এই প্রথম কোনো কবির নামে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন মেলা

তিনি বাংলা-সাহিত্য বাজারের মালিক হবেন ভেবে লেখালিখির জগতে আসেননি আবার নিজেকে ব্যতিক্রমী-গোত্রের লেখক প্রমাণ করার বাসনাও তাঁর ছিল না। তাঁর শুধু ছিল – নক্ষত্রের আলোয় (১৯৫৮), গায়ত্রীকে (১৯৬১), ফিরে এসো চাকা (১৯৬২), ঈশ্বরীর (১৯৬৪), অধিকন্তু (১৯৭২), অঘ্রাণের অনুভূতিমালা (১৯৭৪), বাল্মীকির কবিতা (১৯৭৬), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৮২), আমাদের বাগানে (১৯৮৫), আমি এই সভায় (১৯৮৫), এক পঙক্তির কবিতা (১৯৮৮), আমাদের মনে রেখো (১৯৯৫), আমিই গণিতের শূন্য (১৯৯৬), এখন দ্বিতীয় শৈশবে (১৯৯৯), কবিতা বুঝিনি আমি (২০০১), হাসপাতালে লেখা কবিতাগুচ্ছ (২০০৩), সমান সমগ্র সীমাহীন (২০০৪), শিমুলপুরে লেখা কবিতা (২০০৫), পৃথিবীর মানচিত্র (২০০৬), বিনোদিনী কুঠী (২০০৬), একা একা কথা বলি (২০০৬), আকাশে চাঁদ নেই অথচ আজিকে পূর্ণিমা [যুগ্ম প্রেমের কবিতা গ্রন্থ] (২০০৬), দুপুরে রচিত কবিতা (২০০৬), নির্মাণের খসড়া (২০১৭) সহ আরও কিছু পদ্য-গদ্য। এইসব তাঁর যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন কবি বিনয় মজুমদার। শোনা যায়, বাংলা কবিতায় বিনয় মজুমদারই একমাত্র কবি, যাঁর কোনও পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশ হওয়ার আগেই বই (নক্ষত্রের আলোয়) প্রকাশ পেয়েছিল। আর সম্ভবত এই প্রথম কোনো কবির নামে আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন মেলা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে – ‘কবি বিনয় মজুমদার আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২২’ (kobi binoy majumdar international little magazine fair 2022)।
এই মেলার আয়োজক, ‘কবি বিনয় মজুমদার স্মৃতিরক্ষা কমিটি’র সদস্যরা মেলা প্রাঙ্গনের স্থান নির্বাচনেও এক মায়া বা নস্টালজিয়া জড়িয়ে রেখেছেন। কবির বাসভবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন মেলার নানা ধরনের প্যাভিলিয়ন। স্থানটি প্রকৃতই ছায়া সুনিবিড় গ্রাম্য পরিবেশ ঘেরা। শহরের কোলাহল থেকে শতযোজন দূরে। যেমনটি পছন্দ করতেন কবি বিনয় মজুমদার।
মেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য কোনওরকম প্রবেশ মূল্য ধার্য করেননি মেলা কমিটি। তবে মেলা কমিটির আহ্বায়ক শূদ্রক উপাধ্যায় জানিয়েছেন – “তিন দিনের এই মেলা করতে কমিটিকে প্রচুর অর্থের যোগান দিতে হচ্ছে। ফলত আমরা অনুদানের ব্যবস্থা রেখেছি। কেউ অনুদান দিতে চাইলে আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বা ক্যাশ দিতে পারেন। ইতিমধ্যে অনেকে দিয়েছেন আবার কেউ কেউ এসে দেবেন বলেছেন। আমি মনে করি এই বিষয়টি মেলার একটা ইতিবাচক দিক।”
কবি বিনয় মজুমদার স্মৃতিরক্ষা কমিটি ও কবি বিনয় মজুমদার সাধারণ গ্রান্থাগার প্রতি বছর কবি সাহিত্যিকদের তাঁদের স্ব স্ব কাজের জন্য সম্মানিত করে থাকে। বিগত বছরের মতো এ বছর মেলা চলাকালীন বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের সম্মানিত করা হবে। কবি বিনয় মজুমদার স্মৃতিরক্ষা কমিটি ও কবি বিনয় মজুমদার সাধারণ গ্রন্থাগারের পক্ষ থেকে এ বছর ‘বিনয় মজুমদার স্মারক সম্মান’ পাচ্ছেন কবি বিভাস রায়চৌধুরী, ‘চাকা সাহিত্য সম্মান’ পাচ্ছেন বাংলাদেশের কবি নাহিদা আশরাফী, ‘নাটককার শুকচাঁদ সরকার পুরস্কার’ পাচ্ছেন কথাকার অমিতকুমার বিশ্বাস, ‘একুশ সাহিত্য সম্মান’ পাচ্ছেন কবি অমিত সাহা। এ ছাড়া এই কমিটিদ্বয় ‘বিনয় মেধা সম্মান’ দিয়ে থাকেন। যে সকল গবেষক বিনয় মজুমদারের উপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন বা করে থাকেন তাঁদের হাতে এই সম্মান তুলে দেওয়া হয়। এ বছর ‘বিনয় মেধা সম্মান’ পাচ্ছেন বিশিষ্ট বিনয় গবেষক ড. সুবীর কুমার সেন।
ঠাকুরনগর রেলস্টেশনের (Thakurnagar Railway Station) কাছে দুই নং প্ল্যাটফর্মের পাশে এই মেলা চলবে ৯ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেলা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দূর থেকে আসা সকলের জন্য রাত্রিযাপন এবং আহারের ব্যবস্থা থাকছে। মেলা প্রাঙ্গন প্রতিদিন বেলা একটা থেকে রাত্রি আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। প্রতিদিন থাকবে কবিতা পাঠ, আলোচনাচক্র, পুস্তক প্রকাশ এবং নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলায় অংশগ্রহণ করতে গেলে ইন্টারনেটে (https://forms.gle/uuDs4fztHYUw5ZP8A) ফর্ম পূরণ করে নিজের পত্রিকা বা প্রকাশনী বা টেবিল বা স্টল সুনিশ্চিত করতে হবে। ফর্ম পূরণ করার শেষ তারিখ ১৫ নভেম্বর।