জেলবন্দি ‘অপরাধী’-দের কাছে থিয়েটারের মাধ্যমে ‘বন্ধু’ হয়ে উঠলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য

যাবজ্জীবন সাজাই যাদের জীবনের চরম সত্য ছিল, তাদের জেলের বাইরে নিয়ে গিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য (Pradip Bhattacharya)। বহরমপুরের জেলবন্দি অপরাধীদের নিয়ে কোনোরকম পুলিশি পাহারা ছাড়াই ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। নাট্যজগতে এই অবদানের জন্য প্রদীপবাবুকে ‘নাট্য আকাদেমি’ (Natya Academy) পুরস্কারে ভূষিত করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বহরমপুর রেপার্টারির এই মহান ব্যক্তিত্ব জীবনটাই সঁপে দিয়েছেন থিয়েটারে। সমানতালে চলেছে সিনেমা ও টেলিভিশনে অভিনয়। আজ ‘বঙ্গদর্শন’ পরিবারে প্রদীপবাবুকে স্বাগত জানাচ্ছি আমরা। তাঁর অকপট সাক্ষাৎকারে উঠে এল কত কত প্রসঙ্গ। সাক্ষাৎকার নিলেন সুমন সাধু (Suman Sadhu)।
______________
‘তাসের দেশ’, ‘রক্তকরবী’, ‘তোতাকাহিনি’ মঞ্চস্থ করেছিলেন কারাগারবন্দি আসামীদের নিয়ে। কারাগারের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ হল আপনার?
প্রদীপঃ আমার নাট্যজীবন ৫৫ বছরের। নাটকের বৈচিত্র্যকে অনুধাবন করার জন্য সারাজীবন ছুটে বেরিয়েছি। মূলত গবেষণাধর্মী নাটকই বেশি করেছি। জেলজীবন সম্পর্কে কৌতূহল বরাবরই ছিল। যদিও তার আগে অনাথ ও অপরাধীদের বাচ্চাদের নিয়ে কাজ শুরু করি। এইভাবে দীর্ঘদিন সামাজিক নাটক করতে করতে যখন প্রায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছিলাম, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম থিয়েটার আর করবই না, তখনই আমার এক বন্ধু (পেশায় যিনি আইজি-পুলিশ) বহরমপুর জেলে আসেন। তিনিই আমাকে বলেন জেলে একটা অনুষ্ঠান করতে। সেই প্রথম জেলের ভিতর একটা নাটক করি এবং তা দেখে প্রত্যেকেই ভীষণ খুশি হন। উনিই তখন বলেন আমি আসামীদের নিয়ে থিয়েটার করতে পারব না কিনা। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই এবং পরেরদিন থেকেই শুরু হয় আমার জেলজীবন। গোটা কুড়ি ছেলে দু-এক দিনের মধ্যে বেছে দেন পুলিশ সুপার। প্রথমে তাদের নিয়েই কাজ শুরু করি।
জেলবন্দি আসামীদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’
রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন ‘থিয়েটার করলে লোকশিক্ষে হয়’ – আপনি তো একরকম লোকশিক্ষাই দিচ্ছেন...
প্রদীপঃ পুরো বিষয়টা কিন্তু একদিনে উপলব্ধি হয়নি। আসামীদের নিয়ে কাজ করা ভীষণ কঠিন ছিল শুরুতে। এদের অধিকাংশজনেরই অক্ষরজ্ঞান ছিল না। তাই স্বাভাবিক থিয়েটার শেখানোর পদ্ধতিই প্রয়োগ করছিলাম। মুভমেন্ট, মাইম, গান, ফিজিক্যাল এক্সসারসাইজের মাধ্যমে ওদের ইচ্ছাশক্তি মাপছিলাম। আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করি ওরা কীভাবে থাকে, কী খায়, কেমনভাবে কথা বলে – এই সমস্ত বিষয়টা যখন পরিষ্কার হয়ে গেল, তখন কমিউনিকেশনের আর কোনো সমস্যা হয়নি। এমনকি ওরা যে খাবার খেত আমিও সেই খাবারটাই খেতাম। তখনই ওদের সঙ্গে আমার একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়। অনেকের মধ্যে কিন্তু ভালো গুণও আছে। সেইটাকে রিসাইকেল করার একমাত্র নাটক হচ্ছে ‘তাসের দেশ’। কারণ সেখানেও একপ্রকার বন্দিদশা থেকে মুক্তির আনন্দ আছে। সেই মুক্তির আনন্দটাই আমি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম।
আরেকটা কথা বলব, জেলের মধ্যে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে হওয়ার কোনও রীতি নেই। এটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমি সেই ব্যারিকেডটা ভেঙে দিয়েছিলাম। কুড়ি জন ছেলের মধ্যে ছয় জন মেয়েকে আনি। এই বেড়া ভাঙার কাজটা তখন থেকেই শুরু হয়। ওরাও খুনের দায়ে যাবজ্জীবন। আমার জেদে সেই প্রথম ‘তাসের দেশ’ জেলের বাইরে শো করতে গেল। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থিয়েটার উৎসবে অংশগ্রহণ করার জন্য আবেদন করি। সেই উৎসব উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বুদ্ধবাবু গোটা নাটকটা দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। আমি ওঁর কাছে আবদার করেছিলাম আসামীদের নিয়ে দিল্লি যাব, ব্যবস্থা করে দিন। কোনওরকম সিকিউরিটি ছাড়া শুধুমাত্র বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে জেল কর্তৃপক্ষ আমাকে দিল্লি পাঠায়। আমার সঙ্গে ২৬ জন আসামী খোলা ট্রেনে দিল্লি গিয়েছিল। গোটা এই কাজটার নাম দিয়েছিলাম ‘থিয়েটার থেরাপি ইন প্রিজনস’।
জেলের মধ্যে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে হওয়ার কোনও রীতি নেই। এটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমি সেই ব্যারিকেডটা ভেঙে দিয়েছিলাম। কুড়ি জন ছেলের মধ্যে ছয় জন মেয়েকে আনি। এই বেড়া ভাঙার কাজটা তখন থেকেই শুরু হয়।
আপনার নাটকের চরিত্রদের এখনকার অবস্থা জানতে চাইব। জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন যারা, কী কাজ করছেন এখন?
প্রদীপঃ অনেকেই নিজেদের গ্রামে ফিরে গেছে। কেউ চাষবাস করছে, কেউ ব্যবসা করছে। যারা ছাড়া পেয়েছে, তাদের সম্বন্ধে কোনও খারাপ রিপোর্ট আর নেই। একথা আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি।
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকার আপনাকে নাট্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত করছে। আপনার নাটকের চরিত্ররা কি থাকবেন সেদিন পুরস্কারের মঞ্চে?
প্রদীপঃ ইচ্ছা আছে। পনেরো বছরের জেলজীবনে আমি অনেকগুলো প্রথা ভেঙেছিলাম। তাদের মধ্যেই দুইজন আসামী, একটি হিন্দু ছেলে ও একটি মুসলিম মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম জেলের বাইরে এনে। দিনটা ছিল বিশ্ব থিয়েটার দিবস, ২৭ মার্চ, ২০১৯। এর জন্যেও আমাকে বিরাট লড়াই করতে হয়েছে। দিল্লির এনএসডি-তে ওদের হানিমুন হয়। আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, সন্তান নেওয়া উচিত কিনা! আমি অনুমতি দিই।
দুই কয়েদির শুভ বিবাহ
হ্যাঁ, বাচ্চাদুটোর কথা আমি জানি। আপনি দুই যমজের নাম দিয়েছেন ভানু আর রবি।
প্রদীপঃ হ্যাঁ। রবীন্দ্রচর্চা কোথাও তো একটা ওষুধের মতো কাজ করেছেই। এবং ওদের জীবনেও রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা সাংঘাতিক। তাই দুই বাচ্চার নাম দিই রবীন্দ্রনাথ এবং ভানুসিংহ। ইচ্ছা আছে দুই নাতিকে সঙ্গে নিয়েই সেদিন মঞ্চে পুরস্কার নিতে উঠব। ঠিক করেছি, পুরস্কারের অর্থমূল্য দুই নাতির নামে ফিক্সড করে দেব। যাতে ভবিষ্যতে পড়াশোনা করতে ওদের কোনো অসুবিধা না হয়।
ভানু এবং রবি
রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রত্যেকের মননে, যাপনে সঙ্গী হয়ে রয়েছেন এখনও। কয়েদিদের চোখে রবীন্দ্রনাথ কেমন ছিলেন? ‘ঠাকুর’ নাকি সাধারণ মানুষ – রবীন্দ্রনাথের কোন পরিচয়টা প্রাধান্য পেত বেশি?
