No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ফ্রানজ কাফকা-ই কি হেলমেট আবিষ্কার করেছিলেন?

    ফ্রানজ কাফকা-ই কি হেলমেট আবিষ্কার করেছিলেন?

    Story image

    মেটামরফোসিসের লেখক ফ্রানজ কাফকা-ই কি হার্ড হ্যাট, যাকে আমরা হেলমেট বলি তার আবিষ্কর্তা? তাঁর নির্দেশেই কি প্রথম কারখানায় ‘হেলমেট’ পরার চল হয়েছিল? এই দাবি আধুনিক বিজনেস ম্যানেজম্যান্টের গুরু পিটার ড্রাকার-এর। ‘ম্যানেজিং ইন দ্য নেকস্ট সোসাইটি’ বইয়ে তিনি এই দাবি করেছেন। কয়েকজন কাফকা গবেষকের লেখাতেও এই তথ্য পাওয়া যায়। প্রসঙ্গটি কী ভাবে এল জানতে কাফকার চাকরি জীবনে ফিরতে হবে আমাদের।

    ফ্রানজ কাফকা বেঁচে থাকলে এখন বয়স হত ১২৭ বছর। যদিও কাফকা, মাত্র ন’টি পূর্ণাঙ্গ গল্প, তিনটি উপন্যাস, আর কয়েকটি অসমাপ্ত গল্প লিখে মাত্র ৪১ বছর বয়সে মারা যান এবং মারা যাওয়ার আগে প্রিয় বন্ধুকে চিঠি লিখে বলে গিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর অপ্রকাশিত লেখাগুলো যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়, প্রকাশিত লেখাগুলোর যেন ভবিষ্যতে কোন পুনর্মূদ্রণ না-হয়। প্রিয় বন্ধু ম্যাক্স ব্রড অবশ্য সেই অনুরোধ রাখেননি।

    ফ্রানজ কাফকা

    কাফকাকে নিয়ে ২০০০ সালের মধ্যেই লেখা হয়ে গিয়েছিল দশ হাজারের বেশি বই। ১৯৬১ সালের একটি তথ্য বলছে, কাফকাকে নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের তালিকাটাই যেন আর একটা বই, যার পৃষ্ঠাসংখ্যা ৪০০-এর বেশি। এখন হয়তো, ৬০ বছর পরে তার পৃষ্ঠাসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। মার্কেজ বলেছিলে,  তিনি গল্প লেখা শুরু করেন কাফকার মেটামরফোসিস পড়ে। আর ডব্লিউ এইচ অডেন-এর মতে, ‘যদি কোনও একজন লেখকের নাম করতে হয় যিনি আমাদের কালের সঙ্গে অনেকটা সেই সম্পর্ক বহন করেন, যেমনটা দান্তে, শেক্সপিয়ার এবং গ্যেয়টে ছিলেন তাদের কালের সঙ্গে, তাহলে সবার প্রথমে মাথায় আসবে কাফকার নাম’ (অনুবাদ-মাসরুর আরোফিন)। জন্ম ১৮৮৩ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের চেকশ্লাভাকিয়ার প্রাগে, সম্পন্ন ইহুদি পরিবারে। তিন ছোটো বোনকে নাৎসিদের বন্দিশিবিরে হত্যা করা হয়েছিল ইহুদি বলে (তখন অবশ্য কাফকা বেঁচে নেই)। বাড়িতে কথা বলতেন হিব্রু-জার্মান সংমিশ্রিত ভাষা ইদ্দিশ-এ। পড়েছেন নামী স্কুলে, কলেজে জার্মান ভাষায়। আইনশাস্ত্রে ডক্টোরেট করেন ১৯০৬ সালে। কাফকা চাকরি করতেন সরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান, ‘ওয়ার্কার্স অ্যাক্সিডেন্ট ইনস্যুরেন্স ইস্টিটিউট ফর দ্য কিংডম অফ বোহেমিয়া’ নামের কোম্পানিতে। কল-কারখানায় তখন প্রায় সব কাজই মানুষ করত। অটোমেশনের যুগ সেটা ছিল না। আর এই কাজ করতে গিয়ে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটত নিয়মিত। সেখানে কাফকার কাজ ছিল, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর আহতের ক্ষতিপূরণ স্থির করা। এই কাজে কাফকা ছিলেন অতি দক্ষ। তিনি তখন মাইনে পেতেন মাসে আমাদের আজকের টাকায় প্রায় ছ’লাখ টাকা (যদিও একটা সময় পর্যন্ত ধারণা ছিল, লেখাও হত, কাফকা অতি দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটিয়েছিলেন)। পিটার ড্রাকারের তথ্য অনুযায়ী, সেই যুগে কল-কারখানায় ৯৫ শতাংশ কর্মী ছিলেন ম্যানুয়েল লেবার। ক্ষতিপূরণ বেশি দিতে হলে কোম্পানির ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি কমাতেই ইনস্যুরেন্সের শর্তে কাফকা চালু করেন, শ্রমিকদের হেলমেট পরা। কারখানায় হেলমেটের সেই শুরু। এর ফলে শ্রমিকদের মাথায় আঘাত পাওয়ার ঘটনা চমকপ্রদভাবে কমে যায়।

