‘বড়ো তামাশা’ অনুষ্ঠান বেশ জমকালো। তার পরের দিন হয় ‘আহারা’ কিংবা ‘বোলাই’ অথবা ‘বোলবাই’ । এটি মূলত পুজোর প্রসাদ খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান।
আরও পড়ুন: ইচ্ছে গাঁও – কালিম্পং জেলার কল্পলোক
করোনা অতিমারির জন্য এবছর হয়তো গম্ভীরা উৎসব মিস করে গিয়েছেন আপনি। পরে যখনই সুযোগ পাবেন, গম্ভীরা দেখতে ভুলবেন না। বাংলার সমৃদ্ধ লোকশিল্পকে এভাবেই সম্মান জানাতে পারবেন। কোভিডের বাড়বাড়ন্ত কমলেই রওনা দিন মালদা। গম্ভীরার পাশাপাশি সেখানে রয়েছে বেশ কিছু ডেস্টিনেশন।
মালদা ঘুরতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের নিজস্ব আম্রপালি ট্যুরিজম প্রপার্টিতে কয়েকদিন থাকতে পারেন স্বচ্ছন্দে। নিয়ে যেতে পারেন বন্ধু অথবা আত্মীয়-স্বজনকে। থাকা এবং খাওয়ার আরামদায়ক বন্দোবস্ত রয়েছে। বুকিং এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন –
West Bengal Tourism Development Corporation Ltd.
Udayachal Tourist Lodge
DG Block (1st floor), Sec II, Salt Lake, Kolkata - 700091
Phone: 033 2358 5189
Email: visitwestbengal@yahoo.co.in, mdwbtdc@gmail.com, dgmrwbtdc@gmail.com
Website: https://www.wbtdcl.com/