প্রদীপঃ এক আসামী আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, রবীন্দ্রনাথ জেলে ছিলেন কিনা। কারণ ওদের মতে রবীন্দ্রনাথ যদি জেলে না গিয়ে থাকে, তাহলে ‘তাসের দেশ’ লিখলেন কী করে! তখন আমাকে বোঝাতে হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন যে কোনোরকম মুক্তির পক্ষে। সমাজ নির্মিত কারাগারের কথাই রবীন্দ্রনাথ বলতে চেয়েছেন।
তারপর কোনো এক বাইশে শ্রাবণ অন্য আরেকজন আমায় জিজ্ঞাসা করল, রবীন্দ্রনাথ মরে গেছেন কেন বলি? ওঁর কথাগুলো যে প্রতিদিন বলছি, গান গাইছি, তাহলে তো রবীন্দ্রনাথ ভিতর থেকেই কথাগুলো বলাচ্ছেন। রবীন্দ্রনাথ তাহলে আমার মধ্যে দিয়েই বেঁচে আছেন। আমি তো অবাক! যে কথা এত সহজভাবে আমি ওদের বোঝাতে পারিনি। সেটা ওরাই আমাকে বুঝিয়ে দিল।
আপনার অভিনয় জীবনের একেবারে শুরুর সময়টা জানতে চাইব। শোনা যায় ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে নির্মিত সিরিয়াল ‘পূর্ব পশ্চিম’ আপনার প্রথমদিকের টেলিভিশনে কাজ। সে কাজের বিষয়েও জানতে চাইব।
প্রদীপঃ ‘পূর্ব পশ্চিম’ আমার কাছে ম্যাজিক বক্সের মতো। ইন্দ্রজিৎ সেন আর অরিন্দম দে, দুই বন্ধু মিলে মুর্শিদাবাদে লোকেশন দেখতে এসেছিলেন। থিয়েটার করতাম বলে ওঁরা আমার কাছেই এসে পড়েন। ওঁরাই প্রথম আমাকে বলে হারিত মণ্ডল চরিত্রে অভিনয় করতে। হারিত পূর্ব পশ্চিমের অন্যতম প্রধান চরিত্র ছিল। সে উদ্বাস্তু। সব হারিয়েছিল। আমারও বাবা-কাকা উদ্বাস্তু ছিলেন। তার ফলে চরিত্রটার সঙ্গে খুব মিল পেয়েছিলাম। দর্শক কিন্তু আমায় চিনেছিলেন এই চরিত্রের জন্যই। আমি মনে করি, জীবনে যত চরিত্রে অভিনয় করেছি, হারিত মণ্ডল সবচেয়ে আন্তরিক। জীবন দিয়ে ওই চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। তার ফলে আজ এত বছর পরেও এই চরিত্রকে এবং ‘পূর্ব পশ্চিম’ সিরিয়ালের গোটা ইউনিটকে আমি ভুলতে পারিনি।
সিরিয়ালটা কোনো এক কারণে বন্ধ হয়ে যায়। যার ব্যথা আমি এখনও ভুলতে পারিনি। প্রায় ১৬-১৭ দিন বহরমপুরে শুটিং হয়েছিল সিরিয়ালের শুরুর পর্বগুলো। আমার জীবনের প্রথম মেগা সিরিয়াল ছিল ‘পূর্ব পশ্চিম’। এই সিরিয়ালের প্রযোজক ইন্দ্রজিৎকে খুব স্নেহ করি। এখনও নিয়মিত যোগাযোগ আছে।
‘পূর্ব পশ্চিম’ ধারাবাহিকে প্রদীপ ভট্টাচার্য
বর্তমান সিরিয়াল প্রসঙ্গে আপনার কী মত? ‘পূর্ব পশ্চিম’-এর মতো সিরিয়ালে আপনারা যারা কাজ করেছেন, তুলনায় এখনকার সিরিয়ালে কাজ করতে কি আদৌ ভালো লাগে?
প্রদীপঃ আমি এখনকার সিরিয়াল দেখি না, করিও না। ভালোলাগে না। স্টার জলসার ‘দুর্গা’ আমার শেষ অভিনীত সিরিয়াল।
মঞ্চে বা চলচ্চিত্রে যে দর্শন নিয়ে একজন অভিনেতা সংলাপ বলেন, বাস্তব জীবনে তার বিন্দুমাত্র ছাপ থাকে না অনেকসময়। একজন শিল্পীর আদর্শ কি ক্রমশ কমে আসছে?
প্রদীপঃ হ্যাঁ, কমছে। সার্বিকভাবে মেধা কমে আসছে। যে পরিমণ্ডলের মধ্যে থাকতে থাকতে একসময় শিল্পীমন তৈরি হত, আজ তো সেখানে খামতি আছেই। তা মেনে নিতে কোনও অসুবিধা নেই।
এক আসামী আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, রবীন্দ্রনাথ জেলে ছিলেন কিনা। কারণ ওদের মতে রবীন্দ্রনাথ যদি জেলে না গিয়ে থাকে, তাহলে ‘তাসের দেশ’ লিখলেন কী করে! তখন আমাকে বোঝাতে হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন যে কোনোরকম মুক্তির পক্ষে।
আপনার কি মনে হয়, জেলার থিয়েটার চর্চা কলকাতার মঞ্চে এখনও ব্রাত্য?