    পিটার ড্রাকার তার বইয়ের ‘দ্য এক্সপ্লোডিং ওয়ার্লড অফ ইন্টারনেট’ অংশে আলোচনায় বলেছেন, তিনি যখন বেশ ছোটো, তার এক প্রতিবেশী ছিলেন, যিনি ওই রকম ক্ষতিপূরণের বীমা কোম্পানিতে খুব উঁচু পদে কাজ করতেন। কর্মজীবনে তার আদর্শ ছিলেন কাফকা। কাফকা যখন যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুশয্যায়, স্যানেটোরিমে ভর্তি, তখন সেই প্রতিবেশী ডঃ কুইপের, প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় উঠে দু’ঘণ্টা বাইক চালিয়ে কাফকাকে দেখতে যেতেন। কুইপের কিন্তু জানতেনই না যে কাফকা একজন লেখক। তিনি কাফকার ভক্ত হয়েছিলে কাফকার পেশাগত যোগ্যতা দেখে। ড্রাকারের দাবি, আমেরিকান সেফটি কংগ্রেস কাফকাকে ১৯১২ সালে (সম্ভবত) সোনার মেডেল দিয়েছিল তাঁর ওই সেফটি হেলমেটের জন্য। কারণ ওই সেফটি হেলমেটের জন্য ‘আজকের চেক রিপাবলিক’-এ ইস্পাত কারখানায় মাথায় আঘাত পেয়ে শ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। যদিও পিটার ড্রাকার তার এই বক্তব্যের সমর্থনে কোনও নথির উল্লেখ করেননি। ফলে অনেকে অবশ্য,  এই তথ্যকে সম্পূর্ণ ভাবে মানতে নারাজ। প্রায় ২০ বছর কাফকা গবেষণার পর কাফকা অনুবাদ করেছেন বাংলাদেশের মাসরুর আরোফিন। মাসরুর কয়েকজন কাফকা গবেষকের নাম উল্লেখ করেছেন, যেখানে এই হেলমেট সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম, স্ট্যানলি কর্নগোল্ডের লেখা বই ‘ফ্রানজ কাফকা দ্য অফিস রাইটিংস’। মাসরুর ভূমিকায় লিখেছেন, দু’বার কাফকার যুদ্ধে যাওয়ার ডাক এসেছিল। কিন্তু কাফকা ছিলেন কোম্পানির কাছে একজন অপরিহার্য অফিসার। 

    কাফকা না থাকলে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি বিপাকে পড়বে সরকারের কাছে এই চিঠি লিখে কোম্পানির কর্তা ব্যক্তিরা কাফকার যুদ্ধে যাওয়া আটকে দিয়েছিলেন দু’বারই। আর একবার কাফকা নিজে যুদ্ধে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে নেওয়া হয়নি অসুস্থতার জন্য। অসুস্থতার জন্য কাফকা যখন চাকরি ছেড়ে দিলেন, তখন কোম্পানি তাকে সম্পূর্ণ সময়ের পেনশনই দিয়েছিল তার অসাধারণ কর্ম-দক্ষতার কথা মাথায় রেখে। এই সব তথ্যও পরোক্ষভাবে পিটার ড্রাকারের দাবির পক্ষেই যায়।
     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @