যে পদে নাকি মুগ্ধ ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ

ঠাকুরবাড়ির হেঁসেল মানে সে এক এলাহি ব্যাপার। হেমেন্দ্রকুমার ঠাকুরের রান্নার শখ তো বহুবিদিত। তাঁরই মেয়ে প্রজ্ঞাদেবী বাংলার রন্ধনশিল্পকে উপহার দিয়েছেন বহু পদ, বহু নতুন শব্দ, এমনকি বাংলায় লেখা প্রথম খাবারের মেনুকার্ডও। ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীও নাকি নানা বিশেষ পদের খোঁজ-খবর রাখতেন। খুঁজে পেলেই টুকে রাখতেন খাতায়।
রান্না নিয়ে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের উৎসাহও নেহাত কম ছিল না। নিজে রাঁধতেন না, কিন্তু মৃণালিনী দেবীর পাশে বসে নির্দেশ দিতেন অহরহ। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন পদ নিয়ে। খানিক দুঃখ করে, খানিক মজা করে রবীন্দ্রনাথ চিঠিতে লিখছেন, “তিনি খুব ভালো রাঁধতে পারতেন, কিন্তু নতুন খাদ্য-উদ্ভাবনের ভার নিয়েছিলুম আমি। সেই সকল অপূর্ব ভোজের বিবরণসহ তালিকা আমার স্ত্রীর খাতায় ছিল। সেই খাতা আমার বড় মেয়ের হাতে পড়ে। এখন তাঁরা দুজনেই অন্তর্হিত। আমার একটা মহৎ কীর্তি বিলুপ্ত হোল। রূপকার রবীন্দ্রনাথের নাম টিঁকতেও পারে সুপকার রবীন্দ্রনাথকে কেউ জানবে না।”
এহেন রবীন্দ্রনাথের নাকি একটি প্রিয় পদ ছিল দুধ সুক্তানি। এই পদে ঠাকুরবাড়ির অধিকার বিশেষ প্রতিষ্ঠিত। তবে, এখন সেই অধিকার সর্বজনে বিস্তৃত হয়েছে। ঠাকুরবাড়ির বিশেষ সুক্তানির রেসিপিকে সামান্য বদলে আরো খানিক মুখরোচক করার চেষ্টা করেছি। তারই সন্ধান দিলাম আজ।
উপকরণ:
আলু- ১ টি
সজনে ডাঁটা- ৪ টি
রাঙা আলু- ১টি (মাঝারি)
বেগুন - ১টি
পটল- ২টি
ঝিঙে- ২টি
উচ্ছে- ২টি
কাঁচকলা- ১টি (বড়ো মাপের)
১টি কাঁচা পেঁপে (ছোটো মাপের)
পোস্তবাটা- ৩ চামচ
সর্ষেবাটা- ২ চামচ
আদাবাটা- ১ চামচ
কাঁচালঙ্কা বাটা- ৫টা
রাঁধুনি বাটা- ১ চামচ
রাঁধুনি সামান্য (ফোড়নের জন্য)
দুধ- তিন কাপ (প্রয়োজন হলে যোগ করা যাবে আরো, জলের পরিবর্তে)
ঘি- ২ চামচ
তেজপাতা- ২টো
বড়ি, সাদা তেল পরিমাণমতো এবং নুন-চিনি স্বাদ বুঝে
প্রণালি:
প্রথমে, কড়াইতে বড়ি তেল ছাড়া কয়েক সেকেন্ড ভেজে, তারপর তেল দিয়ে ভেজে একটি পাত্রে তুলে রাখুন। এরপর পোস্ত এবং সর্ষে ঈষৎ উষ্ণ গরম জলে খানিকক্ষণ ভিজিয়ে রেখে বেটে নিন। উচ্ছে এবং বেগুন ভেজে আলাদা করে রাখুন। এবার কড়াইতে তেল ও ঘি গরম করে সরষে, তেজপাতা, রাঁধুনি ফোড়ন দিয়ে বাকি সব সব্জি ভালোভাবে ভাজতে থাকুন। আদাবাটা ও রাঁধুনিবাটা যোগ করে ভালো করে নাড়তে থাকুন। অন্যদিকে, দুধ গরম করে নিন। সবজিগুলো ভাজা হয়ে এলে পোস্ত আর সর্ষেবাটা দিয়ে নাড়ুন।
৫ মিনিট নাড়াচাড়া করে দুধ ঢেলে ঢাকা দিয়ে অল্প আঁচে দশ মিনিট রাখুন। ঢাকা তুলে দেখতে হবে সবজি সিদ্ধ হয়েছে। কিনা প্রয়োজন হলে আরো দুধ যোগ করবেন। দুধ ফুটে উঠলে উচ্ছে, বেগুন, বড়ি, স্বাদমতো নুন, মিষ্টি দিন। তারপর, উপর থেকে ঘি ছড়িয়ে গ্যাস বন্ধ করে ঢাকা চাপা দিয়ে রাখুন পাঁচ মিনিট। ব্যাস, দুধ সুক্তানি তৈরি। গরম ভাতে গন্ধরাজ লেবুর সঙ্গে জমিয়ে খান।