প্রদীপঃ এটা চিরকালীন সমস্যা। তবে এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে বদলেছে। জেলার থিয়েটার দলগুলো কলকাতার মঞ্চে অভিনয় করছে, আবার কলকাতার থিয়েটার জেলার মঞ্চেও অভিনয় করছে। আমাকে ঠিক করতে হবে, আমি কোথায় থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। জেলা-মফস্সলে থাকতে চাইছি, নাকি বড়ো শহরে গিয়ে নাটবল্টু হতে চাইছি – পুরোটাই আমার মর্জির উপর।
আরও পড়ুন: জীবন বদলে দেওয়া থিয়েটার
আমাদের প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অনেকেই কিন্তু থিয়েটার করতে আসেন সিরিয়ালে বা সিনেমায় কাজ করবেন বলে। এটা কি চটজলদি খ্যাতি পাবার তাড়না?
প্রদীপঃ এটাই তো সমস্যা। শিল্পের কোনো কাজ চটজলদি হয় না। শুরুতে তিনি যদি নাই বোঝেন এটা চাল নাকি গম, তাহলে রান্নাটা হবে কীভাবে! আমাকে তো আগে তরকারি বানানোর উপকরণটা আত্মস্থ করতে হবে। নাহলে স্বাদ পাব কী করে?
দীর্ঘ বছরের গবেষণা, ব্যতিক্রমী থিয়েটার চর্চার পরেও আপনি বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ‘বেলাশেষে’ এবং ‘বেলাশুরু’-র ছবির সূত্রে। নাট্য আকাদেমি পুরস্কার ঘোষণা হবার পর প্রায় অধিকাংশ মিডিয়া হেডলাইন করেছে ‘গণশা’ চরিত্র দিয়ে। প্রদীপ ভট্টাচার্য যেন কোথাও উহ্য। এটা আপনার কেমন লাগে?
প্রদীপঃ আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। যার যেমন পাঠক/দর্শক, তারা তেমনভাবেই হেডলাইন করবে, তাতে কোনো অন্যায় দেখি না। গণশা চরিত্রের জনপ্রিয়তার কারণে খবরটা তাড়াতাড়ি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। এটাকে আমি ভালো কমিউনিকেশনই বলব। জেলের প্রদীপ বললে কটা লোকে বুঝবে? আজকের সময়ের যে বহমানতা, তা দিয়েই মানুষ মানুষকে চিনছে, তাতে তো কিছু করার নেই।
‘তোতাকাহিনি’ নাটকে জেলবন্দি আসামীরা
এই বহমানতার সঙ্গে তাহলে মানিয়ে নিয়েছেন?
প্রদীপঃ আমি সবকিছুর সঙ্গেই মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত। ট্রেনে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করা লোক আমি। ভাঙা ফ্ল্যাটে থাকি। গ্ল্যামার দাবিয়ে কোনো লাভ নেই। একবার ট্রেনের জেনেরাল বগিতে যাচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম আমাকে নিয়ে কয়েকজন মহিলার মধ্যে বাজি হচ্ছে। একদল বলছে, ধুর এই লোকটা হতেই পারে না। আরেক দল বলছে, নারে এই লোকটাকেই দেখেছি। আমি আর কী করব! দূর থেকে মজা নিলাম। ওঁরা হয়তো মনে করছেন এমন একজন শিল্পী ট্রেনে গুঁতোগুঁতি করে যায় নাকি!
গ্ল্যামার থেকে দূরে রেখেছি নিজের প্রয়োজনে। আমার ভিতর যে আমিটা আছে, সে কিন্তু খুব বদমাশ। কখন যে পালক দিয়ে ঝাড়ি মারবে, জানতেই পারব না। নিজের সন্তানদেরও চিনতে পারব না। আমার কাছে একজন বেগুন বিক্রি করা মাসি আর একজন পটল বিক্রি করা দেহাতি লোকই আসল। ওঁরাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
নাট্য আকাদেমি পুরস্কার কাকে বা কাদের উৎসর্গ করতে চাইবেন?
প্রদীপঃ এই উত্তরটা মঞ্চের জন্য তোলা থাক। আমি যে সত্যের উপর দাঁড়িয়ে আছি, সেই সত্যিটাই সেদিন মঞ্চে বলব।